“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি”

in dating •  10 months ago  (edited)

template-2-720x340.jpg

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের দৈনিক স্টেটসম্যান এর কলমে-

“একটা ছেলেকে দেখার জন্য রেলস্টেশনে ভিড় জমে যায়। 18 অথবা 19 বছরের এক কিশোর হলেও তাকে রীতিমতো দৃঢ় দেখাচ্ছিল । বাইরে তার জন্যই রাখা এক চার চাকার খোলা গাড়িতে উঠতে প্রথম শ্রেণীর এক রেল কামরা থেকে হেঁটে আসছিল এক উৎফুল্ল কিশোর এর মতো, যে কোন উদ্বেগ জানে না। গাড়িতে নির্দিষ্ট আসনে বসার সময় ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠলো বন্দেমাতরম্ “।

সেই তরুণ সৎ সাহসী বাংলার দামাল ছেলে আর কেউ নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের মৌবনী গ্রামের পূণ্যভূমির ভূমিপুত্র ক্ষুদিরাম বসু। ১৯৮৯ সালের 3 রা ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হয় ক্ষুদিরাম বসুর শিক্ষাজীবন শুরুতে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত কাটে আনন্দপুরের একটি মিডল স্কুলে, তারপর তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে এবং মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে।

কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন।১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বই ‘সোনার বাংলা’ বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং তার লক্ষ্য স্থির করেন সরকারি আধিকারিকদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে। ১৯০৬ সালে কাঁসাই নদীতে বন্যার সময় রণপার সাহায্যে ত্রাণ কাজ চালান। ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল বিহারের মোজাফফরপুরে ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছুঁড়ে তিনজনকে হত্যার দায়ে ক্ষুদিরাম অভিযুক্ত হন। ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট প্রথম বীর বঙ্গ সন্তান ১৮ বছর বয়সি ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর হয়। আমার এই লেখাতে ক্ষুদিরাম বসুর অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে গুপ্ত হত্যার প্রচেষ্টা সম্বন্ধে একটু বর্ণনা করছি। এ কাহিনী অনেকেরই জানা তবুও সেই দিনটায় দুই তরুণ বিপ্লবীর প্রবল সাহসিকতা তুলে ধরার জন্যই এই লেখা। বিশেষত তরুণ বাঙালী প্রজন্মের জন্য।

ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী যথাক্রমে ‘হরেন সরকার’ ও ‘দিনেশ চন্দ্র রায়’ এই দুই নতুন নাম ধারণ করে মোজাফফরপুরে কিশোরী মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এক দাতব্য সরাইখানায় থাকার ব্যবস্থা করেন এবং কিংসফোর্ডের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ওপর নজরদারি করতে থাকেন। তারা দুজন সফলভাবে তিন সপ্তাহ ধরে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যায় রাত সাড়ে আটটা পরে ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে ভুল করে প্রিঙ্গল কেনেডি নামে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের মেয়ে ও স্ত্রীর অবস্থানরত গাড়ির ওপর বোমাবর্ষণ করেন। গুরুতরু আঘাতে কেনেডি মহিলাগনের মৃত্যু হয়। মধ্যরাতের ঘটনার পর সমস্ত রেল স্টেশনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। 25 মাইল হেঁটে বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে ক্ষুদিরাম যখন ওয়াইনি স্টেশনের কাছে একটি চায়ের দোকানে জল চায় তখন শিউ প্রসাদ সিং ও ফতে সিং নামে দুই কনস্টেবল এর হাতে ক্ষুদিরাম পিস্তল, 37 রাউন্ড গোলাগুলি, রেলপথের মানচিত্র, রেলের সময় সারণী সমেত ধরা পড়েন। নবীনতর, প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করা, প্রবল সৎ সাহসী, অত্যন্ত দুঃখ-কষ্ট, বিপদ, মৃত্যু ভয়কে আলিঙ্গন করে নেওয়া বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম কে হাতকড়ি পরিয়ে 1লা মে মুজাফফরপুর থেকে আনা হয়। এই কিশোর বিপ্লবীদের কাহিনী আমাদের সবার জানা উচিত। তাদেরই বলিদানে আজকের স্বাধীন ভারতবর্ষ। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ক্ষুদিরাম বসুর উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। আজকের ভারতবর্ষে ক্ষুদিরামের মতো কিশোরের অত্যন্ত প্রয়োজন। কবির লেখনী সত্য হোক, ক্ষুদিরাম ফিরে আসুক।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!