কি করছেন?
- অপেক্ষা করি।
- কিসের অপেক্ষা।
- দুপুরের খাবারের।
- খাবারের জন্য অপেক্ষা করার দরকার কি? খেয়ে ফেলেন নাকি আজকেও বুয়া আসেনি!
- এসেছিলো।
- তাহলে?
- রান্না করার মত কিছু না পেয়ে এক পাতিল পানি গরম করে রেখে গেছে। গরম পানি খাদ্য হিসেবে তেমন একটা সুবিধার না।
- বাজার করেননি কেন?
- একটু আগে বাজার করা হয়েছে। চাল, বাবা ডাল, আলু, কিছু পেয়াজ।
- বাবা ডাল কি!
- ছোট ছোট লাল লাল রংগের। দেখতে খানিকটা ইয়াবা ট্যাবলেট এর মিনিয়েচারের মত। নাম মনে করতে পারছি না জন্য বাবা ডাল বলেছি।
- ওটা মুশুরের ডাল।
- ও আচ্ছা।
- ও আচ্ছা কি?
- এমনি বললাম।
- এখন কি করবেন?
- অপেক্ষা করবো। রুমমেট সব কিছু বুয়ার গরম করা পানির পাতিলে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নাড়ানাড়ি করছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস রান্না শেষে জিনিসটা খিচুড়ির কাছাকাছি কিছু একটা হবে। আমি খিচুড়ির মত কিছু একটা জিনিসের জন্য অপেক্ষা করছি।
- অপেক্ষা করতে হবে না।
- কেন?
- কারন আজ দুপুরে আমি আপনাকে খাওয়াবো।
- আপনার কাছে কিছু খাওয়া যাবে না।
- আমার কাছে কিছু খাওয়া যাবে না কেন?
- কারন একটা হালকা পরিচিত কাউকে যখন, একজন পুরোটা অপরিচিতা কেউ ভর দুপুরে খাওয়াতে চায় তখন বুঝতে হবে, হালকা অপরিচিত মানুষটার জন্য, পুরোটা অপরিচিতা অনেকখানি মায়া পুষে রাখে। একই সাথে মায়া পুষে রাখে এমন দুজন মানুষ একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়া ভয়ংকর। তখন প্রতি বেলায় তাদের একসাথে খেতে ইচ্ছে করে।
- আমার প্রতি বেলায় এক সাথে খেতে কোন আপত্তি নেই।
- আচ্ছা।
- মনে করে একটা ফ্রিজ কিনবেন। তাতে এক সাথে সপ্তাহের বাজার করে রেখে দেবেন। আমি শুধু শুধু পানি গরম করে রাখতে পারবো না।
- খাওয়ার সময় পাশে বসে গুটুরগুটুর করে কেউ গল্প না করলে আমি খেতে পারিনা।
- অনেক গুলো সুতির শাড়ি লাগবে। সুতি শাড়ির আচঁল কোমড়ে না পেঁচিয়ে আমি গল্প বলতে পারি না।
- যৌতুক হিসেবে আমার একটা তালপাতার পাখা লাগবে। এখানে রোজ দুপুরবেলা কারেন্ট থাকে না।
- আচ্ছা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা এলেই আমি ব্যালকোনীতে দাঁড়িয়ে গলির দিকে তাকিয়ে থাকবো আপনার ফেরার অপেক্ষায়।
- বাকি দিন গুলো?
- বাকি দিন গুলোতেও থাকবো।
- বৃহস্পতিবার কি কোন বিশেষ দিন।
- হুম।
- কেন?
- আজ বৃহস্পতিবার। এই দিনে একজন হালকা পরিচিত এবং একজন পুরোটা অপরিচিতা প্রতি বেলা এক সাথে খাবে বলে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। হলুদ রঙের দেয়ালে বসে থাকা একটা ধুসর রঙের টিকটিকি তাতে সায় দিয়ে বলেছিলো, 'ঠিক ঠিক ঠিক'।