নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি নার্সারিতে কাটানো কিছু মুহূর্ত।
Valentines day তে ফুল কিনতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। গোলাপ ফুলের যা দাম চাইছিল ,আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম ।মানছি সেদিনকে একটু ব্যবসা করতে হবে। আর ফুলের ব্যবসায়ীরা সেদিনকে একটু বেশি করেই দর চাপায়। তাই বলে আকাশছোঁয়া দর। সেটা একদম ভাবা যায় না । দামাদামি করলেও কমাচ্ছিল না ওরা।
তার মধ্যে থেকে আবার অনেকেই ফুল কেনে। আমিও মাঝেমধ্যে কিনে থাকি ।যতই দাম হোক না কেন ।কিন্তু সেদিনকে কিছুতেই মন চাইলো না। ওই ১০০ টাকা দামের গোলাপ কিনে অবশেষে পাঁচ দিন পর মরে যাবে। সেটা একদম সহ্য হবে না। কারণ বেশ কিছুদিন আগেও আমি কিছু গোলাপ কিনেছিলাম। ভালো দাম দিয়ে। সেগুলোও থাকেনি ।তাই আমি ঠিক করলাম এবার আর ফুল কিনব না। ফুলের গাছ কিনব।
কিন্তু এই প্ল্যান করতে করতে অনেকটা বেলা হয়ে গিয়েছিল । আগে থেকে গাছ কেনার প্ল্যান থাকলে আমরা নার্সারিতে চলে যেতাম ,কিন্তু সেদিনকে আমি আর ও মিলে আইসক্রিম পার্লারে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম বলে সেদিন গাছ কেনা হয়নি।
যদিও বিকেল বেলার দিকে আমার মা অনেকগুলো গোলাপ ফুল কিনে এনেছিল। valentines ডের পরের দিনকে তাই আমি আর আমার পার্টনার মিলে চলে গিয়েছিলাম নার্সারিতে। কৃষ্ণনগরের মধ্যে অনেক নার্সারি আছে ।তবে সবথেকে বড় নার্সারি হলো নদীয়া নার্সারি ।এখানে আমি বেশিরভাগ সময় আসি । এখানে আসতে আমার বেশি ভালো লাগে।কারণ নার্সারিটা বেশ বড় জায়গা জুড়ে, ঘুরে ঘুরে দেখার মতন এখানে অনেক কিছু আছে। অনেকেই এখানে সময় কাটাতে আসে। ফুলের গাছ দেখতে আসে ।কিনতেই যে হবে এমন কোন ব্যাপার নেই।
পিটুনিয়া |
---|
এই নদীয়া নার্সারীর আজকে ভীষণ ভালো অবস্থা, লোকের মুখে শুনেছি একটা সময় আমাদেরই পোস্ট অফিসের মোড়ে খুব ছোট্ট একটি দোকান করে ওরা গাছ বিক্রি করতো। আর ওই করতে করতে আজকে এতটা বড় প্লট কিনে নার্সারি তৈরি করতে পেরেছে। এখন ওদের গাছ বড় বড় গাড়ি করে সাপ্লাই যায় বাইরে। ওদের নিজস্ব গাড়িও আছে অনেক। শুধুমাত্র গাছ সাপ্লাই করার জন্য।
প্রথমে গিয়ে আমার খুবই ভালো লাগলো গেট দিয়ে ঢুকেই কাগজ ফুলের গাছ গুলো দেখে। আমি কাগজ ফুল খুবই পছন্দ করি। গত বছরে আমার পার্টনার আমাকে দুটো কাগজ ফুলের গাছ কিনে দিয়েছে। আর দুটোই খুব মিষ্টির কালারের। মাঝেমধ্যেই আপনারা আমার পোস্টে সেটার ছবি দেখেছেন ।
ভারবেনা |
---|
এবারও গিয়েই আমার কাগজফুলগুলোর দিকে চোখ যাচ্ছিল। অনেক ধরনের কাগজ ফুলের গাছগুলো যখন একসাথে থাকে ,দেখতে অপূর্ব লাগে ।ভবিষ্যতে যদি সময় সুযোগ পাই, অবশ্যই সব রকমের কাগজ ফুলের গাছ বাড়িতে সুন্দর করে লাগাবো। আসলে গাছ লাগালেই তো নয় ,তার যত্নের ব্যাপার আছে। আর আমার বাড়িতে গাছের যত্ন আমার মা এবং কারখানার স্টাফরা করে থাকে। এ কারণে কোন গাছ কিনতে হলে আগেই প্রথমে মাকে জিজ্ঞেস করে নিতে হয়।
কসমস |
---|
যেহেতু ওকে আমি আগের দিন থেকেই বলেছিলাম কুন্দ ফুলের গাছ নেব ।তাই প্রথমে ঢুকে কাগজফুল দেখলেও কুন্দের খোঁজ করতে লাগলাম। কুন্দ ফুলের চারা গাছ ওখানকার স্টাফরা দেখিয়ে দিল। মাত্র ৩০ টাকায় একটি কুন্দ গাছ। তাহলে ভাবুন তো ,ফুল কেনার থেকে গাছ কেনা কত ভালো ।৩০ টাকায় একটা গাছ কিনে ফেললাম। ভারতীয় ৩০ টাকা = ২ steem।
যেহেতু শীত ছেড়ে গেছে ,বসন্ত আসছে ।তাই এই সময় অফুরন্ত ফুল থাকে ।শীতের ফুল প্লাস বসন্তের ফুল। তাই নার্সারি খুব সুন্দরভাবে সেজে ওঠে।
গাঁদা |
---|
ওখানে গিয়ে অনেক ধরনের ফুল দেখেছি ।এই সব কটা ফুলই আমার বাড়িতে এক সময় ছিল ।কিন্তু এখন পরিচর্যার অভাবে কোন কিছুই নেই। আজ থেকে দু বছর আগেও গাছগুলো আমার বাড়ির ছাদে অথবা উঠোনে লাগানো ছিল ,আর ঠিক এতটাই ফুল দিত। তাই ওদের দেখে আমার খুব মন খারাপ করছিল। আমি যে কটা ফুলের এখানে ছবি দিয়েছি। প্রত্যেকটা শীতের ফুল। তার মধ্যে আরেকটি ফুল আপনারা দেখতে পাবেন, যার নাম কসমস ।সেটাও আমার খুব পছন্দের। এছাড়া রয়েছে পিটুনিয়া । আরো অনেক ধরনের প্রজাতির ফুল রয়েছে।
ক্যালেন্ডুলা |
---|
একসাথে একই রকম ফুলের গাছ অনেকগুলো লাগানো থাকলে যখন ফুলগুলো ফোটে ,খুবই অপূর্ব দেখতে লাগে ।আর নার্সারিতে এইভাবে একসাথে অনেকগুলো গাছ দেখা সম্ভব। ঘুরতে ঘুরতে আমরা একটু ইনডোর প্ল্যান্টের দিকেও চলে গেলাম ।ইনডোর প্ল্যান্টের জন্য আলাদা করে একটা ঘর রয়েছে। সেখানে গিয়েও আমি গাছ দেখছিলাম। এর সাথে চলে গেলাম গাঁদা ফুলের গাছগুলোর দিকে। একসাথে কত গাঁদা ফুল ফুটে আছে ।
হলিহক |
---|
এই গাছগুলো যদি শীতের আগে কিনে রাখতে পারতাম তাহলে সারা বাড়ি আলো হয়ে যেত ।যাই হোক পরের বছর অবশ্যই চেষ্টা করবো। ঘুরতে ফিরতে হঠাৎ চোখে পড়লো আবারও কাগজ ফুল দিয়ে মোড়ানো একটা অসম্ভব সুন্দর গেট ।কাগজ ফুলের গাছগুলো দিয়ে এত সুন্দর করে সাজিয়েছে ,খুবই অপূর্ব দেখতে লাগছে। একটা ফটো স্পট তৈরি হয়ে গেছে। মোটামুটি গেটের দুদিকে টবে ছয় সাত রকমের কাগজ ফুলের গাছ লাগানো।কাগজফুল যেহেতু লতানো ,তাই ঠিক গেট বেয়ে উপরের দিকে উঠে এত সুন্দর হয়ে গেছে। আর ওরাও বেশ সুন্দরভাবে পরিচর্যা করে ।
আমার পছন্দের কাগজ ফুল |
---|
নদীয়া নার্সারিতে প্রচুর স্টাফ কাজ করে, তাই মালির অভাব নেই। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমিও সুন্দর করে কিছু ছবি তুলে নিলাম।আমার জায়গাটা খুবই ভালো লেগেছে ।আমার বাড়ির গেটটাও এরকম করা হয়েছে ।এ কারণে ইচ্ছা হচ্ছে এরকম ভাবেই কিছু একটা প্ল্যান করব। কোন লতানো গাছ এরকম ভাবেই লাগাবো। প্রথমে ভেবেছিলাম মাধবীলতা ,কিন্তু এখন কাগজ ফুল হলেও মন্দ হয় না ,এটা ভাবছি ।
কাগজ ফুল/বাগাবিলাস/বৌগেইনভিলিয়া |
---|
যাইহোক এরপরে মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে মা বলল করবী ফুলের গাছ নিয়ে আসতে ।আমি সাদা করবী আর গোলাপি করবী গাছ কিনলাম। দুটোই ৩০ টাকা করে।মোটামুটি ৯০ টাকার মধ্যে তিনটি গাছ কেনা হয়ে গেল। করবী গাছগুলোতে কি কি রংয়ের ফুল হতে পারে তা বোঝা যায় না। তবে মালি বুঝতে পারে। আর সেই মতোই আমাদের চুজ করে দিচ্ছিল ওরা। নাকি লাল আর হলুদ রঙেরও করবী পাওয়া যায়। যদিও আমি সেরকম দেখিনি কোথাও হলুদ রঙের করবি। যাইহোক এর পর বিল পেমেন্ট করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
ইনডোর প্ল্যান্টস |
---|
সত্যি বলছি valentines day তে ফুল কিনতে না পারলেও, পরের দিন গিয়ে গাছগুলো কিনে অনেক শান্তি পেয়েছি ।কারণ এই একটা গাছ অনেক বড় হবে। অনেক ফুল দেবে ,আর আমি দেখতে পারবো সারাক্ষণ।
আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। ফুলের ফটোগ্রাফি গুলি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি ।সকলে ভালো থাকবেন।