সমগ্র পাকিস্তান যখন চরম রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত, সেই অবস্থায় ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে কতিপয় নেতৃবৃন্দসহ ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসেন। ১৬ মার্চ থেকে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ২২ মার্চ হঠাৎ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা আসেন এবং আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা চলে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। আলোচনা অসমাপ্ত রেখে সামরিক বাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়ে ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ ছিল কার্যত নিরন্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিচালিত একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। ঢাকা নগরী ও এর আশেপাশের এলাকায় হামলার নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরবাব এবং ঢাকা ছাড়া সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশনের দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা। অপারেশন সার্চ লাইট নামক মানবনিধনের লক্ষ্যে পরিচালিত এ মিশনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন কুখ্যাত খুনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান।
প্রবাসী সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ ৮ সদস্য বিশিষ্ট ছিলো
১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাগণ যুদ্ধের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং যুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণের জন্য একটি অধিবেশন বা সম্মেলনে মিলিত হন। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টর ও সেগুলোকে আবার বিভিন্ন সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। মুজিবনগর সরকার লে. কর্নেল এম. এ. রবকে চীফ অব স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকারকে ডেপুটি চীফ অব স্টাফ নিয়োগ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ ভুমিকা রেখেছে এই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১৯ মার্চ, ১৯৭১ দিনটি ছিল বুধবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জয়দেবপুর তথা গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টের বীর সেনা ও জনতা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘জল্লাদের দরবার’ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে ‘কেল্লা ফতেহ খান’ নামক একজন অমানবিক, পাশবিক ও নিষ্ঠুর চরিত্রের মানুষ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ অব নেশনস-এর সদস্যপদ গ্রহণ করে। একারণে (বাংলাদেশের স্বীকৃতি বিষয়ে) ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী পাকিস্তান কমনওয়েলথের সদস্যপদ ত্যাগ করে। পরে অবশ্য, ১৯৭৫ সালে পাকিস্তান পুনরায় সদস্যপদ গ্রহণ করে। পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার।