কক্সিসে আঘাত; কক্সিসে ভাঙ্গন

বর্ণনা

টেইলবোন বা কক্সিস ৩টি থেকে ৪টি হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এটি আপনার মেরুদণ্ডের বেস বা শেষ অংশে অবস্থিত। যখন আপনার টেইলবোনে আঘাত হবে তখন এই ছোট হাড়গুলো ভেঙ্গে যাবে অথবা ত্বক নিম্নস্থে রক্তক্ষরণ হবে।

আপনার আঘাত সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য

বেশিরভাগ টেইলবোন আঘাতে ত্বক নিম্নস্থে রক্তক্ষরণ এবং ব্যাথা হয়। শুধুমাত্র অল্পকিছুখেত্রে হাড়ে ফাটল ধরে বা ভেঙ্গে যায়। অধিকাংশখেত্রে টেইলবোনে আঘাতের কারন হল হঠাৎ করে উলটো হয়ে পড়ে যাওয়া যেমন কোন পিচ্ছিল মেঝেতে বা বরফের উপর পড়ে যাওয়া।
টেইলবোনে আঘাতের লক্ষণগুলো :
• পিছনের কোমরে ব্যথা হওয়া
• পশ্চাদ্দেশে ব্যথা হওয়া
• বসে থাকার সময় ব্যথা করা
• ত্বক নিম্নস্থে রক্তক্ষরণ এবং মেরুদণ্ডের শেষ অংশের চারিদিকে ফুলে যাওয়া

কি ধারনা করা যায়

টেইলবোনে আঘাত খুবই যন্ত্রনাদায়ক এবং অতি ধীরে ভাল হয়। ভাল হওয়ার সময় নির্ভর করে আঘাতের মাত্রা অনুযায়ী।
• যদি আপনার হাড় ভেঙ্গে যায়, তাহলে আঘাত ভাল হতে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ লাগবে
• যদি আপনার টেইলবোন আঘাতে ত্বক নিম্নস্থে রক্তখরন হয়, তবে আঘাত ভাল হতে ৪ সপ্তাহ লাগবে
শুধুমাত্র কিছুসংখক ক্ষেত্রে, আঘাতের লক্ষণগুলো পুরোপুরি ভাল হয় না। তখন ইস্টেরইড (steroid) ইঞ্জেকশান দেওয়া যেতে পারে। সার্জারির মাধমে টেইলবোনের কিছু অংশ সরিয়ে ফেলা যায়, কিন্তু সেটা অবশ্যই আঘাতের ৬ মাস বা তার অধিক সময়ের পর করা যাবে।
যন্ত্রণা মুক্ত হওয়া

নিম্নে বর্ণিত ধাপ গুলো অনুসরন করুন আঘাতের কিছু দিন বা কিছু সপ্তাহ পর:

• বিশ্রাম নিন এবং যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন যেটি ব্যাথার কারন হতে পারে। আপনি যত বেশি বিশ্রাম নিবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনার আঘাত ভাল হবে।
• আপনার টেইলবোনের ক্ষতস্থানে ২০ মিনিট ধরে প্রত্যেক ঘণ্টায় বরফ প্রয়োগ করুন প্রথম ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত যেসময়ে জেগে থাকবেন, এরপর ২ থেকে ৩ বার প্রতিদিন প্রয়োগ করুন। বরফ সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করবেন না।
• বসার সময় একটি বালিশ বা জেইল ডোনাট ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে এটি ওষুধের দোকান থেকে কিনতে পারেন।
• ব্যথার জন্য ওষুধ খাবেন
ব্যথার জন্য আপনি আইবুপ্রফেন (এডভিল, মট্রিন, ও অন্যান্য) অথবা নাপ্রক্সেন (এলিভি, নাপ্রসিন, ও অন্যান্য)। আপনি এই ওষুধ গুলো কোন প্রেস্ক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পারবেন।
• এই ওষুধ গুলো আপনার আঘাতের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করবেন না। কারন এই গুলো রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।
• ওষুধ গুলো খাওয়ার পূর্বে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারির সাথে যোগাযোগ করুণ যদি আপনার হৃদপিণ্ডের কোন রোগ থাকে, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির রোগ, লিভারের রোগ, অথবা যদি পূর্বে আপনার পাকস্থলীতে কোন আলসার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
বোতলে উল্লেখিত পরিমানের অধিক বা ডাক্তারের নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত ওষুধ খাবেন না। প্রচুর পরিমানে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার এবং প্রচুর পানি পান করুন যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। যদি দরকার হয় তবে পায়খানা নরম করার ওষুধ খান। আপনি এই ওষুধ যেকোনো ওষুধের দোকানে পেতে পারেন।

কার্যক্রম

যখন আপনার ব্যথা কমে যাবে তখন আপনি হালকা শারীরিক পরিশ্রম করতে পারবেন। ধীরে ধীরে আপনি কাজের পরিমান বাড়াতে পারেন, যেমন হাঁটা চলা করা ও বসে থাকা। আপনি:
• অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন
• শক্ত জায়গায় বসবেন না
• জেইল বা রাবার বালিশ ব্যবহার করুন বসে থাকার সময়। বালিশের মাঝখানের গর্ত আপনার টেইলবোনের চাপ বহন করবে।
• যখন বসে থাকবেন তখন কিছুক্ষণ পর পর আপনার পশ্চাদ্দেশের জায়গা বদল করুন
• কাজ করার পর যদি কষ্ট লাগে তবে ঐ জায়গায় বরফ প্রয়োগ করুন

পরবর্তী যোগাযোগ (ফলো আপ)

আপনার ডাক্তারের নিকট পরবর্তী যোগাযোগের প্রয়োজন নেই যদি আপনার আঘাতটি প্রত্যাশা অনুযায়ী ভাল হয়ে যায়। কিন্তু যদি আঘাতটি ভাল না হয়ে আরও খারাপ হয়, তাহলে ডাক্তারকে দেখান।

কখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন?

ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়:
• আঘাত স্থান হঠাৎ অসাড় হয়ে পড়া বা ব্যথা ব্যথা অনুভব করা
• আঘাত স্থানে হঠাৎ ব্যথা বেড়ে যাওয়া বা বেশি ফুলে যাওয়া
• প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি আঘাতটি ভাল না হয়
• পায়ে দুর্বল অনুভব করা
• অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে
• প্রস্রাব বা পায়খানা ধরে রাখতে অসুবিধা হলে