গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৮-৬৯)
পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে DAC ও SAC ২০ জানুয়ারি সারা পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট আহ্বান করে। ঐদিন সর্বাত্মক হরতাল পালনকালে একজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। তিনি ১১ দফা আন্দোলনের প্রথম শহিদ। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯ ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। ২৪ জানুয়ারি 'গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ ব্যাপক গণ-আন্দোলনের চাপের মুখে আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবসহ অন্যান্য বন্দীদের মুক্তি প্রদান করতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ জনতার সমর্থনে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করে। ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৯ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পকিস্তানের নাম রাখেন বালাদেশ। গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক বলা হয় -তোফায়েল আহমদকে। আসাদ গেটের পূর্ব নাম ছিল -আইয়ুব গেট ।
১৯৭০ এর নির্বাচন
আইয়ুব খান পদত্যাগ করলে ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতায় বসেন। এই দিনে ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি করে ১৯৬২ সালে আইয়ুব প্রবর্তিত ২য় সংবিধান বাতিল করেন। অতঃপর তিনি নতুন এবং ৩য় সংবিধান দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি গণপরিষদ গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় পরিষদে নির্বাচন দেয়ার জন্য ৩০ মার্চ ১৯৭০, ২৭টি অনুচ্ছেদ ও ৩টি তফসিল যুক্ত The Legal Framework Order ( LFO) জারি করেন। নির্বাচনের তারিখঃ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০, জাতীয় পরিষদে এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ১২ নভেম্বর ১৯৭০, গর্কি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় আসনগুলোতে নির্বাচন হয় ১৭ জানুয়ারি, ১৯৭১। আওয়ামী লীগের ইশতেহারঃ ৬ দফা • প্রতীকঃ আওয়ামী লীগ – নৌকা। পাকিস্তান পিপলস পার্টি – তরবারি। আসনঃ জাতীয় পরিষদে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে জনসংখ্যা ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হয়।
জাতীয় পরিষদের আসন বণ্টন
পূর্ব পাকিস্তান | পশ্চিম পাকিস্তান | ||
---|---|---|---|
নির্বাচিত | ১৬২ | নির্বাচিত | ১৩৮ |
সংরক্ষিত মহিলা আসন | ৭ | সংরক্ষিত মহিলা আসন | ৬ |
মোট | ১৬৯ | মোট | ১৪৪ |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের ১১১ নং আসন (ঢাকা-৮) | থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং জয়ী হন। পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে। বাঙালি জাতির ইতিহাসেও এটি প্রথম স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
ফলাফলঃ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে ১৬৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তর দলে পরিণত হয়। পিপিপি ৮৭ আসন পেয়ে ২য়। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ৭৫.১% ও প্রাদেশিক পরিষদে ৭০.৪৮% ভোট পায়। শপথ গ্রহণঃ ৩ জানুয়ারি ১৯৭১, রেসকোর্সে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত সদস্যদের ৬ দফার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য MNA ও MPA দের শপথ পাঠ করান। জাতীয় পরিষদের সদস্যদের MPA ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের MNA বলা হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ১০ জানুয়ারি। অধিবেশন আহবানঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১, ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদে অধিবেশন ডাকেন। কিন্তু ১ মার্চ ১৯৭০ বেলা ১টা ৫ মিনিটে রেডিও ঘোষণায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য অধিবেশন স্থগিত করা হয়।