তুমি এমন মেয়েকে ভালোবাসো যে লিখতে ভালোবাসে । শুধুমাত্র নতুন জামা বা গল্পের বই এর মত একটিমাত্র নির্দিষ্ট শখে পেছনে নয় যে বরং বিচিত্র বিচিত্র সব শখে বুঁদ হয়ে টাকা ওড়ায়, তার সাথেই তোমার প্রেম করা উচিৎ। তা হতে পারে স্থানীয় এতিমখানার চার থেকে ছয় বছরের কোন বাচ্চার হাতে বানানো বেতের ঝুড়ি কিংবা স্থানীয় কোন বিধবার হাতে সেলাই করা কোন নকশিকাঁথা । তার স্বামী মারা গেছে যখন তার আধ ডজন ছেলেমেয়ের অর্ধেকে বুঝতেও পারে নি তাদের বাবা কখনও ফিরে আসবে না । অথবা সুন্দরবনের হটাৎ ভ্রমনের পিছনে, তেলবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর সেখানের জীব বৈচিত্র আর পরিবেশ বাঁচাতে । অথবা কোনদিন সকালে পুরান ঢাকার কোন সাদামাটা রোস্তোরার সস্তা টেবিলে, যেখানে গত ৫০ বছর ধরে শহরের সবচেয়ে ভালো কাবাব তৈরী হয় । তালিকা চলতেই থাকবে । তুমি দেখবে প্রতিবার খরচ করার সময় সে শুধু জিনিস কিংবা অভিজ্ঞতাটাই কিনছে না, তার সাথে অসংখ্য খুটিনাটির বিশদ বিবরণ অজস্র জীবনের গল্পও তার কথার ঝুড়িতে কুড়িয়ে নেয়, তার নিপুন হাতের যাদুতে সাজিয়ে নেয় কথামালায় ।
এমন একটি মেয়েকে ভালোবাসো যে লিখতে ভালোবাসে । যার হাতে সবসময় একটা রঙউঠা নোটখাতা থাকে যার অধিকাংশ পৃষ্ঠাগুলো আলগা হয়। গেছে । সে এর পৃষ্ঠার ফাঁকে ফাঁকে নোট টুকে রাখে । এগুলো হুটহাট লেখায় ভর্তি । কখনও কোন অসমাপ্ত কবিতা, একটা অধলেখা গল্প একটা অসম্পূর্ণ প্রবন্ধ, একটা লাইন যাকে দেখলে একটা ছোট গল্পের ১ম লাইন মনে হয় । কোন বিখ্যাত কোন গানের সারগাম অথবা একটা মাত্র শব্দ যা প্রচ্ছন্নতা সৃষ্টি করে । খুবই অগোছালো লেখা হাতের লেখার কোন বালাই নেই । তার ভাবনা তার হাতের কলমের চেয়ে অনেকবেশি দূরন্ত ছোটে যে ! আর তুমি যদি আমাকে জিগ্যেস করো আজকের দিনে বুঝি কেউ নোট খাতায় লেখে ? আমি তারপরেও বলবো হুমম লেখে । একটা সাধারণ এন্ড্রয়েড দেখেছো ? যার মধ্যে নোটকরে রাখা যায় যা ইচ্ছা তা, কিংবা যা দিয়ে ছবি তুলে রাখা যায় ব্যালকনিতে বসা চড়ুই পাখির কিংবা শহরের সব পথশিশুর পবিত্র মুখ ।
তার হাতের দিকে তাকাও, তার হাত দেখে তুমি তাকে চিনতে পরবে । হাতের এখানে সেখানে একটা দুইটা কলমের দাগ, তর্জনী আর মধ্যমার শেষ কড়াতে কালসিটে দাগ দেখতে পাবে । তার হাতটা হাতে নাও মমতা নিয়ে তাকাও । অথবা হাতগুলো লালচে হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে সারাদিন বেখেয়ালে ট্যাব টা ধরে রাখতে রাখতে । বাসের জানলার পাশে খুব নিবিড় হয়ে বুঁদ হয়ে যাওয়া মেয়েটা যে তন্ময় হয়ে তার মুঠোফোনের স্পর্শপর্দায় আঙুল চালচ্ছে যেমন কনে কোন সুর সাধক তার তানপুরাকে ভালোবেসে আদর করে । যে জানে সে হয়তো একটু আগে হটাৎ পাওয়া কবিতার লাইনাকে ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত, তার খেয়ালও নেই তার গন্তব্যের বাস স্টেশন কখন ছাড়িয়ে এসেছে ! নিজেও অবাক হয় বুঝতে পারে না বারবার ধুয়ে ফেলার পরেও কালির দাগ যেন যায় না, কেন নখের আগা গুলো ভাঙা । অই যে বললাম ও লেখতে ভালোবাসে ।
সেই মেয়েটি যে বেখেয়ালে জানলার বাইরের আকাশের দিকে চোখ মেলে আছে, তাকে হয়তো তুমি সেসময় গভীর আবেগের সাথে তোমার খুব অসাধারণ কোন স্মৃতির কথা বলছো । সে যদি এরকম করে তোমার তীব্র ইচ্ছা করে তাকে তোমার দিকে ফিরিয়ে তার পূর্ণ মনঃযোগ পেতে । তার এই উদাসীনতায় অভিমান করো না । তবে চিন্তা করো না, সে অনেক কাজের কাজী । জানো তো, যে রাঁধতে পারে, সে চুলও বাঁধতে পারে । আমি তোমাকে বলছি আচমকা সে তোমার দিকে ফিরে তোমার বলা ঘটনাটার এতো গভীরের একটা প্রশ্ন করবে যতটা গভীর ভাবে তুমি তাকে বলোও নি । তুমি আরও অভিভূত হয়ে যাবে যখন ও ও তোমাকে এমন একটা দিক থেকে প্রশ্ন করবে যা তুমি কোনদিন সেভাবে ভাবোও নি ! এখন কে মনঃযোগ দিচ্ছে না ? হুহঃ ? কখনো এক মুহুর্তের জন্যও ভেবো না ও তোমাকে মনঃযোগ দিচ্ছে না । যদি মনে হয় ওর মন অন্যকোথাও পড়ে আছে তবুও তোমার সাথে আছে । আসলে সেই মুহুর্তে ও পুরো দমে তোমার সব খুঁটিনাটি মনে রাখছে যা তোমাকে বিস্মিত করবে । এমনকি বঙ্গজ বিস্কুট এর নাম যা তুমি দশটাকা বেশি দাম দিয়ে কিনেছিলে সেই অচেনা রেল স্টেশনে একলা সারাটা রাতে ।
You have received an upvote from @nicestbot. I am an automated curation bot trying to make minnows happy.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit