আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০১steemCreated with Sketch.

in facebook •  3 years ago 

কিছুদিন আগে গ্রুপে “চৈতি” নির্মাণের প্রাসঙ্গিকতার ওপর একটি প্রশ্ন ছিল । তথ্য সংগ্রহ করে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি ।
শ্যামলী সৃষ্টির মূলে আছে রবীন্দ্রনাথের কল্পনা ও বাস্তব চিন্তা ভাবনা । গ্রামের বাড়ীর স্থায়িত্বের সমস্যা , স্বল্প ব্যায়ে কি ভাবে গ্রামের মানুষ বাড়ী তৈরী করতে পারে, আগুনের হাত থেকে কী ভাবে তাকে রক্ষা করা যায় এই সব কারণে “মাটীর ঢালু ছাদ যা রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন, সেই নিয়ে প্রথম সার্থক পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৯৩৩/৩৪ সাল নাগাদ “চৈতির” নির্মাণে ।
“চৈতি” প্রধানত স্বল্প পরিসরে সম্পূর্ণ মাটির বাড়ি । পাঠভবনের কাচে, দুটো বড় পথের কোনে গাছের ছায়ায় বসানো হয়েছিল ধাপে ধাপে চাতাল – সিঁড়ি, যাতে লোকে কিংবা আশ্রমিকেরা কিছু সময়ের জন্যে বিশ্রাম নিতে পারেন । আজ ছাত্রছাত্রীদের কাজের নিদর্শন, বিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি রাখা যায় । বাংলার কুটির-স্থাপত্যশৈলী ও ছাদের তল বিভাজন নিয়ে, স্টেবিলাইজ্ড আর্থ ব্লক এবং আলকাতরা মিশিয়ে, সুন্দর ডিজাইনে “চৈতি” গড়ে উঠল । নির্মাণে সুরেন কর ও নন্দলাল বসু খুব বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন । মাটির বাড়ি শুধু নয়, মাটির প্লাস্টার করা দেয়ালের গায়ে রিলিফ ভাস্কর্য, দেয়ালচিত্র দেখা দিতে লাগল কলাভবনের হস্টেলে, নানান বাড়ির গায়ে, ক্যাম্পাসের দেহে, পরিবেশ – অবয়বে । সত্যি বলতে কি, হাজার বছর আগে অজন্তায়, নালন্দায় যে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছিল, তার যেন প্রয়োগ চর্চা গড়ে উঠল শান্তিনিকেতনে, কিন্তু সহজ সরল রূপে । রাঢ় অঞ্চলের মাটির দেয়াল এবং ভাস্কর্য নির্মাণের যে ধারা ছিল, তাকেও গ্রহণ করা হল । সৃষ্টিশীল সমন্বয়ী এমন শিল্প স্থাপত্য আন্দোলনে হস্তশিল্প যুক্ত হল ; এক হিসেবে এও যেন এক নবজাগরণ । সিন্দুসভ্যতায়ও তো মাটির উপাদান ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার হত । নদী মাটির উপাদান থেকে কখনও সম্পূর্ণ বা আধা পুড়িয়ে নানান কৌশলে ইটের শিল্পস্থাপত্য গড়ে উঠেছিল । সুপ্রাচীন ঐতিহ্যময় শিল্পপ্রযুক্তিধারাকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শান্তিনিকেতনে , নির্মাণ ও সৃষ্টিভূমিতে আনলেন । ঐতিহ্য ও আধুনিকতা মিলেমিশে মানুষের কথা ভাববে, এই ছিল তাঁর স্বপ্ন । “চৈতি”র সাফল্য শ্যামলীর মত বড় মাপের গৃহস্থাপত্যের পথ তৈরি করেছিল ।”
তথ্য ও ঋণস্বীকার : “মধু বাতা ঋতায়তে রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্য ও পরিবেশ ভাবনা” – অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!