মেয়েটা সুন্দর। বেশ সুন্দর। তার সাথে কথা বলতে নিলে যেকোনো ছেলে সূক্ষ্মভাবে ফ্লার্টিং করতে চাইবে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, মেয়েটি এমন সুন্দর!
.
সেই সুন্দর মেয়েটি যখন আমাকে ইনবক্সে নক করে বলল, "একসেপ্ট করার জন্য এত্তগুলা ধন্যবাদ ভাইয়া!"
তখন তাকে কী রিপ্লাই দেয়া যায়, সেটা ভাবছি। নরমালি "স্বাগতম" টাইপ রিপ্লাই দিলে হবে না। কথা সেক্ষেত্রে না-ও আগাতে পারে। এমন কিছু রিপ্লাই দিতে হবে যাতে সে খুশি হয়ে যায়। কনভার্সেশনটাও তরতর করে আগায়।
.
দ্রুত মেয়েটার প্রোফাইলে ঢুকলাম। দেখলাম সেখানে ইন আ রিলেশনশিপ দেয়া! আমার মনটা বলে উঠল, এটা মিথ্যা, এটা হতে পারে না, মেয়েটা বেশি সুন্দর তাই কেউ যেন তাকে ডিস্টার্ব না করে সেজন্যই সে মিছেমিছি রিলেশনশিপ লাগিয়ে রেখছে!
মেয়েটার পার্সোনালিটি স্ট্রং।
.
বেশিরভাগ মানুষই তার মনের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। আমিও আমার মনের বিরুদ্ধে যেতে পারলাম না। মেয়েটার প্রথম নক দেয়ার মধ্যে একটা আহ্লাদী আহ্লাদী ভাব আছে। এর মানে মেয়েটি সিঙ্গেল। রিলেশনে থাকা মেয়েরা সাধারণত এত আহ্লাদ নিয়ে পরপুরুষের ইনবক্সে নক দেয় না!
.
.
মেয়েটার মেসেজ সিন করে বসে আছি। এটা ঠিক হচ্ছে না। আবার ঠিক-ও হচ্ছে। আমার ভাব বাড়ছে। মেয়েটা ইন্টারেস্টেড হচ্ছে। মেয়েটাকে কিছু একটা রিপ্লাই দিতে হবে। আমি কায়দার রিপ্লাইটা পেয়ে গেছি। কীভাবে কনভার্সেশন আগাবো, সেটাও মোটামুটি মাথায় ঢুকিয়ে ফেলেছি। আমি রিপ্লাই দিলাম :
.
- রিলেশনশিপে থাকা মেয়েদের সাধারণত এড করি না। তবু আপনাকে করলাম!
- আমি যে রিলেশনশিপে আছি, সেটা কে বলল আপনাকে?
.
নাহ, ফ্লার্ট করা হলো না! রিপ্লাইও জুতসই হলো না। দ্রুত ফ্লার্ট করা লাগবে। মেয়েটার রূপের প্রশংসা করে রিপ্লাই দেয়া লাগবে। আমি রিপ্লাই দিলাম :
. - কেউ বলেনি। ধারণা করে নিয়েছি। কারণ সুন্দর মেয়েরা কখনো সিঙ্গেল থাকে না।
- বাহ! দারুণ লজিক! এত ব্রেইন নিয়ে ঘুমান কিভাবে??
.
ওয়াও! মেয়েটা খোঁচা মেরে কথা বলল। তার মানে সে আসলে সিঙ্গেল। আমার মুখে কিঞ্চিৎ হাসির ফুয়ারা ফুটল। তবে চেপে রাখলাম সেটা। মেয়েটা যে আসলেই কোনো রিলেশনশিপে নেই, সেটা আরও নিশ্চিত হতে হবে। আমি আবার রিপ্লাই দিলাম :
. - তা আপনাদের রিলেশনশিপ কত দিনের?
- অনেক দিনের! আমরা অচিরেই বিয়ে করতে যাচ্ছি!
.
এবার আমি হো হো করে হেসে উঠলাম! মেয়ে নিশ্চিত মজা নিচ্ছে। কি রকম খোঁচা মেরে কথা বলে রে বাবা! অবশ্য মেয়েরা একটু খোঁচাখুঁচি করে কথা না বললে জমে না আসলে। এটাই তো নারীত্ব! আচ্ছা আমাদের বিয়ের পরও কি এই মেয়ে এভাবে আমার সাথে খোঁচা মেরে কথা বলবে? মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি।
আমি আবার রিপ্লাই দিলাম :
. - আচ্ছা আপনি কি ছোট বেলা থেকেই এমন দুষ্টুমি করে কথা বলেন? এভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে? অবশ্য খারাপ লাগে না শুনতে।
- দুষ্টুমি মানে? কিসের দুষ্টুমি?
- এই যাহ! এখনও বুঝতে পারছেন না? এই যে দুষ্টুমি করে বলছেন আপনারা দ্রুত বিয়ে করবেন। আপনার তো বয়ফ্রেন্ড-ই নাই! হা হা হা। আপনি পারেনও...
.
মেয়ে এবার চুপ। নিশ্চয়ই দুষ্টুমি করে ধরা খেয়ে গেছে। তাই কিছু বলছে না। আমি তার দুষ্টুমি ধরে ফেলতে পেরে খুশিতে আহ্লাদিত হচ্ছি। মন বার বার বলছে, আমাদের তো বিয়ে হবে।
.
মিনিট পাঁচেক পর দেখি মেয়েটার রিপ্লাই এলো। মেসেঞ্জারের টিং শব্দটা যেন বুকে এসে লাগল! মেয়ে কি তাহলে আমার মনের ভাষা পড়তে পেরেছে? সে-ও কি ভাবছে আমাদের তো বিয়ে হবে? সেটা ভেবেই কি আগের মত আহ্লাদী ঢংময় কিছু লিখে পাঠিয়েছে? আমি তড়িঘড়ি করে মেসেজটা ওপেন করলাম।
.
ওপেন করতেই দেখলাম, সুন্দর একটা রিং এর ছবি! বাহ, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! চাহিলাম জল, পাহিলাম শরবত টাইপ ব্যাপার স্যাপার! আমাদের বিয়ের কথা ভাবতে না ভাবতেই মেয়ে রিং এর ছবি পাঠিয়ে দিল! মেয়েটা নিশ্চয়ই অনলাইন শপ থেকে রিংটা পছন্দ করেছে। এখন তো আবার অনলাইন কেনাকাটার যুগ! মেয়েটা নিশ্চয়ই এখন আমার কাছে এই রিং এর বায়না করবে। আহা, প্রেমিকার বায়না ব্যাপারটা এত মধুর কেন?
.
.
"এই দেখুন, এটা আমাদের এংগেইজমেন্ট এর রিং। কয়েক দিন পর আশিকের সাথে আমার এংগেইজমেন্ট। ছবিটা আশিক আজ সকালে আমাকে ইমো’তে পাঠিয়েছে!"
.
মেয়েটার মেসেজের টিং শব্দে বাস্তবে ফিরলাম! আমি হতবাক হয়ে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলাম! কিছুটা উদাস ও হলাম যেন! কিন্তু, মানুষ তার মনের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। আমিও পারলাম না। আমার মন বলছে, মেয়েটা আসলে দুষ্টুমি করছে। মেয়েটা আসলে সিঙ্গেল। ছবিটা সম্ভত এডিট করা। এগুলা তো এডিট করা যায়...