কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।"
গুন গুন করে গান টি গাইতে গাইতে থামিয়ে দিয়ে অর্চিতা বললো,
ভাবিনি আবার এইভাবে শুরু করতে পারবো । আমার কাছে তো পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিলো ।
আসলে আমরা মাঝে মধ্যে ভুলে যাই প্রতিটা দুঃস্বপ্নের শেষে একটা করে নতুন সকাল আসে ।
সৌনকের কথা টা শুনে অর্চিতা একটু মৃদু হাসলো ।
সামনের অগ্রহায়নে ওদের বিয়ে । তিন বছরের একটা সিরিয়াস রিলেশনের ভেঙে যাওয়া । বিশ্রী ধরনের একটা প্রতারণার শিকার হওয়ার পর অর্চিতা জীবনের থেকে এক প্রকার মুখ ঘুরিয়ে ই নিয়েছিলো । জীবনে কেরিয়ার নিয়ে ভাবনা ছাড়া আর কিছুই ওর কাছে তেমন গুরুত্ব পেতো না । রুক্ষ , একগুঁয়ে, বদমেজাজি , এই মেয়েটিকে দেখলেই প্রেম নিবেদন তো দুরে থাক, কথা বলতেই ভয় পেতো তার কলিগ থেকে শুরু করে বন্ধু সার্কেলের অনেকেই । কিন্তু শুঁয়োপোকা র থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠার জার্নিটাতে যে পাশে থাকতে পারে ঠিক সেই জানে আসলেই ভালোবাসা কতো সুন্দর ।
সৌনক ঠিক তেমনই রোদে পোড়া তপ্ত গরম কালের পরে এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে এসেছিলো অর্চিতার জীবনে । হ্যাঁ অনেকটা সময় কাঠ খড় পোড়া তে হয়েছে। তবে শেষমেশ অর্চিতার মুখের হাসিটা ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলো সে। একটা বদমেজাজি মেয়ের বুকেও যে এক সাগর ভালোবাসা থাকতে পারে সেটা সৌনকের মতো ছেলে গুলো কি ভাবে যেনো বুঝতে পারে । আর জানার সাথে সাথেই কাউকে সেই সাগরে ডুব দেওয়ার সুযোগ তারা দেয় না । ঠিক আপন করে নেয় প্রবল ঝড়ে নুইয়ে পরা ওই গোলাপ চারা টাকে।
ভেজা পিচ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা কাঠ গোলাপ কুড়িয়ে অর্চিতার কানের পাশে গুঁজে দিলো সৌনক । লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো অর্চিতার গাল দুটো ।
- ভালোবাসার মানুষ টা পাশে থাকলে মাঝে মাঝে লজ্জা পাওয়াটা কিন্তু ম্যান্ডেটরি।
দুষ্টু হেসে কথাটা বলেই সৌনক শক্ত করে তার প্রেয়সীর হাত টা ধরলো।
কারণ ওদের এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে ।