news

in bangla •  7 years ago 

বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারার জীবনের শেষ কথা ছিল, ‘গুলি কোরো না। আমি চে গুয়েভারা। মৃত চে গুয়েভারার চেয়ে জীবিত চে গুয়েভারা তোমাদের জন্য বেশি মূল্যবান।’

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ত্রাস চে গুয়েভারাকে হত্যা করা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানেই এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাত থেকে নিজের রাইফেল খসে পড়লে বলিভিয়ার জঙ্গলে আত্মসমর্পণে বাধ্য হন চে। ঘিরে থাকা সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে আরনেস্তো চে গুয়েভারার শেষ আকুতি ছিল, ‘গুলি কোরো না।’

আর্জেন্টিনার দুঃসাহসী এই তরুণ চিকিৎসক মার্ক্সবাদী কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোকে ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করেছিলেন। ফিদেলের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু বেশি দিন এই কাজে মন বসেনি তাঁর। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি পদত্যাগ করে কিউবা ছেড়ে যান। বলিভিয়া গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। সেখানেই তাঁর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর চে গুয়েভারা ধরা পড়েন। সেখান থেকে চার মাইল দূরে বলিভিয়ার ল্যা হিগুয়েরা শহরের এক কক্ষবিশিষ্ট একটি বিদ্যালয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিজেকে বলিভীয় সৈন্য হিসেবে পরিচয় দেওয়া ফেলিস্ক রদ্রিগেজে নামক জনৈক সিআইএ কর্মকর্তা পরের দিন ওই বিদ্যালয়ে ময়লার স্তূপে তাঁকে দেখতে পান। তাঁর পোশাক ছিল ছেঁড়া ও ময়লায় ভরা এবং হাত-পা ছিল বাঁধা।

আমেরিকার সরকার তাঁকে জীবিত অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বলিভীয় নেতৃবৃন্দ তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকাশ্যে বিচার হলে তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষের সমবেদনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সরকারি ভাষ্য ছিল, তিনি যুদ্ধকালে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ ব্যাপারে রদ্রিগেজের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। পরে সাক্ষাৎকারের সময় রদ্রিগেজ স্বীকার করেন, চে গুয়েভারা তাঁর স্বদেশে বহু মানুষকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু তারপরও গুয়েভারার জন্য রদ্রিগেজের মন খারাপ হয়।

কয়েক বছর পর রদ্রিগেজে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমি সরাসরি তাঁর চেহারার দিকে তাকালাম। তিনিও সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটাই ভালো। আমি কখনোই ভাবিনি, আমি জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ব।”’

দুজনেই করমর্দন করলেন। রদ্রিগেজে জানান, তিনি আমার সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে আলিঙ্গন করলাম। কিন্তু আসার সময় জনৈক সৈন্যকে চে গুয়েভারার ঘাড়ের নিচে গুলি করার জন্য নির্দেশ দিয়ে চলে আসেন তিনি।

সাংবাদিক জন লি এন্ডারসনের আত্মজীবনী ‘চে গুয়েভারা: আ রেভল্যুশনারি লাইফ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, চে গুয়েভারাকে গুলি করার দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যাইমি টিরান নামক জনৈক সার্জেন্টকে। চে গুয়েভারা তাঁকে বললেন, ‘আমি জানি তুমি আমাকে খুন করতে এসেছ। গুলি করো। তুমি কেবল একজন মানুষকে মারতে যাচ্ছ।’ টিরান চে গুয়েভারার হাত, পা ও বুকে গুলি করলেন। চের বয়স তখন মাত্র ৩৯ বছর।

ডায়েরিতে লিখেছিলেন কমান্দান্তে চে, ‘আমি ভাবতে শুরু করি, মরে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ পথ সেটাই, যখন মনে হবে সব শেষ হয়ে গেছে। জ্যাক লন্ডনের একটি পুরোনো গল্প মনে পড়ছে। তাতে গল্পের মূল চরিত্র একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে গরিমার সঙ্গে নিজের জীবনের সমাপ্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

শত্রুসৈন্যদের সঙ্গে সারাটা বিকেল যুদ্ধ করার পর গুলি লেগেছিল চের পায়ে। আরেক গুলিতে ছিটকে যায় হাতের অস্ত্র।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Congratulations @ronyislam! You have received a personal award!

1 Year on Steemit
Click on the badge to view your Board of Honor.

Do not miss the last post from @steemitboard:

Presentamos el Ranking de SteemitBoard
Introducing SteemitBoard Ranking

Support SteemitBoard's project! Vote for its witness and get one more award!

Congratulations @ronyislam! You received a personal award!

Happy Birthday! - You are on the Steem blockchain for 2 years!

You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking

Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!