রাধাকুঞ্জ (২য় পর্ব)।

in hive-120823 •  12 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা! আশা করি সবাই ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে আমি রাধাকুঞ্জের ২য় পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। এতো দিন দেরী হওয়ার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। চলুন আর বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক.......

1000006327.png

Edit by canva

আজ গোধূলি লগ্নে মাধবীলতার বিয়ে। কিন্তু আজ কেন জানিনা মাধবীলতার চোখে মুখে আনন্দের চেয়ে বেশি ভয় কাজ করছে। এই ভয়ের কারণটা ও কিছুটা স্বাভাবিক। কেননা এই রাধাকুঞ্জে এসে তার সাথে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল। এই কারণে মাধবীলতা প্রথমে একদমই রাজি ছিল না রাধাকুঞ্জে এসে বিয়ে করতে। কিন্তু তার ঠাকুমার নাকি শেষ ইচ্ছা সেখানে এসেই তার বিয়েটা করুক।

মাধবীলতা ঠাকুরমা অনেকদিন যাবত অসুস্থ। তার এই অসুস্থতার কারণেই এত দ্রুত মাধবীলতার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য অনেক আগেই মাধবীলতা তোর বরকে তার ঠাকুর দাদা ঠিক করে রেখেছিলো। মাধবীলতা ঠাকুরদাদার বন্ধুর একমাত্র নাতি অনিমেশের সাথে। অনিমেশের পরিবারও চলে এসেছে আজকে এই বাড়িতে। প্রথমে তার পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারেনি যে তার বিয়ে এমন একটি ভুতুড়ে বাড়িতে হবে। তবে পরে মাধবীলতার ঠাকুমার কথা ভেবে তারা পরবর্তীতে এ বাড়িতে আসতে রাজি হয়েছে।

1000006323.jpg

আজ সকাল থেকে তার ঠাকুমা খুবই আনন্দিত তার বড় নাতনির বিয়ের জন্য। চার দিকটা একাই দেখছে। নতুন আত্মীয়দের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে যেমন খেয়াল রাখছে তেমনি তার নাতনির বিয়েতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে ও তার কড়া নজর রয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই মাধবীলতার গায়ে হলুদের সময় কাকে যেন কিসব বলছিলেন তিনি। অপু অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে যে আজ তার ঠাকুমা যেন কেমন কেমন করছে।

অপুর কেন জানিনা ঠাকুমাকে আজ কেমন লাগছিল, কিছুটা সন্দেহজনক। অপু অনেকবার মাধবীলতার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সে সুযোগ করে ওঠে পারেনি। এই বাড়িতে অনেক বিশ্বাসঘাতক লুকিয়ে রয়েছে। এখানে কেউ কারো আপন না এটা অনেক আগেই অপু মাধবীলতার কাছ থেকে জেনেছে। মাধবীলতার ছোটবেলায় পুকুরে হঠাৎ তলিয়ে যাওয়া এবং ঠাকুমাই আবার তাকে সেই পুকুরে খুঁজে পাওয়ার পর তার অনেকটা অবাক লেগেছিল।

1000006324.jpg

তাইতো সে তারপরে অনেকবার অনেকভাবে রাধাকুঞ্জে এসেছে, রাধাকুঞ্জের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানতে। অনেকটা মাধবীলতা জেনেছেও। তাইতো সে আপুকে বারবার সতর্ক করেছে। আগে অপুর কেন জানি তার দিদির কথা বুঝতে অনেক কষ্ট হতো কিন্তু সে রাধাকুঞ্জে এসে কেন জানি তার দিদির কথা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাধবীলতার বিয়ের লগ্নে শুরু হতে চলেছে।

মাধবীলতা তার রুমে সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু কেন জানিনা তার আজ বারবার মনে হচ্ছে কিছু যেন একটা খারাপ ঘটনা ঘটতে চলেছে। হঠাৎ তার মনে পড়লো অনিমেশের দাদুও এই বাড়িতে এসেছে আজ এবং সে জানে তার ঠাকুমার সঙ্গে অনিমেশের দাদুর অনেক পুরনো শত্রুতা আছে।

অনিমেশের দাদু এবং মাধবীলতার দাদু আগে একসঙ্গে ব্যবসা করতো। কিন্তু অনিমেশের দাদু নাকি মাধবীলতার দাদুকে শত্রুতা করে মেরে ফেলেছিল এটা মাধবীলতার ঠাকুমার ধারণা। সে শুধুমাত্র তাদের দুজনের দিচ্ছে কারণ মাধবীলতা দাদু অনেক আগেই তাদের বিয়ে ঠিক করে রেখে গিয়েছিল। অনিমেশের দাদুর শ্বাসকষ্ট আছে। সেই সুযোগ নিয়ে মাধবীলতা তার ঠাকুমা লোক লাগিয়ে রাধাকুঞ্জের পাতালঘরে ধুলাবালি মাখা একটি ঘরে অনিমেশের দাদুকে আটকে রেখেছে।

1000006321.jpgSource

মাধবীলতার হঠাৎ কি যেন একটা মনে হলো। সে বউ সাজেই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পাতাল ঘরে গেলো। মাধবীলতা কিছুদিন আগেই যখন এসেছিল তখন সে পাতালঘর সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। এবং কোন এক মাধ্যমে সেই বিষয়টির আচ করতে পেরেছিল। মাধবীলতার অনেক বেশি কষ্ট করা লাগলো না,নতুন তালা দেখেই সে বুঝতে পারল এখানে অনিমেশের দাদুকে আটকে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পাশে থাকা একটি শক্ত রড দিয়ে তালাটি সে ভেঙে ফেললো এবং দাদুকে উদ্ধার করলো।

মাধবীলতা জানতো তার দাদুর মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যুই ছিল। এটা অনিমেশের দাদুর কোন হাত ছিল না। এজন্যই তো সে কোন নির্দোষ মানুষকে মরতে দিল না। এই ঘটনা দেখে তার হঠাৎ মনে হলো তার সাথে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি হয়তো তার ঠাকুমার সাজানো ছিল.....

"ধন্যবাদ সবাইকে"

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই দাদা এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য, আপনার গল্পটি আমি সম্পূর্ণই পড়েছি।
আপনার গল্পের ক্যারেক্টারের মাধবীলতার আজকের বিয়ের দিন, জেনে অনেক ভালই লাগলো পরবর্তীতে মাধবীলতা পাতাল ঘরে গিয়ে দাদুকে উদ্ধার করল এবং সে বুঝতে পারল, তার ঠাকুর মায়ের অতীতে সাজানো নাটক ছিল। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, অতি রোমাঞ্চকর একটা গল্প, যা আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমি আশায় আছি পরবর্তীতে আপনার গল্পের মাধ্যমে আরো অনেক কিছু জানতে পারবো। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

Loading...