এক ছিল অহংকারী খরগোশ। দেখতে বেশ নাদুস-নুদুস। কচি কচি মুলো খেত। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত। আর ধেইধেই করে নেচে নেচে গান গাইত। লাফিয়ে লাফিয়ে খুব বেগে ছুটতে পারত সে। তাই তার মনে ভারি অহংকার। অন্য খরগোশদের সে গণায় ধরত না। যাকে-তাকে সে শুধুশুধু খোচা দিত। ঘোড়াকে গিয়ে বলত, কী তোমার ঠ্যাঙের ছিরি! দাঁড়িয়ে ঘুমাতে হয়।’ গাধাকে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল খরগোশ, ‘গাধারে গাধা । তুই এখনো হাঁদাই রয়ে গেলি।
লম্বা গলা জিরাফকে দেখেও হাসি থামত না খরগোশের।
হাতি তোর গোদা পায়ে লাথি’, এই বলে সে হাতি বেচারাকে খেপাত।
গরু, ভেড়া, শজারু, বানর সবাই খরগোশের কথা শুনেছে।
কাউকে খরগোশ পাত্তাই দিত না। সুযোগ পেলেই খরগোশ নিজের গুনগান করত, প্রশংসায় পঞ্চমুখ হত। আর তার চলনে-বলনে ফুটে উঠত অহংকার।একদিন বনের মাথায় মেঘ কালো করে বৃষ্টি নামল। গাছে গাছে ফুটল বর্ষার ফুল। বনের পাশে শুরু হল ব্যাঙের গান। খরগোশ থাকত সেই নদীর ধারেই।
ব্যাঙের গান শুনে তার মেজাজ গেল বিগড়ে । কারা এমন বিশ্রীভাবে চিৎকার করছে? ওরা কি জানে না— খরগোশ থাকে আশেপাশেই? মূর্খদের যদি একটু বুদ্ধি থাকত!
অহংকারী খরগোশের ভারি রাগ হল । কেউ তাকে কোনোদিন অসম্মান করেনি। আর আজ সারারাত কতকগুলো পুঁচকে তাকে হেস্তনেস্ত করে ছাড়ছে। বৃষ্টির রাতে কোথায় আরাম করে ঘুমুবে তা নয়, কানের কাছে টিন পেটানো গান বাজছে!
পরদিন ঘুম ভাঙতেই খরগোশ গেল নদীর ধারে । কচি ঘাসের ডগা চিবুতে চিবুতে সে গিয়ে দাঁড়াল উঁচু একটা ঢিবির উপর। এদিক-ওদিক তাকাল। খানিকদূরেই গানের জলসা বসিয়েছে কয়েকশো ব্যাঙ। কী কোলাহল তাদের! আনন্দে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে।
রাতে ঘুম হয়নি বলে খরগোশের মেজাজ এমনিতে তিরিক্ষি। ব্যাঙদের লাফালাফি দেখে সে আর ঠিক থাকতে পারল না। খরগোশের মনে তখন অহংকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার আশেপাশেই ছিল পাথরের টুকরো। তাই তুলে নিয়ে সে ছুড়ে মারতে লাগল ব্যাঙদের জলসায়।
ব্যাঙরা প্রথমে হতভম্ব। কী ব্যাপার! অনবরত কে যেন পাথরের টুকরো ছুড়ে মারছে। বেশ কয়েকটা ব্যাঙ সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেল। ব্যাঙদের তল্লাটে হুলুস্থুল পড়ে গেল। যে যেদিকে পারল ভাগতে চাইল ।
ব্যাঙের রাজা তখন দিশেহারা। নিজেদের আবাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কেন? কী তাদের অপরাধ? আমনি সবার চোখ গিয়ে পড়ল সেই ছোট্ট টিলাটার ওপর। ওখানে দু-ঠ্যাঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক নাদুস-নুদুস খরগোশ। এখনও তার বাঁ হাতে রয়েছে একটা লম্বা মুলো ।
ব্যাঙদের ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। এ রকম দেখতে-শুনতে সুন্দর এক খরগোশ কেন অযথা তাদের ঢিল মারছে।
ব্যাঙের রাজা আলাপ করে নিল অন্যদের সঙ্গে। খুব তাড়াতাড়ি এর একটা বিহিত করতে হবে । ইতিমধ্যে প্রায় একশো ব্যাঙ মরে গিয়েছে।
ব্যাঙের রাজা বলল, আমিই যাব খরগোশের কাছে। গিয়ে জানব কী কারণ, কী বিত্তান্ত? কেন উনি নির্মমভাবে আমাদের মারছেন।”
মাথা নামিয়ে আস্তে আস্তে একদম টিলার সামনে এসে দাঁড়াল ব্যাঙের রাজা । খরগোশ আবার যেই একটুকরো পাথর তুলে মারতে গেছে অমনি করজোড়ে মিনতি করল ব্যাঙের রাজা, বন্ধ করুন আপনার নিষ্ঠুর পাথর-ছোড়া। কেন মারছেন আমাদের?
হো হো করে হেসে উঠল খরগোশ। এই পুঁচকে ব্যাঙ নিশ্চয়ই কিছুই জানে না তার সম্বন্ধে। খরগোশ কচি মুলোর ডগা চিবোতে চিবোতে বলল, ওহে পচা ডোবার ব্যাঙ, আমি কে জানিস?
অবাক হল ব্যাঙের রাজা। কী বোকার মতো কথা বলছে খরগোশ! বনের রাজা সিংহকেই এখন কেউ চিনতে চায় না! এই খরগোশকে চিনে তার কী লাভ।
ব্যাঙের রাজা বলল, না চিনলেও এখন চিনতে পেরেছি।’ খরগোশ ছাইরঙা লেজটা পেছনে একপাক ঘুরিয়ে নিল।
বলল, আমি হচ্ছি এই বনের সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী। আমার নাক, চোখ, মুখ গায়ের রং– সবই সত্যি চমৎকার। আমি যত সুন্দর করে ছুটতে পারি অন্য কেউ তা পারে না। এসব ভাবলে অহংকারে আমার বুক ফুলে ওঠে। সেই আমি কিনা গতরাতে ঘুমাতে পারিনি। ঝিরঝির করে কাল বৃষ্টি পড়ছিল। ইচ্ছেমতো ঘুমাব এই ছিল ইচ্ছা। কিন্তু সারারাত্রি তোমাদের ঘ্যাঙোর ঘ্যাং, ঘ্যাঙোর ঘ্যাং-এর জন্যে ঘুম আমার আসেনি।’
ব্যাঙের রাজা বুঝল সব। কিন্তু এর একটা সুরাহা করা দরকার। খরগোশের কথায় বোঝা গেল— খুব অহংকারী সে। ব্যাঙদের এই তল্লাট থেকে ভাগিয়ে সে নিশ্চিন্ত হতে চায়।
ব্যাঙদের রাজা হাতজোড় করে বলল, খরগোশ ভাই, আমি একটু ক্ষণের জন্য অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে আসি । তারপরেই ব্যাপারটার একটা মীমাংসা করব ? খরগোশ খুশি হল, না বেজার হল, বোঝা গেল না। ব্যাঙের রাজা ফিরে এসে সবাইকে জানাল সবকিছু। সবার মাথায় হাত।
শেষে ব্যাঙ বলল, যা হোক একটা কিছু বলে আসি খরগোশকে । পরে আবার আলাপ করা যাবে। কিন্তু আমরা কিছুতেই এ তল্লাট ছাড়ব না। বর্ষা শুরুর গানও আমরা বন্ধ করতে পারি না।’
সবাই হাত তুলে বলল, তাই, তাই, আমরা সইব না এ অন্যায়।’ ব্যাঙের রাজা ফের গেল অহংকারী খরগোশের কাছে। মিনতি করেই খরগোশকে বলল, “এ নদীর তীর ছেড়ে আমাদের অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। আর আমাদের মুখের ভাষা আমরা বন্ধ রাখতে পারব না। কী করব এখন বলুন?
লাল হয়ে গেল খরগোশের মুখ। এতবড় সাহস পুচকে ব্যাঙগুলোর! চেঁচিয়ে উঠল সে, “তোমাদের সবাইকে পাথর ছুড়ে ছুড়ে মারব আমি?
ব্যাঙের রাজার বুক কেঁপে উঠল। তবু সে নরম সুরে জীবন-মরণ বাজি ধরল: আচ্ছা খরগোশ ভাই, আমরা তো আর এমনি এমনি নদী ছেড়ে চলে যেতে পারি না। আপনি নাকি খুব সুন্দর ছুটতে পারেন। তাহলে আপনার সঙ্গে আমার বাজি হোক। আগামীকাল আমরা দুজন দৌড় শুরু করব। নদীর বাঁকে যে বটবৃক্ষটা আছে সেখানেই দৌড় শেষ হবে। যে আগে পৌছাতে পারবে সেই জিতবে।’
খরগোশ জানতে চাইল, “যে বাজি জিতবে তার কী হবে? ব্যাঙের রাজা জানাল, আমি হেরে গেলে আমরা সবাই এই তল্লাট ছেড়ে চলে যাব। আর আপনি হেরে গেলে আপনার মাথায় চড়ে পালা করে আমরা সারা বন ঘুরব। রাজি আছেন আপনি?’
খরগোশ মুচকি হেসে রাজি হল।
ব্যাঙের রাজা বড় মুখে বলে এল দৌড়ের কথা। খরগোশ দৌড়াবে নদীর পার দিয়ে । ব্যাঙ লাফাবে নদীর তীরঘেষা পানির মধ্যে দিয়ে । খরগোশ চোখ-কান বন্ধ করেই জিতে যাবে।
শেষে ব্যাঙের রাজাই এক বুদ্ধি বের করল । বুদ্ধির প্যাঁচে ফেলেই ঘায়েল করতে হবে খরগোশকে ৷ খরগোশ ব্যাঙদের চিনতে পারবে না আলাদা করে । তাই ব্যাঙদের নদীর ধারে বিশ হাত দূরে দূরে লুকিয়ে বসে থাকতে হবে। আর ব্যাঙের রাজা গিয়ে একদম সেই বটগাছের গোড়ায় বসে ঘ্যাঙোর ঘ্যাং ঘ্যাঙোর ঘ্যাং গান গাইবে । খরগোশ নদীর পার দিয়ে দৌড়াবে। সে কিছু বললেই কাছাকাছি ব্যাঙটি জবাব দিয়ে দেবে। এভাবেই কেল্লা ফতে হবে। যা বুদ্ধি তাই কাজ।
সারারাত ব্যাঙরা নদীর তীর ঘেঁষে লুকিয়ে রইল। আর ব্যাঙের রাজা চলে গেল বটগাছটার গোড়ায় । ওখানেই দৌড়ের বাজি শেষ হবে । ব্যাঙের রাজার ছোটভাই দাঁড়িয়ে রইল দৌড় শুরু করার জন্য। এমন সময় হেলেদুলে এল অহংকারী খরগোশ। পায়ের উপর পা উঠিয়ে বলল, কিহে ব্যাঙাচি, বাজির কথা মনে আছে তো?”
ব্যাঙরাজার ছোটভাই মাথা ঝাকাল— হ্যাঁ তার মনে আছে। খরগোশ কোনো ব্যাঙকে আলাদা করে চিনতে পারবে না। এই এক বাড়তি সুবিধা । কথা আর বাড়াল না।
শুরু হল দৌড় প্রতিযোগিতা। খরগোশ ছোটে পাগলের মতো । বাতাস কেটে সে যেন উড়ে চলেছে। মাঝেমধ্যে খরগোশ চিৎকার করে ওঠে, "ওহে ব্যাঙরাজা, পেছন পেছন আছ তো, নাকি বেমালুম হারিয়ে গেছ?
তখন লুকিয়ে থাকা কোনো একটা ব্যাঙ তড়াক করে দু-কদম লাফিয়ে বলে, হারিয়ে যাব কেন? তোমার সামনেই আছি। আরও জোরে ছুটতে হবে খরগোশ তোমাকে।
খরগোশ আরও জোরে প্রাণপণ ছোটে । কিন্তু ছুটলে কী হবে, বটগাছের সামনে এসে চক্ষু তার চড়কগাছ। গান গাইছে আর ধেইধেই করে নাচছে সেই ব্যাঙের রাজা । কীভাবে সে খরগোশের আগে পৌছল? অহংকারী খরগোশের সব তালগোল পাকিয়ে গেল ।
এখন বাজি জিতেছে ব্যাঙের রাজা । খরগোশের মাথায় চড়ে ব্যাঙরা এখন বনে বনে ঘুরে বেড়াবে। লজ্জায় মাথা কাটা গেল খরগোশের। সব অহংকার তার ধুয়েমুছে গেছে। মাথা নামিয়ে রইল খরগোশ। একটি কথাও সে বলল না।
খরগোশের মাথায় চড়ে দুই দিন দুই রাত বনের এ-মাথা ও-মাথা ঘুরে বেড়াল ব্যাঙরা।
পরদিন আবার তোড়েজোড়ে বৃষ্টি নামল। ফুলেফেঁপে উঠল নদীর পানি আর ব্যাঙরা মনের সুখে বর্ষার গান ধরল।
Bengali Short Story For Kids অর্থাৎ ছোটদের অহংকারী খরগোশের গল্পটি আপনাদের পড়ে কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরও সুন্দর সুন্দর বাংলা গল্প পড়ার জন্য আমাদের ব্লগটিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।
HI @trendytee
hope you doing well . We have some restrictive rules on our Steemit platform. You must follow those rules. Copying this post of yours from somewhere else is a violation of our Steemit platform rules. To be a real blogger you must use your creativity . Your content is totally copied from another source . You have to mention or give the link from where you copied content .Otherwise it will be considered as plagiarism .Hope you will try to follow our steemits rules from now on.
Thank you .
Your post are written from this source link .
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://www.banglalovestory.in/2021/06/bengali-short-story-for-kids.html
Here is the source link
When I copy paste on steemit nothing happens I watch YouTube videos so I copy pasted for this.
I really do SORRY.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ahh no worries , just don't do this again . We just want a happy steem family :)
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit