হজরত ইউসুফ (আঃ) এর নামে অপপ্রচারে বিশ্বাস করবেন না

in al-quran •  4 years ago 

17362461_1329669353790452_8805086192585698513_n.jpg

সূরা ইউসুফের ২১ নং আয়াত মতে, মিসরের যে ব্যক্তি হজরত ইউসুফ (আ.)-কে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দেন এবং এই ইউসুফ (আ.) তাদের বিশেষ উপকারে আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন। এভাবেই ইউসুফ (আ.) এবং জুলেখার পরিচয় হয় এবং জুলেখার ঘরেই কৈশোর পেরিয়ে যুবক হয়ে ওঠেন ইউসুফ (আ.)। জুলেখা ক্রমেই যুবক ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। মূর্তি উপাসক জুলেখা তার ঘরে থাকা মূর্তির সামনে অন্যায় আবদার করতে ভয় পেতেন বলে কাপড় দিয়ে মূর্তির চোখ ঢেকে দিয়ে ইউসুফ (আ.)-কে নানাভাবে প্রলুব্ধ করতে সচেষ্ট ছিলেন। অন্যদিকে আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী ইউসুফ (আ.) আল্লাহ প্রদত্ত ইমানের শক্তিতে সব ধোঁকা ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে ছিলেন এবং সব সময় জুলেখাকে এ পথ ছাড়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু ইউসুফ (আ.)-এর প্রেমে পাগল জুলেখা ছিলেন একরোখা।
সূরা ইউসুফের ২৩ নং আয়াত অনুসারে একদা জুলেখা ইউসুফ (আ.)-কে ঘরে পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেন এবং তার প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, ধৈর্য, ইমান এবং ভীতির কারণে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাফসির ও আরবি সাহিত্যমতে, এ সময় হজরত ইউসুফ (আ.) আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচতে ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি দিলে অলৌকিকভাবে আরবি লেখা দেখতে পান। এ ছাড়াও ঘরে মূর্তির দিকে তাকিয়ে তিনি ‘আজিজ’-এর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান এবং ঘরের দরজায় আজিজের উপস্থিতি অনুভব করেন। এরপর হজরত ইউসুফ (আ.) নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য বন্ধ দরজার দিকে দৌড়ে যান।
এ সময় জুলেখা পেছন থেকে ইউসুফ (আ.)-কে জাপটে ধরলে তার পরিধেয় জামা পেছন থেকে ছিঁড়ে যায়। অলৌকিকভাবে এ সময় ঘরের বন্ধ দরজা (কারও মতে বাইরে থেকে বন্ধ দরজা) খুলে যায় এবং ইউসুফ (আ.) ও জুলেখা দরজার বাইরে জুলেখার স্বামী আজিজকে দেখতে পান।

ঠিক তখনই চতুর জুলেখা তার ভোল পাল্টে ফেলেন এবং সূরা ইউসুফের ২৫ নং আয়াত অনুসারে এ সময় ইউসুফ (আ.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো বা অন্য কোনো কঠিন শাস্তির দাবি করেন। ২৬ নং আয়াতে বর্ণিত, এ সময় ইউসুফ (আ.) প্রকৃত সত্য তুলে ধরেন এবং জুলেখার পরিবারের একজন সঠিক সাক্ষ্য প্রদান করেন। পবিত্র কোরআনে এই সাক্ষ্য প্রদানকারীর বিস্তারিত পরিচয় নেই। তবে তাফসির এবং প্রচলিত বর্ণনা অনুসারে এই সাক্ষী ছিল একটি নিতান্ত কন্যাশিশু, যার মুখে তখনো স্পষ্ট করে কথা ফোটেনি।

অপর বর্ণনায় এবং সাহিত্যে এই শিশু জুলেখার আত্মীয় এক বোনের কন্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর বিশেষ কুদরতে এই সাক্ষী যা বলেছিল তা উল্লিখিত আছে সূরা ইউসুফের ২৬ এবং ২৭ নং আয়াতে। বর্ণনা মতে সাক্ষীর যুক্তি ছিল ইউসুফ (আ.)-এর জামা যদি পেছন থেকে ছেঁড়া থাকে তবে জুলেখা দোষী এবং যদি সামনে থেকে ছেঁড়া থাকে তবে জুলেখা যা বলছে তা সত্য অর্থাৎ ইউসুফ (আ.) দোষী।

স্বামী আজিজ যখন হজরত ইউসুফ (আ.)-এর জামা পেছন থেকে ছেঁড়া দেখতে পান তখন সব সত্য প্রকাশিত হয়। মান-সম্মানের কথা বিবেচনা করে আজিজ এ ঘটনা যাতে বাইরের কেউ না জানে তার নির্দেশ দেন এবং স্ত্রী জুলেখাকে শাস্তির ভয় দেখান।

মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি সদয় হন এবং তাঁকে ঘটনাক্রমে কিছুদিন কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করেন।
সূরা ইউসুফের ৩০ নং আয়াত অনুসারে এ ঘটনার পর শহরজুড়ে জুলেখার কুকীর্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর আরব সাহিত্য মতে, রাজপ্রাসাদে যারা আজিজ বিরোধী ছিল, তারা এ ঘটনায় বহুমাত্রিক রং ছড়িয়ে প্রচার করতে থাকে।

সূরা ইউসুফের পরবর্তী আয়াতগুলোতে এ ঘটনার পরিসমাপ্তি টানা হয়। এতে বলা হয়, আজিজের স্ত্রী (জুলেখা) যখন এই ষড়যন্ত্র বা অপবাদের ব্যাপক প্রচার সম্পর্কে অবগত হন, তখন শহরের গণ্যমান্য মহিলাদের তিনি এক ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানান।

এই ভোজে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে প্রত্যেকের জন্য ফল এবং তা কাটার জন্য একটি করে ধারালো ছুরি দেওয়া হয়। শহরের নারীরা যখন ছুরি দিয়ে ফল কাটায় ব্যস্ত, ঠিক তখন জুলেখা তাঁর পূর্ব পরিকল্পনা মতো পাশের কক্ষে থাকা ইউসুফ (আ.)-কে মহিলাদের সামনে আসতে হুকুম করেন। অত্যন্ত আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী হজরত ইউসুফ (আ.) যখন সামনে উপস্থিত হন, তখন তাঁর সৌন্দর্যের মোহে নারীরা তাঁর দিকে তাকিয়ে ফলের বদলে ধারালো ছুরি দিয়ে নিজ নিজ আঙ্গুল কেটে ফেলেন। এই সুযোগে জুলেখা সবার উদ্দেশে বলেন যে, এই সেই সুপুরুষ ইউসুফ (আ.), যার জন্য মহিলারা তার নিন্দা করছেন।

সূরা ইউসুফের ৩১ নং আয়াত মতে, মহিলাদের মন্তব্য ছিল- ‘এ তো মানুষ নন, এ তো এক মহান ফেরেশতা’। এ সময় জুলেখা আবারও তাঁর কূটচাল প্রয়োগ করেন এবং একদিকে ইউসুফ (আ.)-কে পবিত্র বলে সাক্ষ্য দেন আর অন্যদিকে ভবিষ্যতে ইউসুফ (আ.) তাঁর কথার অবাধ্য হলে অপমানিত হওয়ার এবং কারাগারে নিক্ষেপ করার হুমকি দেন। কিছু মহিলাও এতে সায় দেন ও ইন্ধন জোগান। সূরা

ইউসুফের ৩৩ নং আয়াত অনুসারে এ সময় হজরত ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহর কাছে কুচক্রী মহিলাদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং অপবিত্র ভোগ-বিলাসের পরিবর্তে কারাবাসই উত্তম বলে ফরিয়াদ জানান। তিনি উপলব্ধি করেন যে, কারাগারই হতে পারে তাঁর জন্য নিরাপদ আশ্রয়, অন্যথায় কুচক্রী জুলেখা ও অন্য নারীর প্রলোভন ও ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি সদয় হন এবং তাঁকে ঘটনাক্রমে কিছুদিন কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করেন।

সত্য ঘঠনাকে রং চং লাগিয়ে দর্শকদের সামনে প্রচার করা হচ্ছে আর দুর্বল ইমানের মুমিনরা এসব মিথ্যা মিশ্রিত সিরিয়াল বিশ্বাস করছে যা ইমান ধ্বংশের জন্য যথেষ্ট। আসুন আমরা সঠিক তথ্য জানি এবং মিথ্যাচারের বিরদ্ধে সচ্চার হই। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান ও হেদায়াত দান করুন আমিন।

#aqidah #islam #muslim #boycott #realstory #real-story-of-hazrat-yusuf #propaganda #propaganda-against-islam

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মা-শা-আল্লাহ সুন্দর ও তথ্যবহুল ধর্মীয় পোস্ট করেছেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান। আশা করি এই পোস্ট অনেকের ভ্রান্তি দুর করতে সক্ষম হবে। ইন-শা-আল্লাহ।