“শুনেছি চাঁদের গায়ে সূর্যের আলো পরে তা পৃথিবীতে জোছনা হয়ে আসে। আমি জানি না চাঁদ কেমন। সূর্য কেমন। কেমন করে সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে ধাক্কা খেয়ে জোছনা হয়ে যায়।”
“তোর পৃথিবীতে কি কোন রঙ নেই?”
“রঙ কি সেটাই তো জানি না। তবে অনেক রঙের নাম জানি। নাম শুনে একটা রঙ খুব ভাল লাগে। হলুদ রঙ। জানিস আমার না খুব হলুদ রঙ দেখতে ইচ্ছে করে। ছুঁতে ইচ্ছে করে।”
“তুই কি জানিস অন্ধকার কেমন?”
“নাতো। অন্ধকার, আঁধার শব্দ গুলো সেই ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছি। কিন্তু বুঝতে পারি না ঠিক। সবাই বলে আমি নাকি যা দেখি সবই অন্ধকার। কিন্তু আমি তো কিছুই দেখি না। আমি যে কি দেখি তাও জানি না।”
অথৈ আমার নতুন বন্ধু। মাসs দু’এক হলো নতুন বাসায় উঠেছি। প্রায় বিকেলেই আমি ছাদে আসি। সব সময় দেখতাম একটা মেয়ে সাদা ছড়ি হাতে ছাদে হাঁটে। সাথে কখনো মেয়েটার মা থাকে। কখনো কাজের মেয়েটা। কখনোবা একা। আমাদের পাশের বাসায় থাকে ওরা। দুই পরিবারে যাওয়াআসা করতে করতেই আলাপ হয় অথৈর সাথে।
খুব কৌতূহলী একটা মেয়ে। সব কিছুতেই জানার তীব্র আগ্রহ। আমার সাথে বন্ধুত্বও হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। তবে অথৈর সাথে বেশি ভাব আমার ছোটবোন বুবুনের। বুবুন স্কুল থেকে ফিরেই ইউনিফর্ম পরা অবস্থাতেই একবার অথৈর সাথে দেখা করে আসে। এখন আমিই অথৈকে ছাদে নিয়ে যাই। সন্ধ্যার সাথে সাথে ঘরে ফিরে আসি। মাঝেমধ্যে বুবুনও থাকে আমাদের সাথে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে অথৈর জগতটা কেমন। কিভাবে দেখে ও ওর মতো করে পুরো দুনিয়াটা। এই যে আমরা যারা ওর চারপাশে থাকি ও কিভাবে আমাদের অনুভব করে। আমাদের নিয়ে ও কেমন আদল গড়ে। জন্ম থেকেই অন্ধ অথৈ। এতো ফুটফুটে একটা হাসি খুশি মেয়ে। মায়াবী চেহারা। অথচ চোখে দেখে না। কেমন জানি করে বুকের ভিতরে।
“কিরে কথা বলছিস না কেনো?”
“এমনি। তুই বল আমি শুনি।”
“আমি তো সারাক্ষণই তোর সাথে পকপক করি। তোর মাথা ধরে না।”
“ধরে তো। কানের পোকাও বের করে ফেলেছিস।”
“হিহিহি! তাহলে তোর অনেক উপকার করেছি বল।”
“থাক হয়েছে। কি আমার উপকার রে। এতো বাচাল মেয়ে আমি জিন্দেগিতে দেখি নাই।”
“তোর জিন্দেগি তাহলে অনেক ছোট। আহারে বেচারা। জিন্দেগির কিছুই দেখলো না।”
“বাজে বকিস না।”
“আচ্ছা তোর সেই টুনটুনি ডাল্লিং এর খবর কি?”
“দেখ মেজাজ খারাপ করাবি না। তুই কি আসলে আমার বন্ধু নাকি শত্রু।”
“হিহিহি! আমি তো তোর দোস্ত।”
“তুই আমার ঘোড়ার ডিমের দোস্ত। তোকে যদি আমি আর কিছু বলেছি দেখিস। তুই একটা শয়তান বেডি।”
“হিহিহি!”
“হাসবি না শাঁকচুন্নির মতো।”
সীমা তাও গা জ্বালানো হাসি দিয়েই যায়। আমি দুইটা টিউশনি করি। একটা ক্লাস দশম এইটের ছেলেকে পড়াই। আরেকটা ক্লাস ফাইভের মেয়েকে। গত মাসে মেয়েটা একটা চিঠি লিখে আমাকে প্রপোজ করে। ভাবা যায় মাত্র ক্লাস ফাইভ। তাও আবার আমাকে। দুনিয়া যে কোথায় যাচ্ছে। ইচ্ছা করছিলো সেই মেয়ের কানের নিচে একটা থাবড়া দেই। এই টিউশনিতে টাকা একটু বেশি পাই। তাই হালকা ঝাড়ি দিলাম শুধু। থাবড়া দিলে টিউশনিটাই যেতো। টাকার মায়া বড় মায়া।
আমরা তো ঐ বয়সে জানতামই না প্রেম কি। আর সেই মেয়ে চিঠিতে লিখছে ওকে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ডেটে যেতে হবে। এরা যে কোন কিসিমের জেনারেশন উঠে আসছে ভাবতেই শিউরে উঠি। চিঠিটা আমি সীমাকে পড়ে শুনিয়েছি। অথৈ শুনে হাসতে হাসতে একবার এদিকে পরে যায় তো আবার ওদিকে পরে যায়। ওর এই হাসি দেখে আমার গা জ্বালা আরো বেড়ে যায়। সীমাকে প্রপোজের কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে। সুযোগ পেলেই খোঁচা মারে।
“আচ্ছা শোন!”
“বল।”
“আর কিছুদিন পরেই তো বর্ষাকাল আসবে তাই না!”
“হ্যাঁ!”
“আমায় একটা জিনিস এনে দিতে পারবি?”
“কি লাগবে তোর বল।”
“কদম ফুল।”
“কদম ফুল?”
“হ্যাঁ! বরষার প্রথম কদম ফুল। দিবি তো এনে?”
“আচ্ছা দিবো।”
“সাথে অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি।”
“কাঁচের চুড়ি?”
“হুম। আমার কাজিন মহুয়া আপু বলেছে আমায়, বরষার প্রথম কদম ফুল ছুঁতে হয় কাঁচের চুড়ি পরে।”
“কি আজগুবি কথা বার্তা। আচ্ছা যা কিনে দেবো। কি রঙের? হলুদ রঙের?”
“উঁহু! তোর পছন্দে কিনে দিস। তোর যেই রঙ ইচ্ছে। তুই যা কিনে দিবি সেটাই পরবো।সীমার চোখে কেমন এক ছলছলানি চাহনী। একটু একটু হাসির ঝিলিক। মেয়েটাকে কেন জানি না হঠাৎ করেই দুনিয়ার সব সুখ এনে দিতে ইচ্ছে হলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আকাশে গোধূলির রঙ যেন সীমার গালে আভা ফেলেছে। কি শান্ত একটা চেহারা। কিছু মানুষ থাকে পৃথিবীতে যাদের দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায়। সীমা আমার কাছে তেমনই একজন মানুষ।
খুব ইচ্ছে করছে ওর হাতটা ধরতে। প্রতিদিনই ধরি ছাদে উঠানামার সময়। আমি ওর সাথে থাকলে ওকে সাদা ছড়ি নিতে দেই না। এ আমার কেন যেন ভাল লাগে না। কিন্তু আজ আমি ওর হাতটা সেভাবে ধরতে চাইছি না। অন্যভাবে চাইছি। কিভাবে সেটা বোঝাতে পারবো না।
“নে ধর!”
বেশ ভাল একটা ঝাঁকি খেলাম সীমা বাড়ানো হাত দেখে। ও কি কিছু টের পেয়েছে!
“কেন বাসায় যাবি?”
“উঁহু!”
“তাহলে?”
“আমি চাইছি বলে।”
অথৈর হাতটা ধরতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার। একটি কাল্পনিক বিষয়।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Congratulations @tariqul95! You have completed the following achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes
Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সাহিত্যটি সত্যিই খুব সুন্দর করে লেখেছেন এখান থেকে কিছু শিক্ষাও পেলাম অন্ধ মেয়েটির জগৎ আর আমাদের জগৎ সম্পর্কে। খুব ভালো লাগলো ভাইয়্যা
Thnx
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ অাপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit