ওয়ানডেতে মাশরাফির সেরা পাঁচ!

in cricket •  7 years ago 

1.jpg

আমাদের অধিনায়ক যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বোলিং প্রান্তে হাঁটেন, যখন নিজের ‘ইনজুরিপ্রবণ’ শরীরের দিকে না তাকিয়ে ক্ষীপ্র চিতার মতো ডাইভ দিয়ে রান বাঁচাতে চান অথবা শেষবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করেন বিপক্ষ দলের উইকেট উপড়ে ফেলতে, আমরা তখন নিজেদের আবেগকে ধরে রাখতে পারি না। পারা যায় না আসলে।

হ্যাঁ, বলছি ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ এবং ওয়ানডে দলের অধিনায়কের কথা। ক্রিকেটপ্রেমী প্রতিটা মানুষ মাত্রই জানেন, এই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-কে বার সাতেক সার্জারির ছুরির নিচে যেতে হয়েছিল। কিন্তু প্রায় প্রতিবার মাথা উঁচু করে তিনি ফিরে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার কথা ভেবে। এখনও যিনি সবুজ গালিচায় প্রাণ খুঁজে পান তাঁদের অসামান্য অবদানের অনুপ্রেরণায়। একজন ‘টাইগার’ অধিনায়কের কাছে এর থেকে মহিমান্বিত আর কি হতে পারে? ভাবতে গেলে বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়।

মাশরাফিকে নিয়ে ভুরি ভুরি লেখা হয়েছে। দিস্তার পর দিস্তা পাতা শেষ হয়ে যাবে, তবু যেন কোথাও অপূর্ণতা রয়ে যাবে; এতোই বৈচিত্র্যময় জীবন আর বর্ণিল ক্যারিয়ার আমাদের ‘পাগলা’র! আজ ‘ক্যাপ্টেন’ অথবা ‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফিকে নিয়ে নয়, আজ শুধু নিরেট ‘বোলার মাশরাফি’ আমার লেখার আলোচ্য বিষয় এবং সেটা কেবল ওয়ানডে ক্রিকেটে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত পরিসর(টি-টোয়েন্টি) থেকে ইতোমধ্যে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন আর টেস্ট ক্রিকেটও খেলেন না প্রায় ন’বছর হল। তাই আমার হিসেবটা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই থাকছে।

লেখাটির প্রতিপাদ্য হল- ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মর্তুজার ‘বোলিংয়ে সেরা পাঁচ নৈপুণ্য’। এবং তা বেছে নিতে আমি প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, ম্যাচ বা টুর্নামেন্টের গুরুত্ব, জয়ে ভূমিকা বা দলের অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েছি। সুতরাং দেখা যাবে যে, ম্যাশের যে পারফরমেন্সগুলো আমি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি; সেগুলোর মধ্যে দুয়েকটাকে অন্য কোন ক্রিকেট অনুরাগী ‘সাধারণ’ বলে গণ্য করছেন তার বিবেচনায়। এমনটা ঘটাই স্বাভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত। সবার বিবেচনা কখনোই এক হবার নয়।

2.jpg

শুরু করছি পোর্ট অব স্পেন থেকে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। আইসিসি বিশ্বকাপ ২০০৭। বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত। শুধুমাত্র ম্যাশের অসাধারণ বোলিং দিয়ে এই ম্যাচকে মূল্যায়ন করা কঠিন। ম্যাচের অন্তরালে ছিল অন্যরকম গল্প, হৃদয়বিদারক গল্প। ঠিক একদিন আগে খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাংলাদেশী দুই ক্রিকেটার মাঞ্জারুল ইসলাম রানা ও সাজ্জাদুল হোসেন সেতু। রানা দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশকিছু ম্যাচ খেলেছিলেন বলে দলের প্রতিটি সতীর্থের মনে এই দুর্ঘটনা বেশ নাড়া দেয়। তাছাড়া,রানা ছিল কৌশিকের একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দু’জনে মোটরবাইকে চড়ে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতেন। চষে বেড়াতেন খুলনা বিভাগের নানা অঞ্চল এমাথা থেকে ও মাথা। প্রিয়সখার দুনিয়া ছেড়ে যাবার আচমকা খবরে অন্য সবার থেকে তাই একটু বেশিই মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। পরের দিন মাঠে নামলেন। বল তো নয়, যেন চোয়ালবদ্ধ সংকল্প মুঠোর ভেতর। গর্জনরত বাঘের মতো একের পর এক শেভাগ,উথাপ্পাদের উইকেট উপড়ে ফেলতে লাগলেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করে তুললেন গতির ঝড়। মারকুটে শেভাগের স্টাম্প ছত্রখান করে দৌড় না থামিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে কী বলছিলেন কৌশিক সতীর্থদের উদ্দেশে? রানার কথা, ম্যাচ জয়ের কথা, নাকি নিজের স্বরূপে ফেরার কথা? শুরুতেই ভারতের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিলেন, যা থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাটিংয়ে অন্যতম সেরা দলটি। মাশরাফি পেলেন ৩৮ রানে ৪ উইকেট। মনে হল, ‘ধরে দিবানি’র পণ করে নামা এই বোলারটির সেদিন যেন আরও কিছু করার বাকি ছিল। অবধারিতভাবে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হলেন তিনি আর ভারত পেল বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেবার পুরস্কার!

3.jpg

নড়াইল এক্সপ্রেসের ‘বোলিংয়ে সেরা পাঁচ নৈপুণ্য’ -এই তালিকার দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি যে পারফরমেন্সটাকে রাখি, তা অনেকেরই ভ্রূ কুঁচকে দিতে পারে। তবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, যারা তখনকার বাংলাদেশের করুণ অবস্থা এবং অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ার দশকজুড়ে দাপটের কথা জানেন বা দেখেছেন, তাদের পক্ষে এটিকে কোনরূপেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ ২০০৫। ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের ‘সোফিয়া গার্ডেন্স’ ভেন্যু। বলা হত তখন- বড় দলের সাথে জিততে হলে শুরুতে ম্যাশের দারুণ বোলিং গুরুত্বপূর্ণ। টাইগারদের অধিকাংশ জয়ী ম্যাচে সেটার প্রতিফলন দেখা গেলেও এমন অসংখ্য ম্যাচেরও সাক্ষী বাংলাদেশ হয়েছে, যেখানে তার চমৎকার শুরুটা টেনে নিয়ে যেতে পারেনি দলের বাকি বোলাররা। তবু হলুদ সুলতানের মতো মাথায় মুকুটচূড়া আর কলার উঁচু করে দৌড় শুরু করেন নিঃসঙ্গ শেরপা। এই স্মরণীয় ম্যাচের শুরুতেও ডেঞ্জারম্যান গিলক্রিস্টকে শুন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। অন্যতম বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিংয়ের মুহুর্মুহু নর্তন কুর্দন দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি বোধহয় অন্য কোথাও গেলে স্বস্তি পেতেন, হয়তো ভুল করে কিবা অনিচ্ছায় ক্রিজে এসে পড়েছেন! মাশরাফির গতিময় সুইং,নিয়ন্ত্রিত লাইন লেংথ কোনকিছুই ‘পান্টার’ দস্তুরমতো সামলাতে পারছিল না। ষোল বল খেলে রান করেছিল মাত্র এক!

রানের নাটাইটা নিজেদের কোর্টে রাখতে পেরেছিল সেদিন ম্যাশ রফিকেরা। সে সূত্রে ‘দাপুটে’ অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় আড়াই শো’র নিচে, যা জয়ের ক্ষেত্রে রসদ যোগায়। যে জয়ের ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য বিপুল। অবিশ্বাস্য এবং অভাবনীয় এক জয় এসেছিল বঙ্গশার্দূলদের হাত ধরে। যা তখনকার ইনভিন্সিবল অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল ‘অকল্পনীয়’! এবং বিদেশের মাটিতে বিরুদ্ধ কণ্ডিশনে সেই ঐতিহাসিক জয়ের চমৎকার সূচনা করে দেয় কৌশিকের অনবদ্য বোলিং প্রদর্শনী। স্কোরকার্ডে বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়কের বোলিং ব্যবচ্ছেদ ছিল এরকমঃ ১০-২-৩৩-১।

4.jpg

এই তালিকার তিনে রাখছি ২০০৮ সালে কিউইদের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটাকে। মিরপুরে খেলা না হলে এটিকে নৈপুণ্যের শ্রেষ্ঠত্বে দুইয়ে রাখতাম কিনা,সংশয়ে ছিলাম। সিরিজ পূর্ববর্তী আলোচনা কিংবা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘আইসিএল’। আইসিএল তখন আইপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বী(রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক) হওয়ায় আইসিসি একপ্রকার বাধ্য হয়েই ক্রিকেটারদের প্রতি ‘সমন’ জারি করে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও আইসিএল খেলতে ক্রিকেটাররা পাড়ি জমান ভারতে। নিষেধাজ্ঞা নোটিশ ঝুলবে জানার পরেও তারা খেলতে যান। এর কারণ, অধিকাংশ খেলোয়াড়ের ফর্ম ও ফিটনেস ছিল পড়তির দিকে। কেউ কেউ আবার অবসর গ্রহণ করেছিল। অনেকেরই শঙ্কা ছিল,জাতীয় দলে তারা হয়তো আর ফিরতে পারবে না। তাই সানন্দে ‘বিদ্রোহী লীগে’ গমন। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বড় কোন ক্ষতি না হলেও তৎক্ষণাৎ তুমুল অনিশ্চয়তায় কেঁপে উঠেছিল অবশ্য দেশের ক্রিকেট। সেই অনিশ্চয়তা আর খচখচে ক্ষতে প্রলেপ হয়ে এসেছিলেন আমাদের কৌশিক রেশমি আলোর মতো। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুপম নজির হাজীর করলেন। মাঠে নেমে দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে। ভুলিয়ে দিলেন দলত্যাগী এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের কথা। ৭৯ রানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ছয়টি উইকেটের পতন, যার প্রথম তিনটি মাশরাফি তুলে নিয়েছিলেন। এমনই মাপা বোলিং করছিলেন যে, তিন তিনটি মেইডেন ওভার লাভ করে জয়ের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সতীর্থদের। সীমিত ওভারে দুর্ধর্ষ রাইডার,ম্যাককালামের চোখের পানি নাকের পানি এক করে ছেড়েছিলেন ‘ফ্রেঞ্চকাট’ মর্তুজা। নতুন বলের শাইন কাজে লাগিয়ে সুইংয়ের পসরা সাজিয়েছিলেন। কখনও কখনও অফ কাটার,স্লোয়ার দিয়ে বিভ্রান্ত করে মূল্যবান উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন। তার বোলিং চিত্র ছিল এমন- ১০ ওভার, ৩ মেইডেন, ৪৪ রান, ৪ উইকেট!

টাইগাররা সাত উইকেটের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি জিততে সমর্থ হয়।

5.jpg

মাশরাফির বোলিংয়ে ‘সেরা পাঁচ নৈপুণ্য’ –তে তারপরে তোলা যায় সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের প্রসঙ্গ। ২০১৬ সালে শক্তিশালি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল বাংলাদেশে সফর করে দু’টি টেস্ট সহ তিনটি ওয়ানডে খেলতে। প্রথমটিতে তীরে এসে জয়ের তরী ডুবে যায়, সাকিবের অনন্য সাধারণ এক ইনিংস বিফলে যায়। দ্বিতীয়টায় চ্যালেঞ্জ দাঁড়ায় সিরিজে টিকে থাকবার। কারণ, এর পূর্বে দেশের মাটিতে ম্যাশের অধিনায়কত্বে শার্দূলদের দল পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ পরপর ছয়টি সিরিজে অপরাজিত ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় দেখা যায় লাল সবুজ বাহিনীর চোখেমুখে, শরীরী ভাষায়। প্রত্যয়ের পুরোটা ফুটে ওঠে টাইগারদের বোলিং স্তম্ভের সহজাত ঝলকে। দলের বিপদে ২৯ বলে ৪৪ রানের কার্যকর ক্যামিও ইনিংসের পর স্বল্প পুঁজি নিয়ে যে প্রবল পরাক্রমে(৮.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট) ‘নাক উঁচু’ ব্রিটিশ উইলোবাজদের ঘায়েল করেন, তার যথার্থ বর্ণনা শেখ সাদী অথবা পাবলো নেরুদার কাছ থেকে শুনতে পারলে মন্দ হত না। বলের গতি কমিয়ে ব্যাটসম্যানদের প্রতিটি পদক্ষেপ রিড করে অথবা রানের লাগাম টেনে ধরে সহজেই যে উইকেট পকেটে পোরা যায়, তার বুদ্ধিদীপ্ত উদাহরণ এই ম্যাচের মাশরাফি। ‘সিজনাল সাপোর্টার’ অথবা উটকো সমালোচক গোছের কেউ কেউ বলে থাকেন, ওয়ানডে অধিনায়কের পারফরমেন্স নাকি আগের মতো নেই! তাদের বলি,এই ম্যাচের ফুটেজ দেখে নিতে এবং ক্রিকেট সাইটে গিয়ে চোখ বুলাতে(অবশ্যই চোখ কোচলে)। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আজ অবধি যতগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে, প্রায় প্রতিটিতে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘প্রিন্স অব হার্টস’। কখনো গুরুত্বপূর্ণ ওভারগুলোতে রানের চাকা মন্থর করে দিয়ে, কখনোবা ইনিংসের শুরুতেই টপাটপ টপ অর্ডারের উইকেট তুলে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ইনিংসের প্রারম্ভে বহুবার সাদা বল তাকে তুলে দিতে হয়েছে তরুণদের হাতে (বিশেষত মুস্তাফিজের আগমনের পরে)। আপাদমস্তক দল অন্তঃপ্রাণ একজন। প্রিয় নতুন বল হাতে নেয়া আর প্রথম পাওয়ার প্লের ওভারগুলো করা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে হয়েছে দলের প্রয়োজনে। তবু এক রত্তি তার পারফরমেন্স ওঠানামা করেনি। সাফল্য থেকেছে একই রকম।

অবশেষে সমাপিত সংখ্যা। বস্তুত যে চমৎকার নৈপুণ্যকে আমি তালিকার পাঁচে রেখেছি, টেকনিক্যালি কিংবা স্ট্যাটিস্টিক্যালি সেটাই মাশরাফির ‘বেস্ট বোলিং’। ঊনত্রিশ রান খরচ করে ছয় ছয়টি উইকেট! ওয়ানডেতে একজন বোলারের যা আরাধ্য স্বপ্ন। দুনিয়ার অনেক গ্রেট প্লেয়ারদের ভাগ্যেও যা জোটেনি কোনদিন।

6.jpg

২০০৬ সাল। প্রতিপক্ষ দুর্বল কেনিয়া। নাইরোবিতে তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের আয়োজন করা হয়, যার সবগুলোতে টাইগার বাহিনী জয় লাভ করে। বলাই বাহুল্য, একদা কেনিয়া ক্রিকেট দক্ষতায় অনেক এগিয়ে থাকলেও সময়ের স্রোতে বাংলাদেশের তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে পড়ে তারা (এর পেছনে মূলত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক দুরবস্থা দায়ী)। তখন টিকলোদের যুগও প্রায় শেষ। তাই সব দিক বিবেচনা করে নড়াইলের দীর্ঘদেহী পেসারের টেকনিক্যালি এই সেরা নৈপুণ্যকে আমি পাশ কাটিয়ে যেতে পারিনি। আফ্রিকার বাউন্সি পিচ সর্বদা ফাস্ট বোলারের জন্য সহায়ক হয়। সেটার পুরোপুরি ফায়দা লুটে তরুণ মাশরাফি গোটা সিরিজে অসাধারণ বোলিং দক্ষতার পরিচয় দেন। তিন ম্যাচে তুলে নেন বারোটি উইকেট। ম্যান অব দ্য সিরিজ হতে তার বিকল্প কেউ ছিল না। শেষ ওয়ানডেতে দুর্ধর্ষ বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। কব্জা করেন মিডল ও লেট মিডল অর্ডারের সবগুলো উইকেট। ফলাফল দাঁড়ায় অবিশ্বাস্যঃ ১০-০-২৯-৬!

২০০১ সালে যার জাতীয় দলে অভিষেক আগমনী সংগীত শুনিয়ে। সেই থেকে একজন মাশরাফি খেলে যাচ্ছেন হাঁটুতে কত রকমের কঠিন কঠিন নামের অস্ত্রোপচার সয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সহনীয় ব্যান্ডেজ জড়িয়ে ‘নী ক্যাপ’ পেঁচিয়ে খেলে যাচ্ছেন। তবুও মাঠে ঝাপিয়ে পড়তে বিন্দু পরিমাণ পিছপা হচ্ছেন না। এই ইনজুরিপ্রবণ পেস বোলার শরীরের সাথে কুলাতে না পেরে গতি কমিয়ে দিয়েছেন তবু বোলিং প্রান্তের দুর্বার মানুষটিকে দেখলে মেলানো যায় না কোন সরল সমীকরণ, যা আমরা চারপাশে দেখে থাকি অথবা যে হিসেব অতীত অভিজ্ঞতায় মিলে যায়। এভাবেই আমাদের ম্যাশ দলের সেরা বোলার হয়ে যায়। এভাবেই জখম নিয়ে জনমভর খেলার কথা তিনি ভাবতে পারেন। এভাবেই ১৭৯ ম্যাচে মাঠে নামেন, আঘাত পান আবার উঠে দাঁড়ান, উইকেট উপড়ে ফেলেন দুর্মর স্পৃহা বুকে নিয়ে। এভাবেই দলের সর্বোচ্চ ২৩২ উইকেট ধরা দিয়ে যায় তার বুক পকেটে। সাদা বল যেন তার অন্ধভক্ত। সবুজ ঘাসকে মনে হয় আজন্ম নিবেদিত। বাইশ গজের ক্রিজ যেন জীবনের সংগ্রামরত সিনেমা।

আমার কাছে একজন মাশরাফি অধিনায়ক নন, তিনি হয়ে যান একজন নেতা।

আমার কাছে একজন মাশরাফি হিরো নন, তিনি বনে যান একজন সুপারহিরো।

বারবার মাটিতে আছড়ে পড়ে দুর্বার হয়ে ফিরে আসার নামই তাই মাশরাফি..

তার জন্মদিনে জানাই নিরন্তর শুভেচ্ছা..

UPVOTE if you like what you see.
COMMENT to tell me what you like to see.
RESTEEM because sharing is caring.

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Yes

  ·  7 years ago Reveal Comment