কথা বলার ক্ষমতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া সব থেকে শ্রেষ্ঠ তিনটি নিয়ামতের একটি। কিন্তু কথা বলাটা বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আপনি একজন বা একাধিক লোকের সামনে যে দৃষ্টিভঙ্গি বা যে চিন্তা ধারা নিয়েই কথা বলেন না কেন এবং কথাটি যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যেটাই হোক না কেন, আপনার সামনে যে শ্রোতা ব্যক্তি তিনি আপনার বলা কথা গুলোর উপর ভিত্তি করে, ওই ব্যাক্তি তার মনের অজান্তেই নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র খুলে নিজেস্ব যুক্তি ও তর্কের ভিত্তিতে আপনাকে আওয়ামী লীগ পন্থী/ বিএনপিপন্থী /জামাত পন্থী / বামপন্থী / যে কোন একটি রাজনৈতিক দলের লোক হিসাবে বিবেচনা করে ফেলবে। পুরা প্রক্রিয়া তার নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে ঘটে এবং প্রাপ্ত ফলাফলের উপর তিনি শতভাগ কনফিডেন্স থাকেন। ফলে তিনি আপনাকে অমুক দলের লোক হিসাবে নিজ দায়িত্বে তাহার আশেপাশের লোকদের মধ্যে প্রচার করতে থাকেন।
বাংলাদেশের শত শত গবেষণা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর আমরা তেমন কোন গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন পাই না্ কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি ব্যক্তির যে নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে এবং যে নৈপুণ্যতার সাথে এবং নিখুঁতভাবে তারা একজন মানুষে কথার উপর ভিত্তি করে তাকে একটি দলীয় ট্যাগ লাগিয়ে দিতে পারে এটি একটি একটি অভূতপূর্ব ক্ষমতা ও জ্ঞানের ফল যে জ্ঞান একদিনে আমাদের লব্ধ হয়নি, বিভিন্ন বিদেশী ও দেশী চক্রান্তকারী মিডিয়া গুলা আমাদের মাথায় এই পয়জন ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলাকে আমরা বাংলাদেশী হিসেবে দেখি না। আমরা দেখার চেষ্টা করি সে আসলে কোন দলের,- আমার দলের লোক হলে আমার বন্ধু আর আমার দলের লোক না হলে আমার শত্রু। কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ আমার বন্ধু, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা দেখার চেষ্টা করি না। যার কারণে আমরা জাতিগত ভাবে বিক্ষিপ্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছি।
একজন ব্যক্তি ও এ দেশের নাগরিক হিসেবে বা বাংলাদেশী হিসেবে কিছু বলতে পারে বা বলার অধিকার আছে সে কথাগুলো দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য উপকারী এ ধরনের কোন চিন্তা বা সেই কথাগুলো গ্রহণ করার মত মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ভিতরে তৈরি হয় নাই।
আমাদের দেশে ৯৫ ভাগ মানুষই মাজার পূজারী বা কোন বিশেষ ব্যক্তির মুরিদ হওয়াকে অপছন্দ করি। কিন্তু আমাদের মনের অজান্তেই আমরা যে কোন না কোন দল বা গোষ্ঠীর মুরিদ হচ্ছি এটা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। উদাহরণ হিসাবে - আওয়ামী লীগ/ বিএনপি /জামাত/ বাম দল যে যে দলই পছন্দ করুক না কেন তার কাছে শুধুমাত্র তার নিজের দলটাই সকল বিকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে তার কোন ভুল নাই তার কোন অপকর্ম নাই সে সম্পূর্ণ দুধের ধোয় এবং মাসুম বাকি অন্য সকল দল ও দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের কর্মকাণ্ড নর্দমার নালীর মত অপবিত্র , দূষিত ও কলুষিত। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির লোকদের আপনি কি পূজারী বা কার মুরিদ বলবেন?
আমরা যাকে নেতা হিসেবে মানি তাকে আমরা পীররে থেকেও উচ্চ স্থানে বসিয়ে ফেলি তার সকল কর্মকান্ড কাজ ওঠা বসা এমনকি অপকর্মগুলো আমাদের কাছে পবিত্র এবং স্বর্গীয় কাজ হিসেবে মনে করি। আবার আমরা দেখেছি কোন দলের অনুসারীরা তাদের নেতাকে অলি আউলিয়া মনে করে, কোন দল তাদের নেতাকে নবীর সমকক্ষ মনে করে, আবার কোন কোন দল তাদের নেতাকে আল্লাহর মনেনীত বান্দা মনে করে। মনের অজান্তে আমারা আমার নেতাকে কত উঁচু স্থানে বসাইতে পারি সেই কাল্পনিক প্রতিযোগিতায় আমরা লিপ্ত হই।
কিন্তু আমরা একবারও আত্মসমালোচনা করি না। নিজে নিজের নেতাকে বা নিজের দলকে যদি সমালোচনা না করতে পারি তাহলে সেই দলের দ্বারা ভালো কোন কাজ আশা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা সেটি না করে শুধুমাত্র অন্যের সমালোচনা অন্যের দোষ অন্যের কর্ম অপকর্ম থাকুক বা না থাকুক সেটা প্রচার প্রচারণা করা নিয়ে ব্যাস্ত থাকি।
দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের আগে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।