মক্কার কবরস্থান -আল-মুয়াল্লা বাংলা - একদল বিজ্ঞ আলেম #dailyblog

in dai •  2 years ago  (edited)

mokka-180511195142.jpg
মক্কার কবরস্থান -আল-মুয়াল্লা
প্রথমঃ মুয়াল্লা কবরস্থানের পরিচয়ঃ

এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর যুগ থেকেই মক্কাবাসীদের প্রধান কবরস্থান। মসজিদে হারামের ৭০০ মি. দূরত্বে আল-হুজুন এলাকায় অবস্থিত। তার আয়তনঃ ২১০০.০০০ মিটার।

মক্কাবাসীদের হাজার হাজার মৃতসহ সেখানে এবং পার্শ্ববর্তী ও মুসাফিরদের দাফন করা হয়। অনুরূপ দাফন করা হয়েছে সেখানে কিছু সংখ্যক সাহাবীকে।

দ্বিতীয়তঃ মুয়াল্লা কবরস্থানের ফযীলতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ

অর্থাৎ “কতইনা উত্তম কবরস্থান এটি”। এ হাদীসটি ব্যতীত মুয়াল্লা কবরস্থানের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। (হাদীসটি ইমাম আহমদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেনঃ ১/৩৬৭, ইমাম বুখারীর তারীখে কাবীরঃ ১/২৮৪ ও প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।)

পক্ষান্তরে এ ব্যতীত যা কিছু পাওয়া যায়, যেমনঃ সেখান থেকে সত্তর হাজার পুনরুথান হয়ে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যাদের প্রত্যেকেই আবার সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে। এর কোন কিছুই সঠিক সূত্রে সাব্যস্ত নয়। (শায়খ গাব্বান রচিত ফাযায়েলে মক্কাঃ ২/৯৪৩-৯৪৪)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে হজ করেছেন; কিন্তু তাঁদের কেউ সেখানে নামায বা দু’আর জন্য গমন করেননি। যারা সে কবরস্থান যিয়ারত করেন তারা তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেভাবে হুকুম দিয়েছেন সেই শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতেই যিয়ারত করেছেন। সুতরাং তারা কবরবাসীকে সালাম প্রদান করেন ও তাদের জন্য দু’আ করেন। সালাফে সালেহীনের কারো থেকে এমন বর্ণিত হয়নি যে, তিনি সেখানে দু’আর জন্য গিয়েছেন; বরং যা কিছু বর্তমানে সেখানে দু‘আর জন্য গিয়েছেন; বরং যা কিছু বর্তমানে সেখানে ঘটে তা এই পরবর্তী যুগেরই সৃষ্টি।

তৃতীয়তঃ মুয়াল্লা কবরস্থান যিয়ারত করার শরীয়তসম্মত বিধান ও যিয়ারতকারী সেখানে যা বলবেঃ

“প্রত্যেক স্থানের কবর যিয়ারতই শরীয়তসম্মত। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

অর্থঃ “তোমরা কবর যিয়ারত কর কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেবে।” (মুসলিমঃ ২২৫৬)

মক্কায় যে সকল পুরুষ অবস্থান করে তাদের জন্য শরীয়ত সম্মত হল, মক্কার অন্যান্য কবরস্থানের মতই আল-মুয়াল্লা কবরস্থান যিয়ারত করা।

পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য সঠিক মতানুযায়ী কবর যিয়ারত শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

অর্থঃ “আল্লাহ বেশি বেশি কবর যিয়ারত-কারীনিদের প্রতি লা’নত করেন।” (তিরমিযীঃ ৩/৩৭২)

কবর যিয়ারতের হাদীসগুলি দ্বারা যিয়ারতের ব্যাপারে স্পষ্ট হয় যে, কবর যিয়ারতের দ্বারা মুসলমান তিনটি উপকার পেয়ে থাকেঃ

(১) কবর দেখে মৃত্যুকে স্মরণ হয়, তাতে মুসলমান যেন সৎ আমল করে এমন স্থানের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ

অর্থঃ “তোমরা কবর যিয়ারত কর কেননা তা পরকালকে স্মারণ করিয়ে দিবে।” (তিরমিযিীঃ ১০৫৬)

(২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ। কেননা কবর যিয়ারত একটি সুন্নাত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবর যিয়ারত করেছেন। সুতরাং মুসলমান নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণের সওয়াব অর্জন করবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হুকুমে সাড়া দেওয়ারও সওয়াব অর্জন করবে যেমনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

অর্থাৎ তোমরা কবর যিয়ারত কর।

(৩) তার মুসলমান ভাইদের জন্য দু‘আ করে তাদের প্রতি ইহসান ও সাহানুভূতি প্রদর্শন। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে সহীহ ভাবে য়িয়ারতের যে সব দু‘আর শব্দমালা সাব্যস্ত হয়েছে ও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাতে মুসলমানদের মৃতদের জন্য দু‘আ যুক্ত রয়েছে, যা তাদের জন্য উপকারী এবং তারা ইনশাআল্লাহ তা হতে উপকৃত হবেন। আর কবর যিয়ারতকারী তার ভাইয়ের জন্য দু‘আ ও তাদের প্রতি ইহসান করার সওয়াব অর্জন করবে।

মুসলমান যখন কবরস্থান যিয়ারত করবে, তার উচিত সে যেন শরীয়তসম্মত বৈধ সীমায় অবস্থান করে তা যিয়ারত করে। সুতরাং সে মৃতের জন্য শরীয়তের বর্ণিত দু‘আ দ্বারাই যিয়ারত করেব। অতএব বলবেঃ

অর্থঃ “হে মু’মিন কবরবসীগণ আপনাদের প্রতি সালাম, নিশ্চয়ই আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আপনারা যারা অগ্রগামী হয়েছেন ও যারা পরবর্তীতে আসবে, আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন! আমারা আপনাদের জন্য নিরাপত্তা চাই।” (মুসলিমঃ ৯৭৪)

উল্লেখিত শব্দমালায় মৃতের জন্য দু‘আ এসেছে।

চতুর্থতঃ মুয়াল্লায় কবরস্থ কারো কারো স্থান নির্ধারণ সম্পর্কিত বিষয়ঃ

এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে মুয়াল্লা হল, মক্কা বাসীদের কবরস্থান। সেখানে কিছু সংখ্যক সাহাবীকে দাফন করা হয়েছে। সর্বজনবিদীত নিশ্চয় শরীয়ত কোন কবরকে চিনে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিতে উৎসাহিত করেনি; বরং শরীয়ত কোন আলামত দ্বারা চিহিৃত করার মাত্র অনুমতি দেয়, যেমন পাথর দ্বারা চিহিৃত করা। তবে তাতে নির্মাণ কায করা, তার উপর লেখা-লেখি করা নিষেধ। যেমনঃ জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীসে আছে তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমি কবরে বসতে, কবরে নির্মাণ কাজ, প্লাস্টার করতে ও তার উপর লিখতে লিখতে নিষেধ করতে শুনেছি।” (আবু দাউদঃ ৩২২৬, তিরমিযীঃ ১০৫২, নাসায়ীঃ ২০২৭ ও হাকেমঃ ১/৫২৫ তিনি সহীহ বেলেছেন।)

উল্লেখিত আলামত স্থাপনের অর্থ বুঝায় তা অবশ্য নিশ্চিহৃ হয়ে যেতে পারে; কিছুকাল অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর। কেননা কবর চেনা-জানার ব্যপারে শরীয়তের কোন বিধি-বিধানের সম্পর্ক নেই। এ জন্যই মুয়াল্লা কবরস্থানের চিহৃগুলি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাই নিশ্চিতভাবে তা চেনা বা জানা যায় না।

ইবনে যুবায়ের তাঁর ৫৭৮ সনের ভ্রমনে মুয়াল্লা কবরস্থান সম্পর্কে বলেনঃ উল্লেখিত কবরস্থানটি একদল সাহাবী, তাবেয়ী, ওলী ও সৎলোকদের দাফন স্থল। তার লক্ষ্য স্থলগুলো বিলুপ্ত হয়েছে এবং শহরবাসী হতে তাদের নামও মিটে গেছে।

অতঃপর তিনি কিছু সংখ্যক আলেম হতে কতিপয় দলীল বর্ণনা করেন। তারপর বলেনঃ এগুলিই কতিপয় আলেম হতে জানা দলীল। এসবই যেমন দেখছেন বিবেকসম্মত কথা। এর স্বীকৃতি ব্যতীত অস্বীকার করার কোন পথ নেই যে, কতিপয় সাহাবী, তাবেয়ী ও তাঁদের পরবর্তীতে বড়-বড় আলেম ও সৎব্যক্তি যাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয় তাঁরা সেই মক্কা কবরস্থানে দাফনস্থ রয়েছেন; কিন্তু সঠিকভাবে তাঁদের কবরগুলিকে আমরা নির্ধারণ করতে পারব না। আর তাঁদের কবর চেনা বা না চেনাতে কোন উপকার বা অপকারও অর্জন হবে না; বরং তাদের জন্য আমাদের পক্ষ হতে দু‘আ ও ক্ষা প্রার্থনায় তাদের নিকট পৌঁছবে, তাঁরা ভূ-খণ্ডের প্রাচ্যেই থাকুন আর প্রাশ্চ্যত্যেই থাকুন।

পঞ্চমতঃ কোন কোন যিয়ারতকারী যেসব সুন্নাত পরিপন্থী বিষয়ে লিপ্ত হয়ঃ

কবর যিয়ারতকারীর উচিত, সে যেন তার যিয়ারতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম)- এর সুন্নাতী পদ্ধতি পালন করে এবং সে সব বিষয়ে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক হয় যা হবে সুন্নাত পরিপন্থী ও তাকে তা গুনাতে পতিত করবে, বা তার নেকী কমে যাবে। নিম্নে এমন কতিপয় শরীয়ত পরিপন্থী বিষয় উল্লেখ করা হল যাতে কোন কোন যিয়ারতকারী পতিত হয়ে থাকে। যেন যিয়ারতকারীগণ সেগুলিতে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারেঃ

১। কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের উসীলা করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা ও তাদের নিকট সুপাশি তলব করা।

২। কবরস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়াবড়ি। যেমনঃ তাদের সামনে দন্ডায়মান। বিনয়-নম্রতা প্রকাশ ও নিরবতা অবলম্বন করে। এমন বিশ্বাস পোষণ করে যে, এমন করা শরীয়ত সম্মত আদবের অন্তর্ভূক্ত। এগুলো হলো কবরবাসীদের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবড়ি। যা কবরবাসীদের দ্বারা শিরকে পতিত হওয়ার কারণ ও মাধ্যম।

৩। কবরবাসীর জন্য সিজদা ও রুকু করা, অথচ সিজদা ও রুকু ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং তা আল্লাহু ব্যতীত কারো জন্য করা জায়েয নয়।

৪। কবরস্থানের ভিতরে-বাইরে কবুতরের জন্য এমন বিশ্বাস শস্য দানা নিক্ষেপ করা যে, তাতে রয়েছে নেকী ও প্রতিদান। বিশেষ করে তা কবুতরকে খাওয়ানোর মধ্যে বা তাতে বরকত রয়েছে এমন বিশ্বাস। এমন কর্ম নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেননি, না কোন সাহাবা করেছেন আর না কোন তাবেয়ী সালাফে সালেহীন। সুতরাং তা হলো দ্বীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত বিদ‘আত। অনুরূপ এতে খাদ্যের অবমাননা ও পথিককে কষ্ট দেয়া হয়।

৫। সেখানে উচ্চস্বরে বিলাপ করা, মুখে মারা বা গাল চাপড়ানো ইত্যাদি। আর সর্বজনবিদীত এসব কর্ম হারাম; বরং কবীরা গুনাহার অন্তর্ভুক্ত। (আল-মাক্কীর আযযাওয়াজেরঃ ১/৩০৬)

৬। নামাযে কবরকে সামনে করা এবং এ নামাযের “সালাত যিয়ারা” নামকরণ করা অথচ কবরের দিকে নামায আদায় উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে হারাম।

৭। সম্মিলিতভাবে সেখানে দু‘আ ও যিকির, অথচ তা এমন আমল যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম) করেননি, না করেছেন তাঁর সাহাবাগণ না তাবেয়ীগণ।

৮। কবর হতে চুম্বন-স্পর্শ করার জন্য বা বরকত বা রোগ মুক্তি কামনায় অন্য কিছুর সাথে মিশানোর জন্য মাটি গ্রহণ করা।

৯। কবরবাসীকে নিজের হাজত পূরণ ও তাদের দ্বারা বালা-মুসীবত দূর করার জন্য বিভিন্ন ম্যাসেজ প্রদান করা।

১০। কবরের সাথে বরকত হাসিলের জন্য সুতা ও নেকড়া প্যাঁচানো এবং দরজা ও জানালায় তালা লাগান।

১১। অনুরূপ বরকত গ্রহণের জন্য কবরস্থানের দেয়াল, দরজা ও তার মধ্যে যে জিনিস রয়েছে তা স্পর্শ করা।

১২। কোন কোন কবরে পয়সা দেয়া অথচ তা হল, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মান্নাতের অন্তর্ভুক্ত।

১৩। ফাতেহাখানী, কুলখানী, সূরা ইয়াসীন ও সূরা বাকারার শেষ দু‘আয়াতে পাঠ করে মৃতের রূহের জন্য বখশে দেয়া।

১৪। বরকত গ্রহণের আশায় নখ, চুল, দাঁত কবরে পুঁতে রাখা।

১৫। কবরবাসীর নৈকট্য অর্জনের জন্য কবরে আতর, গোলাপ জল ছিটানো। অথচ এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নৈকট্য অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত যা হারাম জায়েয নয়!

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!