ব্লকচেইন কি ?
ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি নতুন ধরণের ইন্টারনেটের মেরুদন্ড, যা ব্যাবহার করা যাবে কিন্তু কপি করা যায়না। আসুন বিষয়টিকে আরো সহজ করে বোঝার চেষ্টা করি। মনে করেন, একজন লোক তার গ্রামে থাকা বাবাকে কোন ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা পাঠালেন। এখানে ভদ্রলোক হচ্ছেন প্রথম পক্ষ ও তার বাবা হচ্ছেন দ্বিতীয় পক্ষ ,অন্যদিকে ব্যাংক হল তৃতীয় পক্ষ। তাহলে এই ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন কার্যকলাপ সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। অর্থাৎ দুপক্ষের মধ্যে অর্থ আদান প্রদান করতে যেসব সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন পড়ে তার সবটাই ব্যাংক দিয়ে থাকে। এটাকে আমরা ব্যাংকিং সিস্টেম বলে থাকি। এই ব্যাংকিং সিস্টেম যদি আপনি বুঝতে পারেন ,তাহলে ব্লকচেইন বুঝতে পারাটা আপনার জন্য সহজ হবে। ব্যাংকিং সিস্টেমকে ব্লকচেইনের সাথে তুলনা করতে পারেন কিন্তু ব্লকচেইনের সিস্টেম মোটেও ব্যাংকিং সিস্টেমের মত নয়। মনেকরেন, উপরের ভদ্রলোক ১০ জন কে টাকা পাঠাবেন এবং কয়েকজন একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে কোন এক মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতে পারেন। একসাথে আন্তঃসংযোগ হয়ে টাকা লেনদেনের এই বিষয়টিকে ব্লকচেইনের ভাষায় Open Ledger (উন্মুক্ত লেনদেন)বলা হয় । উন্মুক্ত হওয়ায় পুরো ব্লকচেইন সিস্টেমটি হচ্ছে Decentralized । ১০ জনের আন্তঃসংযোগের বিষয়টি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যেহেতু তারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত তাই একজন অন্যজনের একাউন্ট সম্পর্কে ধারণা রাখে , ব্লকচেইনের আসল সুবিদা এইখানেই কারণ প্রত্যেকটি লেনদেনের সময় সংযুক্ত প্রতিটি একাউন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়। স্বয়ংক্রিয় এই বিষয়টিই Decentralized নামে পরিচিত। যদি মনে করেন যে কেউ ১০০ টাকা পাঠিয়ে ১০০০ টাকা পাঠিয়েছে বলতে পারে- এই জন্য লেনদেনের পুরো সিস্টেমটিকে যাচাই বা ভেরিফাই করতে হয় । এই ভেরিফিকশনের কাজটি যারা করে থাকেন তাদেরকে আমরা মাইনার (Miner) বলা হয়।
সংক্ষেপে ব্লকচেইন —
ব্লকচেইন = ব্লক + চেইন । ব্লকচেইনে প্রতিটি ব্লক এক একটি একাউন্ট যার প্রতিটি লেনদেন চেইন আকারে পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি ব্লক, হ্যাশিং (Hashing) এর মাধ্যমে উচ্চমানের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে যার ফলে কেউই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ক্রিপ্টোগ্রাফিক টেকনোলজি ব্যবহার করে ব্লকচেইন নিয়ে সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালের দিকে কাজ করা হয়, কিন্তু তা সফলতার মুখ দেখতে না পাওয়ার ফলে তার বিস্তার লাভ করতে পারেনি। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের লেনদেনের জন্য ব্লকচেইন টেকনোলজির ব্যবহার শুরু করেন । তার সফলতার ফলেই বর্তমানে ব্লকচেইন এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন।বিটকয়েন হলো ব্লকচেইনের একটি উদাহরণমাত্র এবং ব্লকচেইন এর যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়েছে বিটকয়েন দিয়ে, তাই সহজেই ব্লকচেইনকে বুঝতে হলে বিটকয়েন ট্রান্জেকশন কিভাবে হয় তা দেখা গেলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হয়।
ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইন মূলত একটি P2P নেটওয়ার্ক । যেখানে ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি ব্লকের ডাটা ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকা যেকোনো ব্যাক্তি ব্লকগুলোকে ভেরিফাই করতে পারে। সহজ কথায় ব্লকচেইন হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড ওপেন লেজার ( Distributed Open ledger) । মনেকরেন যে, বিভিন্ন অফিস-আদালতে হিসাব বা তথ্য সংরক্ষনের জন্য একটি বড় খাতা থাকে যাকে বলা হয় লেজার। যা শুধু ঐ অফিসের কর্মরত লোকজন ব্যতিত অন্য কেউ দেখতে পারে না। তেমনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করা হয় তা ব্লকচেইন স্টিমের একটি লেজারে স্টোর হয়ে যায় যা সকলেই দেখতে পারে।
মনেকরেন, যখন আমি কোন ব্যক্তিকে তার ঠিকানায় বিটকয়েন পাঠাবো ,ত তখন আমার এই ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে নেওয়া হবে। আর ব্লকটিকে সিকিউরিটির জন্য একটি (#) হ্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এক একটি ব্লক অপরটির সাথে যুক্ত থাকে এবং প্রতিটি ব্লকে তার পূর্বের ব্লকের এ্যড্রেস সংযুক্ত থাকে ।এভাবেই একটি ব্লক আরেকটি ব্লকের সাথে যুক্ত থাকে। একই সময়ে যত ট্রান্জেকশন হয় তার সকল ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে নেওয়া হয়। যার জন্য অসংখ্য কম্পিউটার কাজ করে এবং প্রতিটি কম্পিউটারেই সেই ব্লকটির একটি করে কপি থাকে। এই াবেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বা চেইনের সৃষ্টি হয়।চেইনের মাধ্যমে যে নতিপত্র জমা হয় এটিকেই লেজার বলে। যে স্থান থেকে আমারা সকলেই লেনদেন গুলো দেখতে পাই।
ব্লকচেইনের সুবিধাসমূহ :
ব্লকচেইন একটি টেকনোলজি খুবই নিরাপদ এবং দ্রুতগামী হয়। নিরাপদ এই কারনে যে, আপনি ব্লকচেইন ব্যবহারে মাধ্যমে যে ট্রান্জেকশন করা হয় তা হ্যাক করে গড়মিল তৈরি করা সম্ভব নয়। মনে করেন ,আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে কাউকে কোন কারেন্সি দিলেন, এই ট্রানজেকশটি সাথে সাথেই সিষ্টেমের সাথে জড়িত সকল কম্পিউটারে পৌছে যায়। কারণ, আপনার ট্রান্জেকশনের সাথে পুর্বের ট্রান্জেকশনের হ্যাস যোগ হয়ে যায়। আর এভাবেই একটি ট্রান্জেকশন হ্যাস অন্য একটি ট্রান্জেকশন হ্যাসের সাথে লিংক হয়ে যায় চেইন সিষ্টেম এভাবে চলতেই থাকে। ব্লকচেইন টেকনোলজিকে হ্যাক করে এর তথ্যের মাঝে কোন গরমিল করতে চাইলে হ্যাকারকে একই সময়ে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে, যা অসম্ভব। কারন,একটি ট্রান্জেকশন তৈরি হওয়া মাত্রই তার তথ্য হাজার হাজার কম্পিউটারে সাথে সাথে চলে যায়। একটি ব্লক তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে কমবেশি ১০ মিনিট এর মত। একটি ব্লকের সম্পূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করতে; হ্যাকারের হাতে ১০ মিনিটের কম সময় থাকবে। আর ১০ মিনিট সময়েরে মধ্যে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করাতে পারা কথাটা যেন হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না। বর্তমান বিশ্বে ব্লকচেইন হ্যাক করা অসম্ভব।
ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা :
ব্লকচেইন হ্যাক করা সত্যিই অসম্ভব যা উপরের লেখা থেকে হয়তো স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন। এছাড়া খুব কম সময়ের মাধ্যে আপনি আপনার লেনদেন সম্পনন করতে পারছেন। ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রিপ্টো কারেন্সির সফলতা দেখে অনেক ধরনের ব্যাংক ব্লকচেইনের মাধ্যমে লেনদেনের পরিকল্পনা নিয়েছে । কিছু কিছু ব্যাংক পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, মানুষ যে কর্মই করুকনা কেন টাকা পয়সার সিকিউরিটি না থাকলে উপার্জন করে শান্তিতে ঘুমানো কঠিন।
সম্পূর্ণ লেখাটুকু পড়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ ।
CC : @abdu.navi03 @fredquantum @dilchamo @shemul21 @imagen @kouba01
ধন্যবাদ