শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চিকিৎসকের আদেশে দেওঘরে এসেছিলাম বায়ু পরিবর্তনের জন্যে।
প্রাচীর ঘেরা বাগানের মধ্যে একটা বড় বাড়িতে থাকি।
রাএি তিনটে থেকে কাছে কোথাও একজন গলাভাঙা একঘেরে সুরে ভজন শুরু করে, ঘুম ভেঙে যায়, দোর খুলে বারান্দায় এসে বসি।
ধীরে ধীরে রাএি শেষ হয়ে আসে- পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়।
দেখতাম ওদের মধ্যে সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল।
অন্ধকার শেষ না হতেই তাদের গান আরম্ভ হয়, তারপরে একটি দুটি করে আসতে থাকে বুলবুলি, শ্যামা, শালিক, টুনটুনি- পাশের বাড়ির আমগাছে, এ বাড়ির বকুল-কুঞ্জে, পথের ধারের অশ্বত্থগাছের মাথায়- সকলকে চোখে দেখতে পেতাম না, কিন্তু প্রতিদিন ডাক শোনার অভ্যাস মনে হতে যেন ওদের প্রত্যেককেই চিচি।
হলদে রঙের একজোরা বেনে-বৌ পাখি একটু দেরি করে আসতা।
প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে তারা প্রত্যহ হাজিরা হেঁকে যেত।
হঠাৎ কী জানি কেন দিন-দুই এলো না দেখে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম, কেউ ধরলে না তো? এদেশে ব্যাধের অভাব নেই, পাখি চালান দেওয়াই তাদের ব্যবসা-কিন্তু তিন দিনের দিন আবার দুটিকে ফিরে আসতে দেখে মনে হলো যেন সত্যিকার একটা ভাবনা ঘুচে গেল।