নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমার লাইফে প্রথম একটি অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে সমস্ত কিছু ধাপে ধাপে ছবি তুলে রেখেছিলাম। যদিও এটার ফলাফল যে এতটা বাজে হবে ,আমি বুঝতে পারিনি। আমি এর আগে কখনো নেল এক্সটেনশন করিনি। আমাদের ছোটবেলাতেও আমি কোনদিনও দেখিনি নেল এক্সটেনশন করতে কাউকে।
বিগত কিছু বছর ধরে আমার বন্ধুদের এবং যারা বিয়ে করতে চলেছে তাদের দেখছি নেল এক্সটেনশন করতে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার ভীষণ ভয় ছিল ।ভয়ের কারণ এটাই যে একবার যদি নখগুলো এতটাই টাইট ভাবে বসানো হয় যে, কোথাও আঘাত পেলে অরিজিনাল নখ সহ আর্টিফিশিয়াল নখ উঠে যাবে। এই ভয়ে আমি কখনো সাহস পেতাম না।
বেনারস যাওয়ার আগে বারবার ইচ্ছা করছিল একবার নেল এক্সটেনশন করে দেখি। আমি কখনোই নখ বড় রাখতে পারি না ।কারণ আমার অসুবিধা হয় ।তাই ভেবেছিলাম ছোট করে সেপ রাখবো। কিন্তু কার কাছে করবো বুঝতে পারছিলাম না। আর অনেকেই ফোন ধরছিল না ওই সময়। আমার পাগলামি হঠাৎ করেই হয়। তবে এত তাড়াহুড়োর মধ্যে দিনের দিন ,কোথা থেকে লোক পাব ,বুঝতে পারছিলাম না।
মোটামুটি দুপুর বারোটা অবধি খোঁজাখুঁজি করেছি। যারা যারা নেইল এক্সটেনশন করেছে তাদেরকে ফোন করেছি। তার মধ্যে সবথেকে প্রথমে ছিল পিংকি দিদি। আর আমার বান্ধবী অনামিকা। কিন্তু পিংকি দিদির রিসেন্ট এনগেজমেন্টের জন্য প্রথমবার ওর কাছ থেকে আমি সমস্ত গল্প শুনেছিলাম, এছাড়া ও পোস্টও করেছিল ।
পিঙ্কি দিকে ফোন করার সাথে সাথে সেই মেয়েটার নাম্বার দিল। আর ওদিকে অনামিকা কিছুতেই ফোন ধরছিল না। অনামিকা যার কাছে করে সে কৃষ্ণনগরের অর্থাৎ আমাদের শহরের ।তার বাজেট মোটামুটি হাজার টাকা। আর পিংকি দিদি,যার কাছে করে এসেছে সে মোটামুটি ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মতো নিয়ে নেয় ।
সেদিনকে কারোর খোঁজ না পেয়ে শুধু পিংকি দিদির র সাজেস্ট করা ওই বোনটাকে আমাকে ডাকতে হলো ।বোনটার বাড়ি কৃষ্ণনগর থেকে মোটামুটি আধঘন্টা দূরে। বাইকে আসতে বেশ সময় লাগে। আর বাসে তো তার থেকে বেশি ।ওর বাড়ির দিগনগরে। ওকে সাথে সাথে কনফার্ম করে চলে আসতে বললাম।
এদিকে বাড়িতে যদি আমি তিন ঘন্টা ধরে বসে এসব করি । বাড়ির সবাই রীতিমতো ক্ষেপে যাবে। কারণ যাওয়ার আগের দিন প্রচুর কাজ থাকে। বাড়িতে চারিদিকে অগোছালো হয়ে আছে এবং সমস্ত কিছু যাওয়ার জন্য গুছিয়ে নিতে হচ্ছে। এ কারণে পিসিকে ফোন করে পিসির বাড়ি চলে গেলাম।
একটু পরে ওই বোন তার একজন পার্টনারের সাথে চলে আসলো আমার পিসির বাড়িতে। তারপর ধীরে ধীরে নেল এক্সটেনশন করা শুরু হল। সে প্রথমেই আমাকে বলে নিয়েছিল যে, ওর প্রায় তিন ঘণ্টার মতো লেগে যাবে। আমি তখন বুঝতে পারিনি যে কেন এতটা টাইম লাগবে। কিন্তু যখন কাজ শুরু হল আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারলাম। অনেক ইলেকট্রিক্যাল মেশিন আর নেল এক্সটেনশন করার জন্য আর্টিফিশিয়াল নেল ,হরেক রকমের নেল কালার নিয়ে এসেছিল ও।
কিভাবে নেল এক্সটেনশন করা হলো |
---|
প্রথমে নখের চামড়া গুলোকে পিছনের দিকে একটা নেল টুলসের মাধ্যমে সরিয়ে নিচ্ছিল। এর সাথেই শুকিয়ে যাওয়া চামড়া গুলোকে কেটে নিচ্ছিল।
সেদিন ছিল শনিবার। আমি শনিবার সাধারণত নখ কাটি না। এমনকি নিরামিষ খাই শনিবারটাকে আমি সত্যি খুব ভালোভাবে মেনে চলি ।কিন্তু সেদিনকে আমাকে সমস্ত নখ কাটতে হলো ।যা নখ ছিল আমার ,সব একদম গোড়া থেকে ও কেটে দিল। যাতে ও ভালোভাবে আর্টিফিশিয়াল নখগুলো বসাতে পারে। যদি নখ থাকা অবস্থায় নখ রাখা হয়, তাহলে খুব ব্যথা লাগে। কারণ দিনে দিনে নখ বাড়তে থাকলে চামড়ায় টান পড়তে থাকে ।
একটা ইলেকট্রিক মেশিন এর সাহায্যে নখের তেলগুলো ঘষে ঘষে ও তুলে দিচ্ছিল । নখের উপর অয়েল থাকলে কিছুতেই নখ বসবে না। সব থেকে মজার ব্যাপার ওই সময় আমার আঙ্গুলগুলোতে খুব সুরসুরি লাগছিল আর আমি কিছুতেই হাসি আটকাতে পারছিলাম না।
এসব করার পরে আস্তে আস্তে নখগুলোকে আমার হাতের নখের মাপ অনুযায়ী খুঁজে খুঁজে বার করলো আর্টিফিশিয়াল নখের বাক্স থেকে। তারপর নখের আঠা দিয়ে আমার আসল নখের সাথে আটকে দিল । সুন্দরভাবে আটকানো হয়ে যাওয়ার পর আমি কতটা পরিমাণে লম্বা চাই, কি শেপের নখ চাই ,ওই নখের সেপ দিতে লাগলো।
শেপে আনার পরে আবারো একটা ওরকম জিনিস দিয়ে নখের মাথাগুলোকে ঠিকঠাক ভাবে ঘষে নিল। যাতে আসল নখ আর আর্টিফিশিয়াল নখের মাঝে কোনরকম গ্যাপ না থাকে। এরপর শুরু হলো বিরক্তিকর একটা কাজ। নখের ওপরে জেল বসিয়ে বসিয়ে নখের চারিদিকে স্প্রেড করছিল তুলির সাহায্যে । তারপর বারবার মেশিনের মধ্যে অর্থাৎ ইউবি লাইটের মধ্যে হাত রাখতে হচ্ছিল শোকানোর জন্য।
আবারও ওকে রিপিট করতে হচ্ছিল।কতবার যে এরম ভাবে করতে হয়েছে ,তা ধারণার বাইরে। মোটামুটি এসব করতেই প্রচুর সময় লেগেছে। নখ ঠিকভাবে সেট হয়ে যাওয়ার পরে। আমি যেমন ভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই ও কালার বানিয়ে নিলো। তারপর সেই নেল কালার আমার নখে পরিয়ে দিল। এর সাথে আমি রিং ফিঙ্গারে যেমন ডিজাইন চেয়েছিলাম সেরকম ডিজাইন করে দিল।
সবশেষে ও নিজের ফেসবুকের জন্য আমার হাতের কিছু ছবি তুলে নিল। এর সাথে একটা কাস্টমার রিভিউ ভিডিও আমার মারফত বানিয়ে নিলো।
রিভিউ |
---|
ওর কাছে নেল এক্সটেনশন করে আমার মোটামুটি লেগেছিল ,তবে সবথেকে খারাপ লেগেছিল দেখে যে নখের কিছু কিছু জায়গা ফুলে ছিল। জেলের এতটা মোটা লেয়ার ও ইউজ করেছে যে দেখতে বাজে লাগছিল। যদিও আমি অতটা গুরুত্ব দেইনি তখন।
তবে তার মধ্যে এই বন্ধুদের সাথে যখন আমার দেখা হল, ওদের নেল এক্সটেনশন দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম যে আমার নখের জেল বেশি ব্যবহার করেছে। একারণে নখগুলো এরকম ফুলে ফুলে আছে। বিষয়টা আমার ভীষণ বাজে লাগছিল ওই মুহূর্তে। ঘুরতে যাওয়ার আগে এখন কিছু করার নেই, তাই ঘুরতে চলে গিয়েছিলাম ।
ফিরে এসে দুদিন পরেই দেখছি আপনা থেকে নখ গুলোর একটা কোণা থেকে উঠতে শুরু করেছে। সেদিন আমি পুরো অবাক ।কারণ ৬৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে ,হাতে সাত দিনও হয়নি ।এই অবস্থায় কি করে নখগুলো উঠে যায়। তাহলে তো নেল এক্সটেনশন করাই বেকার।টাকাটাও জলে গেল।
ভারতীয় ৬৫০ টাকা = অলমোস্ট ৫০ স্টিম
তাই সত্যি কথা বলতে এই প্রথম নেল এক্সটেনশন করার অভিজ্ঞতা আমার খুব বাজে ।
যাইহোক পরবর্তী ক্ষেত্রে ইচ্ছা আছে যখনই করাই নাহ কেন, খুব ভালো একজনের কাছ থেকে করাবো। পিংকি দিদির ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা ঘটে নি ,সেটা আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিল ।তাই হয়তো আমার এতটা সমস্যা হচ্ছিল। আপনাদের সাথে সমস্ত কথা শেয়ার করে অনেক ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
সত্যি বলতে, আমি কখনও নেল এক্সটেনশন নিয়ে এতটা জানতাম না। আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি। আপনার পোস্টটি পড়ে যতটুকু জানতে পারলাম নেল এক্সটেনশন অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit