বানিজ্যিক ভালোবাসা।। রম্য রচনা-১২০

in comdystory •  2 years ago  (edited)

bb.jpg
(Copyright free image from pixyby)

১।

প্রকৃত পুরুষ যারা, তাদের নাকি দুটি জিনিস পছন্দের- খেলনা আর বিপদ। অন্যদিকে নারীদের গন্য করা হয় সবচেয়ে বিপদজ্জনক খেলনা হিসেবে।সে জন্য প্রকৃত পুরুষ মাত্রই নাকি নারীঘেষা। অনুপ সে রকম পুরুষ কিনা তা সে জানে না। তবু সুদিপ্তার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি ছিলোনা। এরপরও সুদিপ্তা তার বিপদজনক রুপটা দেখিয়েই ফেলল। অনুপ যত বড় খোলোয়াড়িই হোক, সুদিপ্তা তো নারি- সবচেয়ে বিপদজনক খেলনা! অথচ কথা ছিল, যত ঝড়ই আসুক অনুপের হাতটা সে ছাড়বেনা। আমরন এক সাথে কাটিয়ে দিবে। সুদিপ্তা যখন অনুপকে এই সব আবেগী কথা বলত, অনুপ তখন অদ্ভুতভাবে হেসে উঠতো। সেই হাসি দেখে সুদিপ্তা উচ্ছসিত হয়ে বলত-জানিস, তোর এই হাসির জন্য আমি জীবন দিতে পারি।

-সৌজন্যতা।

রাস্তার মোড়ে বিশাল বড় ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিন বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলে উঠল অনুপ। পড়শু সুদিপ্তার বিয়ে! দাওয়াত দিয়েছে উনুপকে সে, বলেছে সে যেন অবশ্যি আসে। কিন্তু কেন? সৌজন্যতা? তবে কী সুদিপ্তার ভালোবাসা, মুগ্ধতা, হাজার রঙ্গের সপ্ন, নিভৃতে তাকিয়ে থাকা অথবা হাসির জন্য প্রান দিতে চাওয়া…সবই সৌজন্যতা> এমনই যদি হবে তাহলে ভালোবাসি কেন বলতো সে> কেন সাজিয়েছিলো এতো গভীর সপ্নের পসরা? তবে কী সুদিপ্তার ভালোবাসা সৌজন্যতা ছাড়া কিছুই নয়? স্পন্সরে অনুষ্ঠান হয়। সৌজন্যতা চলে সাধারন সম্পর্কে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালবাসাতেও?!!

২।

কুকুর যখন চাঁদের দিকে চেয়ে ঘেউঘেউ করে, তখন সেটা কুকুরের অভ্যাস বলে গন্য হয়। কিন্তু সেই একই কুকুর যখন আগুন্তুক দেখে চেঁচায় লোকে তখন সেটাকেই প্রভুভক্তি বলে। সাধারন ভাবে মিথ্যা বললে পাপ হয়। প্রেমিক যখন মিথ্যা বলে তখন সেটা হয় চাতুর্য, অবিবাহিত মিথ্যা বলাকে বলে চমৎকারিত্ব আর বিবাহিত নারীর মিথ্যে বলা হচ্ছে স্বভাবের প্রতিক। কিন্তু কোন কিছুর উপস্থাপনের ফাঁকে মিথ্যা বললে সেটা হয় সৌজন্যতা। ইংরেজিতে পরিচিত নাম স্পন্সর। স্পন্সর নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছুই সেন্সর করতে হবে। কিন্তু এমন হলেতো কিছুই লিখা হবে না। আবার যদি এক্কেবারে চুপ করে থাকি তাহলেতো আমিও স্পন্সরের মিত্রে প্ররিনত হবো। কিন্তু কেমন মিত্র? পশুরা নাকি মানুষের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য মিত্র। কেননা তারা কোন প্রশ্ন করে না, সমালোচনাও করে না। আমাদের মিডিয়ার অবস্থা কি এমনি!! টিভি মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া স্পন্সর নির্ভর হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। আমাদের চিন্তা চেতনা আর উদ্যোগগুলো স্পন্সরের মোড়কে বন্দি হয়ে যাচ্ছে। লেখাটা কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে। একটা জোকস হয়ে যাক-

দুই বন্ধুতে কথা হচ্ছে। এর মধ্যে একজন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যাবসা খুলেছে।

তো তার বন্ধু জিজ্ঞেস করলো-

কিরে বিয়ে করলি, আবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী খুলেছিস। তা কেমন চলছে। আয়ে ব্যয়ে যাচ্ছেতো?

নাহ। আয়ে ব্যয়ে কেমন জানিনা। তবে স্পন্সরে চলে যাচ্ছে।

এই স্পন্সর এতো এতো মাথায় ঢুকেছে যে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর মত আজকাল প্রতিটি কাজের আগেই আম জনতাও স্পন্সরের কথা চিন্তা করে। বিষয়টা নিয়ে টেনশিত হবার কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হলো সম্ভাব্য বিষয়ের পাশাপাশি আজাইরা কিছু বিষয়েও আজকাল স্পন্সরের অভাব অনুভূত হচ্ছে। বেকার যুবক টাকার অভাবে শেভ করতে না পেরে মুখ ভর্তি দাঁড়ি নিয়ে বন্ধু বান্ধবের সামনে থোতা মুখ ভোতা করে দেবদাশের খেতাব জোটায়। জিজ্ঞেস করলে বলে স্পন্সরের অভাবে শেভ করতে পারছিনা।এবার বুঝুন অবস্থা।!! আর এভাভেই আমরা কোন না কোনভাবে স্পন্সরের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ছি। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আগামীতে হয়ত এমন সময় বাংলাদেশে আসবে, যখন কারো জন্মের পরপরই তার স্পন্সর হয়ে যাবে। হয়ত এমন সময় আসবে যে জীবনে সে অমুক কোম্পানির টুথপেস্ট, তমুক কোম্পানীর দুধ, বিলকিস কোম্পানির পোশাক, জুতা, এমনকি টিস্যু ইত্যাদি ছাড়া আর কিছুই ব্যাবহার করতে পারবেনা। মানে নির্দিষ্ট কোম্পানীর নির্দিষ্ট স্পন্সরের শর্ত মতেই কাটবে তার জীবন। অন্তত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যেহেতু মৃত্যু বিয়োগান্তক কিন্তু সহস্র পরিসংখ্যানের বিষয় বস্তু তাই স্পন্সরড হয়ে মরাও ভালো। পরিসংখ্যানটা একটু ভারি হবে! মৃত্যুর পর সবাই বলবে অমুক তমুক সমুক কোম্পানী তার স্পন্সর ছিল।

৩।

সিনেমার নগ্নতা নিয়ে আমার এক বন্ধু ফান করে বলেছিলো-

নগ্নতা নিয়ে ওদের কিছু বলা ঠিক না।কারন যারা নগ্ন হচ্ছে তারা ঐভাবেই জগতে এসেছে। অথচ মজার ব্যাপার হলো, অন্যরাও কিন্তু একই ভাবে জগতে এসেছিল!! তাই বলে কি সবাই নগ্ন হচ্ছে? কিন্তু আমরা কি জগতে স্পন্সরড হয়ে এসেছিলাম যে আমাদের জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবে স্পন্সর? এক যুবতী তার বান্ধবীকে বলছে-

ঃজানিস, সমস্থ পুরুষই জানোয়ার বিশেষ!

তখন তার বান্ধুবী প্রশ্ন করল-

ঃ তাহলে তুই পুরুষদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াস কেন?

তখন সেই বান্ধুবী হেসে জবাব দিলো-

ঃ কেন তুই জানিস না আমি জীবজন্তু ভীষন ভালোবাসি!

স্পন্সরের প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা কি এমন?

আচ্ছা কেউ কি জানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্পন্সরশীপ কী? সেটা হল সুখ। সুখ খুঁজে না পৃথিবীতে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কিন্তু কিসের সৌজন্যে পাওয়া যাবে সুখ? এক লোকের পরামর্শ এরকম-

জীবনে যদি বেঁচে থাকার পূর্ণ আনন্দ পেতে চান, যদি দেবানুগত্য এবং ঐশ্বরিক করুনা লাভ করতে চান, যদি অসীম ধর্য্যের সহচরয পেতে চান, যদি আনন্দোজ্জ্বল পরিবেশে বাস করতে চান, যদি অসীম সুখের নরম কোলে উচ্ছ্বাসে গড়াগড়ি দিতে চান তবে স্পন্সরের ভীড়ের নাটকগুলো দেখতে থাকুন, যেখানে নাটকের চেয়ে স্পন্সরই প্রাধান্য পায় এবং মেয়েরা প্রদশ্যিত হয় পন্য হিসেবে, তাতেও যদি আনন্দ না পান তবে শেষমেশ ভিতিবি দেখতে পারেন, সভ্য সমাজে নারী বানিজ্যিক পন্য হিসেবে ব্যাবহার্জ হচ্ছে, এইটা না দেখার চাইতে তেলবাজী দেখা অনেক শ্রেয়।

বিঃদ্রঃ যদি কখনো দেখেন স্পন্সরের কাছে বিক্রি হচ্ছে আপনার ভালোবাসা, তবে থু থু মারার কথা মোটেও ভাববেন না যেন!! স্পন্সরশীপের ক্ষমতা কিন্তু অনেক। আপনি পারবেন না। খামাখা জীবন খুইয়ে লাভ কি বলেন, ভালোবাসা এখন আর শুধু ভালোবাসা নেই হয়ে গেছে বানিজ্যিক বালুবাসা।

বিঃদ্রঃ ইহা একটি রম্য রচনা। কারো জীবনের সাথে মিল খাইলে আমি উন্মাদ দায়ী না। আর জানেনত পাগলে কিনা বলে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

This is a one-time notice about a free service on steem.
There are communities that help support the little guy 😊, you might like ours, we join forces with lots of other small accounts to help each other grow!
Finally a good curation trail that helps its users achieve rapid growth, its fun on a bun! check it out. https://plu.sh/altlan