এখন গ্রীষ্মকাল । আমাদের নাতিশীতোষ্ণ দেশ এখন আর নাতিশীতোষ্ণ দেশ নেই, এখন শুধুই একে গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবেই অভিহিত করা যায় । বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে আমাদের উপমহাদেশীয় অঞ্চলের দেশ সমূহে । ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় এখন গ্রীষ্মকালে ভয়াবহ আকারে গরম পড়ে ।
বিগত বছরগুলির তুলনায় এখন আরো বেশি গরম পড়ছে, হয়তো ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে । বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন । আর এর মূলে রয়েছে যথেচ্ছ হারে গাছপালা ও বনজঙ্গল সাফ করা । যতবেশি গাছ কাটা পড়বে তত বেশি পৃথিবী উষ্ণ হবে ।
গ্রীষ্মকালে পা দেওয়ার পূর্বেই চৈত্রের শেষের দিকে এবার আমাদের কোলকাতায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছুঁয়েছিল । আর বৈশাখের একদম শুরুর দিকে ৪৪ ডিগ্রী ছড়িয়েছিলো । মরুভূমির চাইতেও রোডের তেজ আর বেশি খর ছিল । এই প্রচন্ড গরমে চারিদিকে বেশ কয়েকদিন ধরে লু বইছিলো । ফলশ্রুতিতে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল হিট স্ট্রোকে ।
এই প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে । এই গরমে তাই সুস্থ থাকাটাই চ্যালেঞ্জ । যদিও আমরা সবাই কম বেশি গ্রীষ্মকালীন সময়ে শরীর সুস্থ রাখার টিপস জানি, তবুও আজ আমি আমার কিছু নিজস্ব মতামত ও টিপস শেয়ার করলাম আজ । আশা করি আপনাদের কাজে লাগতে পারবে ।
০১. যাঁদের প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে তাঁরা এই কাজটি গরমের দিনে সূর্য ওঠার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগের থেকে স্টার্ট করে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পর অব্দি কন্টিনিউ করুন । তারপরে আর ভুলেও কোনো জগিং বা মর্নি ওয়াক অথবা কোনো এক্সারসাইজ করতে যাবেন না ।
০২. তীব্র গরমে খুব কষ্ট হলেও মর্নিং ওয়াক, জগিং বা এক্সারসাইজ একেবারে ছেড়ে দেবেন না । বরং সূর্য ওঠার একটু আগে এবং সন্ধ্যার প্রাক্কালে করুন । তবে, অবশ্যই সাথে করে ওয়াটার বটল নিতে ভুলবেন না ।
০৩. এই গরমে শরীর হাইড্রেট রাখা ভালো থাকার একমাত্র কারণ । তাই বেশি বেশি করে জল পান করুন । একবারে সর্বোচ্চ ২ গ্লাস জল পান করুন । কিন্তু, দিনের বেলায় ঘন্টায় একবার অন্তত জল পান করবেন মাস্ট ।
০৪. দিনে অন্তত দুই গ্লাস লেবু, নুনের শরবত করে খান । আমরা গরমে প্রচুর ঘামি । এই ঘামের সাথে শরীর থেকে নুনও বেরিয়ে যায় প্রচুর । ফলে নুন সংকট দেখা দিতে পারে পেশীতে । ফলশ্রুতিতে পেশী ক্র্যাম্প হয়ে যেতে পারে ।
০৫. সকাল দশটার পর যদি পায়ে হেঁটে বা পাবলিক যানে বাড়ির বাইরে কোথাও যান তবে সঙ্গে করে ছাতা নেবেন মাস্ট । ভুল যেন না হয় । প্রয়োজনে একটু সানস্ক্রিনও মেখে নিতে পারেন ।
০৬. গরম কালে রাস্তার ধারের কোনো ফাস্ট ফুড ভুলেও ছোঁবেন না । একই সাথে লোকাল চায়ের দোকানের চা, রাস্তার ধারের কাটা ফল এবং খোলা রাস্তার ওপরে বিক্রি করা কোনো শরবত খাবেন না । গরমকালে নানান জীবাণু আক্রমণের সব চাইতে সহজ মাধ্যমগুলো হলো ওগুলোই । টাইফয়েড ও কলেরার জীবাণুতে এই সময় বেশি সংক্রমণ হয় ।
০৭. গরমে বেশি করে তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন বাড়িতে । শরবত, স্যুপ, স্ট্যু এসবের পাশাপাশি ডাল, ভাত, মাছের ঝোল খাবেন । খাবার পাতে অবশ্যই লেবু রাখবেন । এই সময়টাতে মাংস ও গুরুপাক রান্না যথাসাধ্য কম খাবেন । খুব ভোরে ব্রেকফাস্ট করবেন । দুপুরে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি সহযোগে ভাত, ডাল ও মাছের ঝোল খাবেন । ভাজাভুজি একদম কম খাবেন । রাতে একদম হালকা খাবার খাবেন । রাতে ভাত না খেলেই ভালো, তারপরেও যদি খান তো একদমই কম ভাত খাবেন ।
০৮. গ্রীষ্মকালীন ফলগুলি প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন । বিশেষ করে ডাব, তরমুজ, বাঙ্গি, ফুটি, বিভিন্ন মেলন জাতীয় ফ্রুট, লিচু, কলা, পেঁপে, আম (কাঁচা ও পাকা উভয়ই), কাঁঠাল, বেল, শসা, জাম এবং জামরুল ।
০৯. ডাবের জল ডেইলি এক গ্লাস করে পান করবেন । এতে শরীর সব চাইতে বেশি সতেজ থাকে । আমিও গরমকালে ডেইলি একটা করে ডাবের জল পান করি । এর সাথে চেষ্টা করবেন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খেতে । গরমকালে প্রচুর পরিমাণে পাতি ও গন্ধরাজ লেবু ওঠে বাজারে । এক গ্লাস জলে একটি পাতি লেবুর রস চিপে বের করে তার সাথে এক চামচ চিনি ও এক চিমটি নুন মিশিয়ে ওপরে গন্ধরাজ লেবুর রস হালকা করে দিয়ে শরবত বানিয়ে খাবেন । দিনে অন্তত দুই গ্লাস ।
১০. খুব ভোরে স্নান করার অভ্যাস করুন এ দুটি মাস । প্রতিদিন বিকেলে গা ধুয়ে ফেলবেন তবে মাথা ভেজাবেন না । গায়ে ঘাম থাকলে আগে ফ্যান চালিয়ে ঘাম শুকিয়ে নেবেন । এরপরে স্নান করবেন ।
------- ধন্যবাদ ------