১৫৬ ক্রীড়াবিদকে যৌন নিপীড়ন করেছেন তিনি

in blog •  7 years ago 

image.png
বিশ্বব্যাপী যৌন নিপীড়নবিরোধী জোরালো আওয়াজ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের তিন দশকের যৌন কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হওয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। মার্কিন অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো ডাক দেন ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলনের। এতে শরিক হয়ে হলিউড তারকা থেকে সাধারণ নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের যৌন নিপীড়নের ভয়াবহ স্মৃতিগুলো তুলে ধরেন। এবার বেরিয়ে এল, যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক ক্রীড়াবিদ একজন চিকিৎসকের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

ওই চিকিৎসকের নাম ল্যারি নাসার। তিনি অলিম্পিকের সাবেক চিকিৎসক। দেড় শতাধিক ক্রীড়াবিদকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ল্যারি নাসারকে বুধবার ১৭৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন মিশিগানের একটি আদালত। প্রমাণিত হয়েছে, তিনি ১৫৬ জন নারী ক্রীড়াবিদকে যৌন নিপীড়ন করেছেন।

ল্যারির বয়স এখন ৫৪ বছর। তিনি ১৯৮৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। পরের বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জিমন্যাস্টিকস দলের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ওই কাজের পাশাপাশি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির চিকিৎসাদলের সদস্য হিসেবেও কাজ শুরু করেন। ক্রীড়াবিদদের চিকিৎসার জন্য সুখ্যাতি ছিল ল্যারির।

একবার অসুস্থ হয়ে জিমন্যাস্ট জেডে কাপুয়া ল্যারির কাছে যান। কারণ তিনি শুনেছিলেন, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন ল্যারি। তবে তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি ব্যথা আর আতঙ্ক নিয়ে ফিরেছিলেন জেডে। তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হন। শুধু তিনি নন, তাঁর মতো আরও অনেকে নিউইয়র্ক টাইমসকে ল্যারির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার দুঃসহ স্মৃতির কথা জানিয়েছেন।

জিমন্যাস্ট আরিয়ানা গুয়েরিরো আদালতে ল্যারিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিপদে পড়ে এখন আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। অথচ আমাকে যখন অর্ধনগ্ন করে রেখেছিলেন...১৩ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে এমন কেউ করে?’

ল্যারি ভয়ংকর ধরনের যৌন নিপীড়ক বলে মন্তব্য করেছেন জিমন্যাস্ট রাচেল ডেনহলান্ডার। তিনি বলেন, তিনি খুব ঠান্ডা মাথায়, হিসাব কষে ও যত্নশীল মানুষের ভণিতা করে যৌন নিপীড়ন করতেন। অ্যামি লাবাডি নামের আরেক জিমন্যাস্ট বলেন, ‘লোকটা এমনভাবে আমাকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন যে প্রতিযোগিতার সময় আমি যোনিপথের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলাম।’

অল্প বয়সী ক্রীড়াবিদেরা ল্যারির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যারির এক ক্রীড়াবিদ পারিবারিক বন্ধু জানিয়েছেন, তিনি ছয় বছর বয়সে প্রথম ল্যারির দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। ল্যারির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার ক্রীড়াবিদদের বেশির ভাগই জিমন্যাস্ট। তবে এই তালিকায় দৌড়বিদ, ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড়, সাঁতারু ও ফিগার স্কেটারও আছেন।

সাঁতারু মেরি অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমার মা-বাবা আমার সর্বোচ্চ ভালোটাই চেয়েছিলেন। অথচ এই আফসোস নিয়ে তাঁদের আমৃত্যু বাঁচতে হচ্ছে যে তাঁরা দিনের পর দিন আমাকে ওই নিপীড়কের কাছে নিয়ে গেছেন। চিকিৎসার নাম করে তিনি তাঁর কক্ষের ভেতর আমাকে যৌন নিপীড়ন করতেন।’

অলিম্পিকজয়ী জিমন্যাস্ট জর্ডিন উইবার বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, অলিম্পিকের প্রশিক্ষণই বোধহয় সবচেয়ে কঠিন বিষয়। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো ল্যারির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে পার করা সময়টা।’

ল্যারিকে আইনের মুখোমুখি করার কাজটি সহজ ছিল না। কারণ, অলিম্পিকজয়ী জিমন্যাস্ট জেমি ড্যানটস্কার যখন তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ জানান, তখন সবাই তাঁর নিন্দা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এ বিষয়ে অভিযোগ তুলি, তখন আমাকে কেউ বিশ্বাস করেনি। আমার বন্ধুরাও না। তাঁরা আমাকে মিথ্যাবাদী, খারাপ মেয়ে বলেছেন। অনেকে বলেছেন, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আমি এমনটা বলছি। সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করেছে।’

তবে নীরবতা ভাঙার সুফল পেয়েছেন জেমিসহ ল্যারির কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ক্রীড়াবিদেরা। এটা কিছুটা হলেও তাঁদের মনে স্বস্তি দিয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন তাঁরা এটা নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী জিমন্যাস্ট ম্যাটে লারসন যেমনটা বলছিলেন, ‘অলিম্পিকের আর মাত্র এক বছর বাকি তখন। আমি আর তাঁর নিপীড়ন সইতে পারছিলাম না। আমি ভেঙে পড়েছিলাম। শিশুকাল থেকে খেলাধুলার প্রতি আমার যে ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল, ল্যারির কারণে সেটা নরকযন্ত্রণা মনে হচ্ছিল।’

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!