প্রিয়, পাঠকগণ,
'মানুষের মনকে ভাঙে ওরা। নোংরা হাতে মুচড়ে মুচড়ে ভাঙে। সেটা আরো খারাপ...'
পরের দিন জানা গেল বুকিন, সাময়লভ, সমভ্ এবং আরো পাঁচজন ধরা পড়েছে। ফিওদর মাজিন সেদিন সন্ধ্যেবেলায় এসে হাজির। তার ঘরেও তল্লাশি
হয়েছে। ভারি খুশি মাজিন। ভাবছে সে মহা বাহাদুর বনে গেছে।
মা শুধোয়:
'ভয় পানিরে, ফিওদর?'
মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেল ওর। চেহারাটা চোখা হয়ে উঠল। নাকটা
কাঁপতে লাগল। বলল:
'বাব্বাঃ! ভয় ছিল অফিসার বুঝি ধরে মারে। কী মোটা অফিসারটা। কালো দাড়ি, আঙুলে ইয়া বড় বড় লোম। চোখে কালো চশমা, যেন চোখই নেই ব্যাটার। গাঁক্ গাঁক্ করে সে যে কী চেল্লায় আর মেঝেতে পা ঠোকে! বলে কিনা সারাজীবন গারদে ভরে রাখবে। মার-টার কি আর খেয়েছি সাতজন্মে! বাড়ির এক ছেলে, সবেধন নীলমণি! আদরে আদরে মানুষ।'
ঠোঁট চেপে, একটুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকে। তারপর দুহাত দিয়ে চুলগুলোকে পেছনের দিকে সরিয়ে লাল চোখদুটো পাভেলের দিকে তুলে বলে: 'দেখুক না একবার হাত ছুঁইয়ে। রক্ষে রাখব না। এমনি ঝাঁপিয়ে পড়ব চাকুর মতো-কামড়ে দাঁত বসিয়ে দেব। মরণ কামড়!"
মা বলে, 'ওই তো হাড়গিলের মতো চেহারা। উনি আবার লড়বেন!' 'লড়বই তো।' আস্তে আস্তে বলল ফিওদর। তার পর চলে গেল। পাভেলকে বলে মা, 'ওই ভেঙে পড়বে সবচেয়ে আগে, দেখিস্।' করে থাকে।
পাভেল চুপ অল্পক্ষণ পরেই আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দরজা খুলে রীবিন ঢোকে। মুচকে হেসে বলে, 'আবার হাজির হলাম, কাল ওরা এনেছিল আমায়, আজ নিজেই এলাম।' বলে সজোরে পাভেলের হাত ঝাঁকানি দিয়ে এসে মায়ের কাঁধে হাত রাখে। একটু চা পাব?'
পাভেল নিরীক্ষণ করে দেখে ওর কালো দাড়ি-ছাওয়া চওড়া মুখটা আর কালো অর্থপূর্ণ কী একটা যেন রয়েছে।
চোখ। ওর এই শান্ত চাহনির মধ্যে খুবই মা সামোভার চড়াবার জন্য রান্নাঘরে যায়। রীবিন এসে বসে টেবিলে কনুইটার ওপর ভর দিয়ে। দাড়িতে হাত বুলিয়ে কালো চোখে সে তাকিয়ে থাকে পাভেলের দিকে। তার পর যেন একটা পুরানো কথার জের টেনে বলতে শুরু
করে: 'তোমার সঙ্গে খোলাখুলি কথা কইতে চাই। পাশেই তো আছ; অনেক দিন নজর করেছি। দেখছি মেলাই লোকজন আসে তোমার বাড়িতে। অথচ মদ খাওয়া নেই, মাতলামি নেই; বুঝতেই তো পারছ- কেউ একটু ভালোভাবে......
চলবে..........