হাঁপানি / শ্বাসকষ্ট সমস্যা ভালো করার উপায়

in hapani •  2 years ago 

শ্বাস নিতে অসুবিধা অথবা আস্থামা এমন একটি রোগ যেটি ভালো করতে অনেক সময় লাগে, এমনকি মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্স অর্থাৎ এলোপ্যাথি ঔষধেও এই সমস্যা ভালো করার পার্মানেন্ট ঔষধ তৈরি হয়নি। আস্থামা আমাদের রেস্পেরেটিক সিস্টেম অর্থাৎ শ্বাসপ্রণালির সাথে যুক্ত। যেটিকে কেবল প্রাকৃতিক উপায়ের সাহায্যেই পুরোপুরি ভাবে ঠিক করা সম্ভব। পুরো পৃথিবীতে আজ প্রায় ৩০ কোটি লোকজন আস্থামার সমস্যায় জড়িত। এবং প্রায় আড়াই লাখ মানুষের এই রোগে প্রতি বছর মৃত্যু হয়ে যায়। আসলে এই রোগটি আমাদের কেনো সৃষ্টি হয় এবং কেনো এটি মারনরোগ হয়ে থাকে। আমাদের ফুসফুসের ভিতরকার শ্বাসযন্ত্রের গঠন একটি গাছের শেকড় এর মত হয়ে থাকে। যেটি উপরের দিকে মোটা এবং ভিতর দিকে বাতাস নিয়ে যাওয়া পাতলা নালীর মত হয়ে থাকে। যখন আমরা নিশ্বাস নিয়ে থাকি তখন অক্সিজেন সবার প্রথমে শ্বাসনালীর মোটা ট্রাকিয়া নালীর মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে পাতলা নালী ব্রঙ্কিইয়ন্স এ পৌছায়। এরপরে অক্সিজেন আমাদের রক্তে মিশে গিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড রূপে একই ভাবে বাইরে বের হয়ে যায়। সবথেকে পাতলা ব্রঙ্কাইয়ন্স নালী গুলিই আস্থামার সমস্যার জন্য দায়ী হয়ে থাকে। যে সকল লোকজনদের আস্থামা হয়ে যায় তাদের এই পাতলা নালীতে সবসময় ব্যথা হতেই থাকে যারফলে শ্বাস নিতে আমাদের অসুবিধা হয়ে থাকে। আমাদের ফুসফুসের নালীতে প্রাকৃতিক ভাবেই মিউকাস অর্থাৎ আঠালো জাতিও কফ পাওয়া যায়।যেই গুলি শ্বাস প্রশ্বাসের সময় দূষিত পদার্থ কে শরীরে জমা হতে বাধা দিয়ে থাকে। কিন্তু আস্থামা যুক্ত রোগীদের এই আঠালো কফ জাতিও বস্তু বেশি মাত্রায় সৃষ্টি হয়ে থাকে যারফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। যখন নালিকাতে চাপ বেশি হয়ে যায় এবং এর মধ্যে কফ বা মিউকাস বেশি জমা হয়ে যায় তখন এই স্থিতিতে শ্বাস বাইরে বের করতে ভীষণ অসুবিধা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে ফুসফুসে বাতাস ভর্তি হতে থাকে, শ্বাস ছোট নিতে হয় এবং রোগী দ্রুত হাঁপাতে থাকে। এই পরিস্থিতিকেই আস্থামা এর অ্যাটাক বলা হয়ে থাকে। আস্থামার সমস্যা গরমের থেকে শীত কালে বেশি হয় বছরই রোগীকে প্রভাবিত করতে থাকে। বুকের মধ্যে ব্যথা হওয়া, দুর্বলতা অনুভব করা, মাথার যন্ত্রণা, রাত্রে ঠিক ভাবে ঘুম না আসা, হার্ট গতি বৃদ্ধি পেয়ে যাওয়া, আচমকাই শ্বাস ফুলে যাওয়া এবং শ্বাস নেওয়ার সময় নাক ডাকার মত সমস্যা এই গুলি কিছু সাধারন লক্ষন যে গুলি আস্থামার সমস্যার আগে এবং আস্থামা হয়ে গেলে দেখা দেয়। ভিন্ন ভিন্ন লোকের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন কারনের জন্য আস্থামার অ্যাটাক আস্তে পারে। কিছু লোকজনদের কিছু বিশেষ খাবার যেমন- মাছ, ডিম, বাদাম, সয়াবিন এবং কলার মত খাবার সেবন করার পর শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়ে থাকে। আস্থামা মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে কম বয়সের ছেলেমেয়েদের আস্থামা হওয়ার সম্ভবনা বেশি হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদিক হিসাবে আস্থামা বাত এবং কফ জনিত রোগ। আর কম বয়সে আমাদের শরীরে কফ এর মাত্রা বেশি হয়ে থাকে এবং আমাদের ফুসফুসও দুরবল হয়ে থাকে। অল্প বয়সের ছেলে মেয়েরা ভুল খাবারের বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দুরবল হয়ে পড়ে এবং খুব সহজেই সর্দি-কাশি এর সমস্যা হয়ে যায়। এই সমস্যা গুলি বাড়তে বাড়তে আস্থামার রোগ তৈরি হয়ে যায়। যেহেতু এর এলোপ্যাথিতে পার্মানেন্ট ঔষধ নাই, এই জন্য ডাক্তাররা শুধুমাত্র এর লক্ষণ কে কম করার এবং আস্থামার অ্যাটাক যাতে না আসে তার ঔষধ দিতে থাকে। এইজন্য রোগীকে ঔষধ এর উপরই নির্ভর থাকতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক ট্রিটমেন্ট ই একমাত্র এমন উপায় যার সাহায্যে লক্ষণের সাথে সাথে গোঁড়াতেও এই রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে। কিছু বিশেষ ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলি নিয়মিত ব্যবহার করলে আমাদের শ্বাসনালীকে শক্তিশালী করে এবং এর সাথে যুক্ত সমস্যাকেও ঠিক করে দেয় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই।

তো চলুন আমরা প্রথম উপায় টি জানি। এটি তৈরি করতে আমাদের দরকার হবে- পেঁয়াজ, আদা, তুলসী পাতা এবং মধু। আস্থামার সৃষ্টি হলে পেঁয়াজ বেশি মাত্রায় খাওয়া দরকার। পেঁয়াজে উপস্থিত এনটি ইনফ্লামাটরি উপাদান ফুসফুসের ইনফেকশন কে খুব দ্রুত ভালো করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের দিনে আস্থামার জন্য পেঁয়াজ ঔষধের থেকেও বেশি কার্যকারী হয়ে থাকে। এই ঘরোয়া উপায় টি তৈরি করার জন্য অর্ধেক পেঁয়াজ, আঙুলের সমান আদার টুকরো এবং ৪-৫ টি তুলসী পাতাকে মিক্সারে চালিয়ে এদের চাটনি তৈরি করে নিন। এবং কাপড় বা ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে এটির রস আলাদা করে নিন। এরপর প্রায় অর্ধেক গ্লাস জল কে গরম করে এর মধ্যে তৈরি রস এবং ১-২ চামচ মধু মিশিয়ে দিন। এরপর প্রায় অর্ধেক গ্লাস জল কে গরম করে এর মধ্যে তৈরি রস এবং ১-২ চামচ মধু মিশিয়ে দিন। এই ভাবে এই ড্রিংক তৈরি হয়ে যাবে। আস্থামার সমস্যায় মধুকে অমৃতের মত মনে করা হয়। শুদ্ধ অরগানিক মধু নিয়মিত সেবন করলে ফুসফুসের সাথে যুক্ত রোগ খুব দ্রুত ভালো হতে থাকে। এই তৈরি ড্রিংকটি নিয়মিত প্রতিদিন সকালে নাস্তা করার সাথে সেবন করুন। আদা এবং তুলসী এর রস সর্দি-কাশি, ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাস ফুলে যাওয়ার সমস্যায় খুবই লাভদায়ক হয়ে থাকে। নিয়মিত এই ড্রিংক টির সেবন করলে আস্থামার লক্ষণ ধীরে ধীরে কম হতে থাকে এবং ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে যায়।

এছাড়া পরবর্তী ঘরোয়া উপায় টিকে ইনহেলার এর মত ব্যবহার করতে হবে। এটি তৈরি করতে আমাদের দরকার হবে- মধু এবং ভিমসেনি কপ্পুর। ভিমসেনি কর্পূর আপনি যে কোনো আয়ুর্বেদিক দোকানে পেয়ে যাবেন। এটি সাধারন কপ্পুর এর থেকে অনেক গুন শক্তিশালী হয়ে থাকে। বিশেষ করে সর্দিকাশি এবং শ্বাস ফুলে যাওয়ার মত সমস্যায় এই কপ্পুর খুবই লাভদায়ক হয়ে থাকে। এছাড়া মাথার যন্ত্রণা, বুকের ব্যথায়, নাক বন্ধ হয়ে গেলে এবং হাড়ের ব্যথায় খুবই কার্যকারী একটি ঔষধ। এটি তৈরি করার জন্য ২ চামচ মধুর মধ্যে ২ চামচ ভিমসেনি কপ্পুর কে গুড়ো করে মিশিয়ে দিন।এরপর দুটিকে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিয়ে একটি কাঁচ বা প্লাস্টিকের বোতলে ভরে রেখে দিন। মধু এবং কপ্পুর এর মিশ্রণকে ১ ঘণ্টা ছেড়ে ছেড়ে ঘ্রাণ নিতে থাকুন। এইরকম করলে ফুসফুসের ময়লা দূর হতে থাকে এবং আস্থামার মত রোগ ভালো হতে থাকে। খেয়াল রাখবেন ঘ্রাণ নেওয়া হলে গেলে কাঁচের পাত্র টিকে ভালো ভাবে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ রাখবেন নাহলে এটির কার্যকারিতা কম হয়ে যাবে। এটির নিয়মিত ব্যবহার করলে আস্থামার রোগ পুরোপুরি ভালো হতে থাকে।

আরও একটি উপায় রয়েছে যেটি আস্থামার রোগে হওয়া বুকের ব্যথা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধায় খুবই কার্যকারী হয়ে থাকে। এটি করতে আমাদের দরকার হবে- আদার রস, দালচিনি, লেবুর রস, মধু এবং লাল লংকার পাউডার। লাল লংকার পাউডারের জন্য আমরা বাড়িতে যে লংকা ব্যবহার করা হয় সেটি ব্যবহার না করে এর বদলে কাইন পেপার ( caynne pepper) ব্যবহার করবো। কেনোনা এটি খুবই কার্যকারী হয়ে থাকে। এটি মোটা এবং লম্বা লঙ্কা থেকে তৈরি করা হয়। এটির সেবন করা পেট, কিডনি, লিভার এবং ফুসফুসের জন্য খুবই লাভদায়ক হয়ে থাকে। কায়েন পেপার এর সাথে মধু এর মিশ্রণ সেবন করলে শরীরকে খুব দ্রুত পরিস্কার করতে থাকে। এটি আপনি যে কোন আয়ুর্বেদিক দোকানে অথবা অনলাইন এ খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। অনলাইন কেনার জন্য নিচের ডেসক্রিপশন টি পড়ুন। এই সমস্ত জিনিষগুলিকে মিশিয়ে আমাদের কে একটি ড্রিঙ্ক তৈরি করতে হবে। এর জন্য সবার প্রথম দেড় কাপ জল কে ভালোভাবে বয়েল করে গ্লাসে ঢেলে নিন। এরপরে এই জলের মধ্যে অর্ধেক চামচ কায়েন পেপার পাউডার, অর্ধেক চামচ দালচিনি পাউডার, ১ চামচ আদার রস, ১ চামচ লেবুর রস এবং ২ চামচ মধু কে মিশিয়ে দিয়ে সমস্ত জিনিস গুলিকে পরস্পরের সাথে মিশিয়ে নিন। তাহলেই এই ঘরোয়া ড্রিঙ্ক টি তৈরি হয়ে যাবে। এই ড্রিঙ্ক টিকে প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে চায়ের মত আস্তে আস্তে পান করতে হবে। এটিতে উপস্থিত দালচিনি এবং লেবুর রস জমা হওয়া কফ কে বাইরে বের করে শরীরের মেটাবলিজম কে বুস্ট করতে খুবই কার্যকারী হয়ে থাকে। এর সাথে আদার রস এবং মধু শ্বাসনালীতে আসা ইনফেকশন কে দ্রুত ঠিক কতে সাহায্য করে। এই ড্রিঙ্ক টি ফুসফুসের সমস্যা ভালো করার পাশাপাশি শরীরকে detox অর্থাৎ পরিস্কার করতেও সাহায্য করে। এর ব্যবহারে আমাদের শ্বাস নেওয়ার সমস্যা ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে। এটির কিছু দিন সেবন করার পরে শরীরের এনার্জি দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!