১৯৯৯ সালে দ্যা মামি মুভি টি সারা বিশ্বে মানুষের অন্তরে মমি সম্পর্কে যে কৌতুহল ছিল তা পূর্ণ ভাবে জাগিয়ে তোলে।মুভিটিতে আমরা দেখি নায়ক-নায়িকা তাদের ছেলে সহ আরো কয়েকজন।তারা দ্য সিটি অফ দ্য ডেড এ এসে পড়ে।যেখানে তারা না জেনে ইমহোটেপ নামক মমিট কে জাগিয়ে তোলে।যে ছিল অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।মৃত মমি গুলো জেগে উঠে কি ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে তার একটি কাল্পনিক চিত্র আমরা মুভিটিতে দেখেছি।
তবে মমি কিন্তু কাল্পনিক নয়, এটি বাস্তব।এটি তৎকালীন মিশর বাসীর মিশরের ধর্ম বিশ্বাসের এমন একটি রোগ যা আজও সারা পৃথিবীতে গবেষণা ও আশ্চর্যের বিষয়।মিশরকে বুঝতে হলে তার ধর্মকে জানতে হবে।কারণ ধর্ম মিশরের সমগ্র জীবনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।মিশরীয় সংস্কৃতির এমন দিক নেই, যেখানে ধর্মের প্রভাব পড়েনি।মিশরের ধর্ম বড় বিচিত্র।অগণিত দেবতার সমাবেশ সেখানে।
সেখানে অসংখ্য দেবতাদের শ্রেণী বদ্ধ করে বিশ্বাস ও আচার পদ্ধতির মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়নের চেষ্টা কখনও করা হয়নি।চারপাশের যা কিছু রহস্যময় বা ভয়ংকর, উপকারী বা অনিষ্টকর সে সব কিছুকে মিশর দেবতায় পরিণত করেছিল।এমন কি, কুকুর বিড়াল ও মিশরে পূজিত হয়েছিল।প্রত্যেক সম্প্রদায়ের স্থানীয় দেবতা ছিল।সমস্ত সম্প্রদায়ে সৌর দেবতাদের বিশেষ প্রাধান্য ছিল।
সূর্য দেবতা 'রি' সমগ্র মিশরের শ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে আদৃত হয়েছিল।দেবতা ‘রি' স্বয়ম্ভূ , সে স্বর্গ, পৃথিবী, পানি, জীবন, অগ্নি, মানুষ, গবাদিপশু, লতাগুল্ম, মৎস্য প্রভৃতির স্রষ্টা এক কথায়, ‘রি’ মানুষের ও দেবতাদের রাজা।কালক্রমে ‘রি’ দেবতার সাথে ‘আমন’ দেবতার সমন্বয় ঘটেছিল।'আমন' ছিল থীবির স্থানীয় নেতা।
থীবি মিশর রাজ্যের রাজধানী হলে ‘আমন' দেবতার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমন' ও ‘রি’ দেবতাদ্বয় একটি দেবতায় পরিণত হয়ে ‘আমন-রি' নামে পরিচিত হয়।আর একটি সার্বজনীন দেবতা ছিল ‘অসিরিস'।
মিশরীয় ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে অত্যধিক আগ্ৰহ। প্রাচীন মিশর পৃথিবীতে প্রথম ঘোষণা করেছিল যে, মৃত্যুতে শেষ নয়, মৃত্যুর পরেও একটি অস্তিত্ব আছে।অবিনশ্বরতায় বিশ্বাস মিশরীয় ধর্মে গভীর ছাপ ফেলেছিল।মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ধারণা প্রাচীন মিশরীয় জীবনে যেমন প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিল, অন্য কোনও প্রাচীন বা আধুনিক জাতিতে তেমন ঘটেনি।
মিশরীয় জনগণের গভীর বিশ্বাস ছিল যে, মানুষ পৃথিবীতে যেভাবে বেঁচে থাকে, মৃত্যুর পরেও সে তেমনিভাবে বাঁচে।মৃত্যু পরবর্তী অবিনাশী জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য দেহটাকে রক্ষা করা এবং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় রসদপত্র সরবরাহ করা প্রয়োজন।এই বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রাচীন মিশর মৃতদেহকে মমিতে পরিণত করেছিল।
এজন্য প্রথমে নাসারন্ধ্রের মধ্যদিয়ে লোহার চিমটা ঢুকিয়ে মৃতের মগজ বের করে ফেলা হতো।তারপরে মৃতদেহের পেট চিরে নাড়িভুঁড়ি ফেলে দেওয়া হতো।পেটের ভেতরটা মদ দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ভেতরে সুগন্ধি ছড়িয়ে দেওয়া হতো। এরপর পেট সেলাই করে মৃতদেহটা কে নেট্রন নামক রাসায়নিক পদার্থে ৭০ দিন চুবিয়ে রাখা হতো।সত্তর দিন পরে দেহটাকে ধুয়ে সারাদেহে আঠা মাখিয়ে দেয়া হতো এবং মোম লাগানো কাপড় দিয়ে দেহটাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়ানো হতো।
তারপর কাঠের তৈরি ফ্রেমে বন্ধ করে মমিটিকে সমাধি স্তম্ভে স্থাপন করা হতো।হাজার হাজার বছর আগের মমি অবিকৃত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে।এই প্রক্রিয়ায় প্রাচীন মিশর মানব দেহকে অমরত্ব দিতে সক্ষম হয়েছিল বলে ভাবা হয়।কিন্তু মৃতদেহকে অমরত্ব দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি।তাকে খাদ্য পানীয় সরবরাহ এবং তার দৈহিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছিল।প্রথম দিকে অগভীর গর্তে মৃতের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য এবং কিছু খাদ্য পানীয় সহ মমিটিকে সমাহিত করা হতো এবং মাটি চাপা দিয়ে একটা ঢিবির সৃষ্টি করা হতো।
পরবর্তীকালে ফারাও ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মৃত দেহগুলো রক্ষার জন্যে বিশালাকার সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল।সমাধি স্তম্ভে অনেক হলঘর ও কুঠুরী ছিল।এগুলোকে নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাদ্য, পানীয় ও বিলাস ব্যসন দিয়ে ভরে দেওয়া হয়েছিল।সমাধি স্তম্ভের প্রবেশপথ এমনভাবে গোপন রাখা হয়েছিল, যেন চোর ডাকাত ঢুকতে না পারে।বিশালাকার এই সমাধি স্তম্ভগুলো পিরামিড নামে বিখ্যাত।
একটি মমির ব্যান্ডেজ প্রায় একটি পেশাদার বাস্কেটবল কোর্টকে আবৃত করতে পারে। অনেক মমিকে তাদের অন্তর্বাস দিয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল।মিশর ধর্মের পেছনে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছিল।পুরোহিত শ্রেণীর ভরণপোষণ এবং মন্দির ও সমাধিস্তম্ভ নির্মাণে রাষ্ট্রের ঐশ্বর্য ও মানুষের শ্রমের একটি বিরাট অংশ নিয়োজিত হয়েছিল।পুরোহিত শ্রেণীর উচ্চ মর্যাদা ছিল।কিন্তু মানুষকে নৈতিক শিক্ষাদানে তাদের আগ্রহ ছিল না।
মিশরীয় দের ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে অর্থলোভী পুরোহিত শ্রেণী জাদু টোনা, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক ও কবচ মাদুলি বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।জাদুমন্ত্রের সাহায্যে অমঙ্গল রোধ করা যায়, পাপ স্খলন করা যায়।এমনকি পুরোহিত মন্ত্র পড়ে পারলৌকিক শান্তির পথে সমস্ত প্রতিবন্ধক দূর করতে পারে।ফলে ধর্ম জাদুবিদ্যায় পরিণত হয়েছিল এবং মানুষের জীবন জাদু মন্ত্র, ঝাড়ফুঁক, কবচ মাদুলিতে ঢেকে গিয়েছিল।মন্ত্রের দ্বারা কার্যসিদ্ধি হয় ফলে সৎ জীবন যাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়নি।তাই মিশরীয় ধর্মে ন্যায় নীতিবোধ গড়ে ওঠেনি এবং ধর্ম নৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে বিকাশ লাভ করেনি।
মমি ও পিরামিড সম্পর্কে বেশ সুন্দরভাবে আপনি আলোকপাত করেছেন পিরামিড সম্পর্কিত একটি পোস্ট দুইদিন আগেও আমার চোখে পড়েছিল এবং আমি সেখানে কমেন্ট করেছিলাম মমি ও পিরামিডের রহস্য যখনই পড়ি তখন মনে পড়ে ইউসুফ জুলেখার নিয়ে বানানো সিরিয়ালের কথা। সেখানে খুব সুন্দরভাবেই গণনা দিয়েছে মমি সম্পর্কে।
আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি আর্টিকেল আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit