নমস্কার বন্ধুরা। গতকালকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করেছিলাম আমার কলকাতা যাওয়ার কথা। ঈশান কে ডাক্তার দেখাতে কলকাতায় যেতে হয়েছিল, এবং তার সাথে জার্নির মুহূর্তগুলো আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করেছি। সাথে বলেছিলাম একটি অস্বাভাবিক কাণ্ডকারখানা ঘটেছিল । সেটা আপনাদের সকলের সাথে ভাগ করে নেব। তাই আজকের পোস্টে আমি সেগুলোই লিখতে চলেছি।
আশা করছি উপরের ছবিটা দেখে বুঝতে পেরেছেন কতটা বড় ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়েছি। বাবার কাছে ফোন আসে । আমার যে পিসেমশাই গাড়ি চালায় সে ফোন করে, সে জানায় যে পার্কিং এ গাড়ি ছিল। এবং গাড়ির কাজ এরকম ভেঙে গেছে। অ্যাপোলোতে থাকা অবস্থায় ফোনে এসব শুনে বুঝতে পারিনি যে কতটা বড় কিছু হয়েছে। পরে যখন বেরিয়ে এসে , গাড়ি আমাদের পিক আপ করতে আসলো। গাড়ির কাজ দেখে আমি হতভম্ব।
কি করে এরকম হলো, জিজ্ঞেস করাতে , তিনি উত্তর দিতে লাগলেন গাড়ির পেছনের কাঁচ বাস্ট করেছে হয়তো। উনি নাকি ওই সময় গাড়ির কাছে ছিলেন না। যেহেতু অ্যাপেলোতে পার্কিং পাওয়া যায়নি তাই গাড়িটা অন্য জায়গায় পার্কিং করতে হয়েছে সেটা আমরা আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু এই ঘটনা কি করে হলো তা উনি নিজেও বলতে পারছিলেন না। এরকমভাবে কাজ তখনই ভাঙতে পারে যদি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খায়। আমার যতদূর মনে হয় পার্কিং করতে গিয়ে কোন জায়গায় বিশাল বড় ধাক্কা খেয়েছে। এবং হয়তো মনে ভয় থাকাতেই উনি ঠিকভাবে বলতে পারছেন না।
আমি ,বাবা,মা এবং আমার পরিবারের সকলেই খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা বেশি ঝামেলা পছন্দ করি না। তাই প্রথমেই গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলাম পাশেই সাইনি hyundai শোরুমে। আমাদের গাড়ি মডেল হল আই টোয়েন্টি এসট্রা। গাড়ির পিছনের কাচ ভীষণ পরিমাণে মোটা থাকে।। ডবল লেয়ার থাকে। এবার যে ঘটনাটা ঘটেছে তা একদম অস্বাভাবিক। যাইহোক আমরা কোনরকমে গাড়ির ওয়াকসপ থেকে গাড়ির পিছনের কাচের জায়গাটুকু নিতে একটি মোটা প্লাস্টিক লাগিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কারণ কাঁচের জায়গাটা খোলা থাকলে গাড়িতে পুরো রাস্তার ধুলোগুলো ঢুকতো। এর সাথে এসি চালানো যেত না। যাইহোক যা হওয়ার হয়ে গেছে, তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে আমরা খাওয়া-দাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ভি আইপি রোডের ওপরে একদম দারুন একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম। মনে হয় ওটা মা ফ্লাই ওভার। যাইহোক রেস্টুরেন্টটা ভালো মনে হলো। তাই আমরা ওখানে খাওয়া দাওয়া করার কথা ঠিক করলাম ।
গাড়ি পার্কিং এর জায়গাটা একদম খাওয়ার জায়গা থেকে দেখা যাচ্ছিল। তো এদিক দিয়ে খুব নিশ্চিন্ত ছিলাম। কারণ এত বড় একটা আঘাত হওয়ার পর খুব ভয় লাগে। আমরা রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবার অর্ডার করে দিলাম। মটন পাসিন্দা, তন্দুরী রুটি, বাটার নান, বাটার পনির মশলা, হাক্কা নুডুলস। খাবারের কোয়ালিটি খুবই ভালো ছিল। তবে পরিমাণ খুব কম। আমাদের সব মিলিয়ে ১৭০০ টাকা খরচ হয়েছে রেস্টুরেন্টে।
খাওয়া দাওয়া ভালো ভাবে হওয়ার পর আমরা আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়িতে থাকা অবস্থায় বাবা আমাদের শহরের hyundai শোরুমে ফোন করে সমস্ত ঘটনাগুলো বলছিল ওদের একজন স্টাফকে। ওরাও ব্যাপারটা অস্বীকার করল যে এটা বাস্ট করে কখনোই সম্ভব নয়।। কোন রকম ভাবে গাড়িটা ধাক্কা খেয়েছে বাজেভাবে। যাইহোক আমাদের সবার মন মেজাজ খুবই খারাপ ছিল।
চাকদাতে এসে আবার আমরা সকালে যে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিলাম সেখানে ঢুকলাম। অর্থাৎ যাওয়ার সময় যে রেস্টুরেন্টে আমরা ব্রেকফাস্ট করেছিলাম। তখন আমরা চা খেলাম। আর আমি কোল্ডড্রিংস কিনেছিলাম। ১০ মিনিটের দিক নিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা হলাম। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত নটা বেজে গিয়েছিল। আমরা ওখান থেকেই হয়তো ছটা /সাড়ে ছটা নাগাদ বার হয়েছিলাম।
সেদিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি খুব শখের জিনিস। আমাদের আগের গাড়িটা এতটা সমস্যা ফেস করেনি, যতটা এই গাড়িটা ফেস করে। এই গাড়িটা কেনার পর থেকেই অনেক ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।। আমি নিজেও এই নিয়ে খুব চিন্তিত। পরের দিন সকালেই বাবা গাড়ি আমাদের শহরের হুন্ডাই শোরুমে দিয়ে এসেছে। ওরা দু সপ্তাহের মধ্যে আবার আমাদের গাড়ি ঠিক করে দিয়ে ব্যাক দেবে।
রাস্তাঘাটে চলতে গেলে কখন যে কি হয়ে যায় তা সত্যিই আমাদের জানার বাইরে। হয়তো এই ঘটনাটা আমাদের সেদিন ভাগ্যে লেখা ছিল। আমার ইচ্ছা আছে গাড়িটা ঠিকঠাক ভাবে হাতে পেয়ে গেলে আমাদের কৃষ্ণনগরেরই একটি বিখ্যাত মায়ের মন্দির আছে, সেখানে গিয়ে পুজো দিয়ে আসবো।