আল-জি’রানাহ মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী একটি স্থান

in hajj •  2 years ago 

আল-জি’রানাহ
প্রথমতঃ জি’রানার পরিচয়:

dscn3219-640x470.jpg

শব্দটি আরবী “জীম” অক্ষর যের, আইন অক্ষর সকূন “রা” অক্ষরটি তাশদীদ ছাড়া। আবার কখনও প্রথম অক্ষর দু’টি যের ও “রা” কে তাশদীদসহ পড়া হয়। এটি মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী একটি স্থান। তবে মক্কা হতে নিকটতম। বর্তমানেও তা এ নামে প্রসিদ্ধ। এটি হারাম সীমানার বাইরে অবস্থিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) এখানেই হুসাইন যুদ্ধের গণীমতের মাল বন্টন করেন। এখানে একটি মসজিদ রয়েছে যা “মসজিদে জি’রানাহ’ নামে পরিচিত। জি’রানা মক্কার হারাম মসজিদ হতে প্রায় ২২ কি:মি: দূরে অবস্থিত। (মু’জামুল বুলদান: ১/১৪২, আল-কামুসুল মুহীত:৩৪৩ পৃ:, আন-নেহায়া: ১/২৬৯, তারীখে মক্কা:১০৫ পৃ: ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত: জি’রানার হাকীকত:

হজ্ব ও যিয়ারত কারীগণ সাধারণত সেখানকার মসজিদ, কূপ ও কবসস্থানের উদ্দেশ্যে যেয়ে থাকেন। নিম্নে সেগুলির রহস্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হল:

(১) মসজিদে জি’রানা:

মসজিদটি মক্কা শরীফ হতে উত্তর পূর্বাংশের ত্বায়েফ (সায়েল) রোডের দিকে রোড হতে ৯.৫ কি:মি: দূরে অবস্থিত। মক্কা বিজয়ের বছর ত্বায়েফ যুদ্ধ হতে ফিরার পর জিলকদ মাসের বার রাত যখন অবশিষ্ট, মঙ্গলবার দিবাগত রাত যে স্থানে হতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) উমরার ইহরাম বাঁধেন, মসজিদটি সে স্থানে নির্মিত। বহুবার এটির সংস্কার হয়।

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জি’রানা হতে ইহরাম বাঁধেন যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গণীমতের মাল বন্টন করেন।

(বুখারী:৩/১১১৬-২৯০১)

মেহরাশ আল-কাবী হতে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) জি’রানা প্রবেশে করেন। অত:পর মসজিদে আগমন করে আল্লাহ যে পরিমাণ তাওফীক দান করেন নামায আদায় করেন। তারপর ইহরাম বেঁধে স্বীয় সওয়ারীতে আসন গ্রহন করেন ও বাতনে সারাফ অভিমুখী হন। (আবু দাইদ:২/১৫৫,১৯৯৮, আল-বানী (রহ:) সহীহ বলেছেন।)

(২) জি’রানা কূপ:

এটি এমন একটি কূপ, বলা হয় তার পানি অতি মিষ্ট। বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম)ই তার হাত মুবারক দ্বারা পানির স্থান নির্ণয় করেন। কথিত আছে যে, তিনি তাঁর বর্শা দ্বারা আঘাত করলে সেখান হতে পানি বের হতে থাকে। ফলে তিনি তা হতে পান করেন এবং লোকেরাও তৃপ্ত হয়। (আল ফাকেহীর আখবার মক্কা:৫/৬৯ ইত্যাদি।)

বর্তমানে কূপটি বন্ধ, বাহিরের অন্য পানি একাকার হয়ে তা ব্যবহারের যোগ্যতা নষ্ট হওয়ার কারণে তার পানি পান করা হয় না। যেমন: স্থাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে এর রিপোর্ট্ এমনই প্রকাশ করা হয়।

৩) জি’রানা কবরস্থান:

এটি জি’রানাবাসীদের কবরস্থান। অন্যান্য কবরস্থান থেকে এর স্বতন্ত্র কোন বৈশিষ্ট্য নেই।

কোন কোন হাজী ধারণা করে যে, সেখানে হুনাইন যুদ্ধের নিহতদের দাফন করা হয়েছে। মূলত: তার কোন বিশুদ্ধতা নেই। কেননা সে যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে এ স্থানের দূরত্ব অনেক, অন্য দিকে তা এক উপত্যকার অন্তর্ভূক্ত।

তৃতীয়ত: কোন কোন হাজী দ্বারা এখানে যে সমস্ত বিদ’আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কর্ম ঘটে থাকে:

কতিপয় হাজী জি’রানায় বেশ কিছু বিদ’আত ও সুন্তাত পরিপন্থী কর্মে লিপ্ত হয়। কারণ হলো: তারা তো এ স্থানের পবিত্রতা ও পৃথক বৈশিষ্ঠ্যের বিশ্বাসী। এর ভ্রান্ততা সম্পর্কে পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে হাজীগন সে সমস্ত বিদ’আত ও কুসংস্কার হতে সতর্ক হয়। সেগুলোর আংশিক নিম্নে ইঙ্গিত করা হল:

১। বিশেষ ইবাদতের নিয়তে সে মসজিদ অভিমূখী হওয়া এবং অন্যান্য মসজিদ হতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিশ্বাস করা।

২। অন্য মসজিদ হতে এ মসজিদের ফযীলত বেশি মনে করা।

৩। সেখানে বেশি বেশি দু’আ করা।

৪। তার ভিতরে-বাহিরে সম্মিলিতবাবে দু’আ করা। অতছ এটি এমন আমল যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) করেননি, না তাঁর সাহাবীগণ না তাবেয়ীগণ করেছেন।

৫। তার দেয়ালে লেখা-লেখি করা।

৬। তার দেয়ালের বরকত গ্রহণ, দরজা স্পর্শ করা এবং তার ধূলো-বালি গ্রহন করা।

৭। বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাসে মসজিদের বিভিন্ন অংশে লিখিত ম্যাসেজ কবিতা, চিত্র স্থাপন করা বা পয়সা রাখা।

৮। কবরের মৃতদেরকে উসীলা হিসেবে গ্রহণ, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা এবং তাদের নিকট সুপারিশ কামনা করা।

৯। কবরস্থ ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি। যেমন: তাদের সামনে দন্ডায়মান। বিনয় নম্রতা প্রকাশ ও নিরবতা অবলম্বন করে। এমন বিশ্বাস পোষন করে যে, এমন করা শরীয়ত সম্মত আদবের অন্তর্ভূক্ত। এগুলো হলো কবরবাসীদের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ী। যা কবরবাসীদের দ্বারা শিরকে পতিত হওয়ারার কারণ ও মাধ্যম।

১০। কবরগুলি হতে ধূলা-বালি গ্রহণ ও তার স্পর্শ করা বা তা অন্য জিনিসের সাথে এমন মনে করে মিলান যে, তা দ্বারা বরকত ও আরোগ্য লাভ হবে।

১১। প্রয়োজন পূরণ ও তাদের দ্বারা বিপদাপদ হতে মুক্ত হওয়ার জন্য কবরবাসীদের প্রতি বিভিন্ন ম্যাসেজ প্রেরণ।

১২। বরকত পাওয়ার আশায় কবরস্থানের দেয়াল, দরজা ও সেখানকার বিভিন্ন জিনিস স্পর্শ করা।

১৩। জি’রানা মসজিদের পানি দ্বারা বরকত গ্রহন আরোগ্যের নিয়ত করা এবং তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন বিশ্বাস করা। অথচ তার বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। না জি’রানা কূপের তার সাথে কোন সম্পর্ক রয়েছে; বরং বর্তমানে তা বন্ধ যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!