নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আমিও সুস্থ আছি। বেশ কিছুদিন ধরে প্রচন্ড পরিমাণে প্রেসার যাচ্ছে ।এ কারণে মেন্টালি খুবই চাপে দিন কাটছে। টিচিং চলছে, সাথে নিজের পড়াশোনা, বিএড এর প্রজেক্ট, নিজের ব্যবসা, সমস্ত কিছু নিয়ে একেবারে পাগল হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেছে।
তারপরেও সবকিছু করতে হচ্ছে। যাইহোক আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমার একটি আর্ট ।আপনারা যারা আমাকে অনেকদিন আগে থেকে চেনেন ,তারা জানেন আমি কতটা ভালবাসি ছবি আঁকতে। এর সাথে যে কোন ধরনের শৈল্পিক কাজকর্মের ওপর আমার বেশ আগ্রহ কাজ করে। আর এরকম কোন কাজ দেখলে আমি না করে থাকতেও পারি না ।
আমার পাশের বাড়ি অর্থাৎ মৌসুমী বৌদিদের @mou.sumi বাড়িতে সুন্দর একটি বাগান আছে। বাগানটায় একটা সময় পুরো জঙ্গলের মতন অবস্থা ছিল ।আর এখন মৌসুমী বৌদি আর দাদার পরিচর্যায় বাগানটা এখন সাফসাফাই হয়ে খুব সুন্দর হয়ে গেছে।
অনেক দিনের ইচ্ছাতে ওরা বাগানে সুন্দর করে চাতাল করে নিয়েছে। আর একটা তুলসী মঞ্চ স্থাপনা করেছে। বৌদির শাশুড়ি, তুলসী গাছে যাতে জল দিতে পারে ,এ কারণে শাশুড়ির জন্যই বেসিক্যালি বৌদি এটা করেছে। পরবর্তীতে যখন রঙের প্রসঙ্গ আসে তখন আমি বারবার বলেছিলাম যেন ওরা মন্দিরের চাতালে লাল রং করে।আর চাতালে লাল রং করলে সাদা আলপনা দিলে আরও বেশি ফুটে উঠবে। সেই মতো দেখলাম একদিন ছাদে উঠে ,ওরা চাতালটা লাল রং করল। তারপর আস্তে আস্তে পাথরের তুলসী মন্দির স্থাপন করল, তুলসী গাছও স্থাপন করলো।
যেদিনকে ওরা এই তুলসী মঞ্চ উদ্বোধন করবে, আমাকে বারবার বলেছিল আমি যেন গিয়ে গীতা পাঠ করে দিয়ে আসি ।সবকিছুর আগে আমি বলেছিলাম যে , বৌদি ওসব পরে হবে। আমি আগে তোমাদের ওই লাল রঙের চাতালে আলপনা দিতে চাই মন মতন করে। তাই আমি সেদিন সকাল থেকে বেশ অনেকটা সময়, প্রায় আড়াই ঘন্টার উপরে হবে, ওদের মন্দিরের চাতালে বসে আলপনা দিয়েছিলাম।
কিভাবে ধাপে ধাপে আলপনা দিচ্ছিলাম, তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে সমস্তটাই ছবি তুলে রেখেছিলাম। আজকে সেটাই শেয়ার করছি।
আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন মন্দির এর চাতালটা কত সুন্দর করে লাল রং করা। এইবার এর ওপর আমি সাদা রংয়ের আলপনা দেব বলে সাদা ফেব্রিক রং, জল আর তুলি নিয়েছিলাম।
প্রথমেই তুলসী মন্দিরের একদম নিচের সিঁড়িটাকে আলপনা দেওয়া শুরু করেছি ।মঞ্চ বরাবর একটা দাগ টেনে মাঝখানে গোল করেছি।
তারপর কিছুটা পেন্সিল কম্পাসের সাহায্য নিয়ে দাগ বরাবর ফুল এর মতন ডিজাইন করেছি।।
যেহেতু জায়গাটা অর্ধ গোলাকৃতি ছিল ।তাই ডিজাইনটাও আমি এমন এনেছি যাতে অর্ধগোলাকৃতি জায়গাটার সাথে একদম মিলে যায় ,আর সত্যিই মিলে গিয়েছিল।
আপনারা জানেন আমার মান্ডালা আর্ট করতে কেমন লাগে ,আমি ভীষণই পছন্দ করি এই ধরনের ডিজাইন করতে। যখন মন খারাপ থাকে অথবা কোন কাজ মাথার মধ্যে ঠিক হতে চায় না, আমি খাতা পেন্সিল নিয়ে বসে যাই, আর এরকমই মান্ডালাও আর্ট করতে থাকি।।
এ ধরনের আর্ট করতে সব থেকে বেশি যেটা লাগে, সেটা হলো ধৈর্য্য আর ধৈর্য্য ধরে করতে করতেই মনের সমস্ত চিন্তা দূর হয়ে যায়। এই জন্যই আমার এই সমস্ত কাজ খুবই ভালো লাগে। আপনারা নিজেরাই দেখুন, কত সুন্দর করে ধাপে ধাপে একটা ডিজাইন তৈরি হয়ে গেল।
দ্বিতীয় ধাপে আমি মন্দিরের দ্বিতীয় সিঁড়িটার আলপনা শুরু করেছি। প্রথম সিঁড়িটাই অর্ধ গোলাকৃতি একটি ডিজাইন করার পর ,দ্বিতীয় ধাপ এ আমি ভেবেছিলাম গোল ডিজাইন করব। কিন্তু পরে মনে হল একটু অন্যরকম চেষ্টা করা যাক। তাই আপনারা দেখুন আমি কিভাবে কাজ শুরু করেছি।
আমি যখন কাজ করছিলাম তখন ভরা দুপুর বেলা। সূর্য পুরো মাথার ডানদিকে ।তাই কালো রঙের ছাতাটা আমার ডানদিক করে রেখে, ছাতার মধ্যে কোনরকমে মাথাটা গুজে কাজ করতে বসেছিলাম। স্বাভাবিকভাবে কোনরকম ত্রিফল টাঙ্গানোর জায়গা ছিল না। আর তাড়াহুড়োর মধ্যে সবাই ছিল বলে কাউকে আর বিরক্ত করিনি। তবে ছাতাটা আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে। সব থেকে বড় কথা, কাজের মধ্যে মন চলে গেলে, ঝড়-বৃষ্টি রোদ কোন কিছুই খেয়াল থাকে না।
ছোট ছোট ডিজাইনগুলো ধাপে ধাপে করতে কতটা সময় লেগেছে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন।। আমি কোনো রকম কোনো কিছু না দেখেই কাজ করেছি। না নিয়েছি নেট থেকে হেল্প। নিজের মন থেকে যে ডিজাইনগুলো মাথায় এসছে। সেগুলোই করতে থেকেছি।
আর এভাবেই তুলসী মঞ্চের দুটো সিঁড়ির ধাপের খুব সুন্দর ডিজাইন হয়ে গেছে। আপনারা নিজেরাই দেখুন, কত সুন্দর দেখতে লাগছে।
দূর থেকে এই সময় যখন আমি দেখছিলাম, তখন আমার কেমন যেন জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না কোথায় ঘাটতি হচ্ছে।
অনেকক্ষণ দূর থেকে দেখার পর, বুঝতে পারলাম যদি ইউ আকৃতির এই চাতালটাতে চারিদিক দিয়ে একটা বর্ডার এর মতন ডিজাইন করা যায়, তাহলে জিনিসটা মনে হয় ফুটে বার হবে। অর্থাৎ ভেতরের ডিজাইন টা আরো বেশি প্রকাশ পাবে।
সেই মতোই বর্ডারের মতন করে চারিদিক দিয়ে অর্ধ গোলাকৃতির ডিজাইন করতে লাগলাম। আর নিজের মন মতন সেই ডিজাইনটাকে আরো ফুটিয়ে তুললাম।।
মাথায় ঢুকছিল না লক্ষ্মীর পা আঁকবো কি, আকবো না। কারণ আমাদের বাঙালি বাড়িতে যখনই কোন পূজা হয় অথবা তুলসী মঞ্চের নিচে, আমরা সবসময় লক্ষ্মীর পা এঁকে রাখি। তাই অনেক দোটানোর মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার পর, অবশেষে জায়গা বুঝে ছোট্ট করে লক্ষ্মীর পা এঁকে দিয়েছি।।
সবশেষে বলতে পারি আমি অনেক অনেক স্যাটিসফাইড আমার কাজে। নিজের কাজের প্রতি নিজের স্যাটিসফেকশন আসলে তবে গিয়েই মনে শান্তি লাগে। কাজটা করতে পেরে আমার যে কি শান্তি হচ্ছিল, ধারণার বাইরে।
আর খুব মনে হচ্ছিল যে ,এই তুলসী মন্দিরটা যদি আমি রোজ ঘুম থেকে উঠে দেখতে পারতাম। আমার নিজের বাড়ির চাতালটা যদি এরকম ভাবে সিমেন্ট বাঁধাই করা হতো, তাহলে আমিও এরকম তুলসী মঞ্চ বানিয়ে নিতাম।কিন্তু বাবা পিছল হয়ে যাওয়ার ভয়ে ,বাড়িতে টাইলস পেতেছে উঠোনে। এ কারণে তুলসী মঞ্চের নিচে কোনরকম ডিজাইন করা যায় না। কারণ টাইলসগুলো উঁচু নিচু ডিজাইনের।তবে ভবিষ্যতে কখনো সুযোগ হলে ,আমি অবশ্যই মৌসুমী বৌদিদের মতন এরকম তুলসী মঞ্চের চাতাল তৈরি করে নেব।
আশা করছি আমার হাতের কাজ আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। সকলে ভাল থাকবেন। আর অবশ্যই আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানাবেন।
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit