সে দিন দুপুরে মনটা তেমন ভালো ছিল না। বাসার পাশেই আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমি মাথা নিচু করে যাচ্ছিলাম। তো দেখলাম রাস্তার ধারে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে দেখতেই সে চোখ গুড়িয়ে নিলো। কিন্তু তবুও আমি ধরে ফেললাম সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি তাকে ভালো করে দেখলাম। সে কালো রঙের বোরখা পরে আছে, কিন্ত মুখটা বের করে রাখসে। এক হাত আরেক হাতের সাথে লাগানো। এক হাতের আঙুল আরেকটার সাথে মোরা মুরি করছে। আমার ইতিবাচক মন নিয়ে ভাবলাম হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। তার পর হঠাৎ মনে পড়ে গেল আরে এতো আমাদের পাশের গ্রামের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। সে আমার চেয়ে ৩ শ্রেণীর ছোট। ছোট বেলায় যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন থেকেই মেয়েটা আমাদের স্কুলেই পড়ত। আর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো। ছোট বেলা থেকেই ওর বদ অভ্যাস ছিল শুধু ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকা আর মুচকি মুচকি হাসা। অবশ্য চোখে চোখ পরলে চোখ সরিয়ে নিতো। দেখতে দেখতে সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে ক্লাস 9এ ভর্তি হলাম। ক্লাস 9 উঠে দেখি মেয়েটা আমাদের স্কুলেই ভর্তি হইসে আর ঐভাবেই তাকিয়ে থাকে। আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে চুল গুলো অনেক বড় বড় হইসে। স্কুলে এমন সুন্দর মেয়ে খুবই কম। কিন্তু আমি তার প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না। এই মেয়ের এমন আচরণ দেখে আমার বন্ধুরা অনেক কিছুই বলত। যখন তাকিয়ে থাকত আমার বন্ধুরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলত এই তোর দিকে তাকিয়ে আছে যা। আমি যেমন ওদের কথায় পাত্তা দিতাম না। তেমনি ওই মেয়েটাকেও পাত্তা দিতাম না। অনেক বড় কথা বলার চান্সও করে দিয়েছে শালারা। কিন্তু তবুও আমি পাত্তা দেই নাই। এ নিয়ে এক বন্ধুর সাথে আমার বাক জগড়াও হয়েছিল। আমি সেদিন আমার ওই বন্ধুর মনে কষ্ট দিয়ে বলেছিলাম আমার পার্সোনাল কথা বলার তুই কে। তারপর থেকে বন্ধুরা প্রতিজ্ঞা করে ,ওই মেয়ে সম্পর্কে কিছু বলবে না। আমি না থাকলে ওরা মেয়েটা আর আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলত আমি বুঝতাম। তো আমার বন্ধুদের কাছ থেকে রেহাই মিলললেও এবার মেয়েটার বান্ধবীদের পালা। মেয়েটার দুইটা বান্দবী ছিল। তার মধ্যে একটা বান্ধবী যে অল্পতেই সবার মন কেড়ে নিত, বন্ধুত্বের বাড়ানোর মেশিন ছিল। সে আমাকে একদিন অপ্রস্তুত ভাবেই বলল ভাইয়া মৌ আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আমি প্রথমে হাসলাম তারপর সিরিয়াস হয়ে বললাম যাও তোমার বান্ধবীকে বল আমাকে দ্বারা এগুলো সম্ভব না, আমি তাকে পছন্দ করি না। মেয়েটা থ হয়ে তাকিয়ে রইলো, তারপর যেতে যেতে বলল "নিজেকে লাট সাহেব মনে করে"। তারপর আমি ক্লাস টেনে উঠে এস.এস.সি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি। এর মধ্যে একদিন সে তার বড় বোনের সাথে আমাদের বাসায় আসে। আমার রুমে তার বোন এসে বলব সুমন কেমন আছ। সালাম দিয়ে বললাম ভাল প্লিজ বসুন। তার পর অনেক্ষন কথা চলার পর বলল আমাদের মৌ সামনে জেএসসি পরীক্ষা দিবে। আমি বললাম ভাল। তার পর দেখি মৌ এসে হাজির। আমি মৌকে বললাম কেমন আছো। সে উত্তর দিলনা। তার আপা সেটা খেয়াল করল না। তারপর তারা চলে গেল। আমি পরীক্ষা দিলাম রেজাল্ট ভালোই আসছিল। আমি চলে গেলাম ঢাকা। ভাল একটা কলেজে ভর্তি হয়ে ওখানেই থাকি। মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম। কিন্তু মেয়েটার সাথে দেখা হয় না। একদিন গুরতে গুরতে ওই মেয়েদের বাড়ির ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ওই মেয়েটা আমাকে দেখে ফেলসে আমিও দেখেছি।সে এগিয়ে আসতে চাইল কিন্তু আমি পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। ওর দিকে তাকিয়ে আমার কঠিন মন নরম হয়ে গেল কি অপুরুপ সুন্দর। কিন্তু আমার অহমিকার জন্য ধরা খেলাম। তারপর ঘটল আসল ঘটনা। মেয়েটি আমার বোন সব খুলে বলব। আমার বড় বোন । আমার চেয়ে খুব একটা বড় না। সে আমাকে বলল সুমন তুই তো দেখি অনেক বড় হয়েছিস। আর তোর কপাল টাও অনেক বড়। আমি মনে মনে ঐ মেয়েটার কথাই ভেবে বললাম কেন কি হইছে। সে যা বলল আমার ভাবনাটাই ঠিক। যাই হোক আমি আমার বোনকে পাত্তা দিলাম না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই পাত্তা দিলাম। মেয়েটার কথা মনের ভেতর ভীষণ ভাবে গেথে গেল। আমিও মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে বসলাম।
তো ওইদিন দুপুর বেলায় ওই মেয়েটাকে দেখে প্রথমে অন্য মেয়ে বলে মনে হল। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে হকচকিয়ে উঠলাম। আমার খারাপ মন আর হকচকানো মন দুটো মিলে ভয়ে পরিনত হল। যাই হক মেয়েটা নিচ দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম কেমন আছ।
সে ভাল আপনি?
আমিও ভাল।
সে বলল ভাইয়া একটা কথা বলি?
আমি বললাম বল । (কিন্তু আমার ভেতর কেমন যেন দুর্বলতার সুযোগ নিলো।)
সে বলল ভাইয়া আমি আপনাকে ভালবাসি।
(আমি রীতিমত চমকে উঠে বললাম।) কিন্ত আমি তো এসব পছন্দ করি না।
সাথে সাথে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
আমি কি করব এত সুন্দর একটা মেয়ে কাঁদছে কেন। মনের অজান্তে তার হাত ধরে ফেললাম। তবুও কান্না থামছেনা। আমি আর কি বলব বললাম ওকে ওকে। প্লিজ কেঁদ না। আর মনে মনে ভাবলাম মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে আমার জন্য। আমিও অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার আগের কাজ গুলো উচিত হয়নি। তার চেহারার দিকে যতবার তাকাচ্ছি ততবার গলে যাচ্ছি।
এক পর্যায়ে সে আমার বুকে মাথা দিয়ে ফেলল। আমি সরাতে গিয়েও পারলাম না। আমার মনেও চায় কি আর করব। মনের চেয়ে রঙ বদলানোর মতো দুনিয়ায় আর কিছু নেই। এই ঘটনাই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজ আমার মনের কাছে আমি হেরে গেলাম।
আর এখন মনে হচ্ছে আজ মনের কাছে হেরেই জিতে গেছি আমি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Congratulations @somratking420! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Congratulations @somratking420! You received a personal award!
You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
Do not miss the last post from @steemitboard:
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit