হতাশায়, দুশ্চিন্তায় ও টেনসনে কাটানো আমার একটি দিন।

in hive-120823 •  19 days ago 

abdominal-pain-2493327_960_720.jpg
pixabay

প্রতি টা দিনের মতো আজও ঘুম থেকে উঠে আমি এবং আমার হাজব্যান্ড ফজরের নামাজ আদায় করলাম দোয়া দরুদ পড়লাম,তবে তখন কেন অজানা এক কারণে ভিতর টা খুব ছটফট করছিলো,মানুষ বলে না আপনজন অসুস্থ হলে কোন খারাপ দুর্ঘটনা হলে,তার কাছের মানুষ গুলো আগে জানতে পারে।

তবুও মন খারাপ নিয়ে সকলের কাজকর্ম করছিলাম, খাবার ইচ্ছা ছিল না তবুও খেয়ে নিলাম, আমি এবং আমার হাজব্যান্ড খাবার শেষ করে আমি বলতে ছিলাম আমার শশুরের একটা ফোন দেয়ার কথা,,এ কথাটা আমি শেষ করা মাত্রই আমার শশুর ফোন দিয়েছে , এবং আমার হাজব্যান্ড কে বলতেছিলো আজ সারাটা রাত সে ঘুমাতে পারি নাই, বমি, ছটফট সেই সাথে প্রচন্ড বুকে ব্যথা।

এ কথা শুনে আমরা বললাম খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য আমাদের ওখানে থানা হসপিটালে চলে গেলো, কেন যেন খুব অস্থির লাগছিলো কোন খবর না পাওয়া পর্যন্ত একদমই ভালো লাগছিল না।

doctor-563428_960_720.jpgpixabay

এরপরে খবর আসলো, যেটা শোনার জন্য আমরা একদমই প্রস্তুত ছিলাম না , সে হার্ট এটাক করেছে গত তিনদিন আগে, সে কারণেই বুকের ভিতরে প্রচন্ড ব্যথা ধীরে ধীরে তার ব্যথা যেন বেড়েই যাচ্ছে, ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট করার পরে বলে দিলো যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য এবং হৃদরোগ হসপিটালে ভর্তি করার জন্য।তার অবস্থা খুবই খারাপ। আরো বেশি খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে তাই যত দ্রুত সম্ভব।

কথাটা শুনে আমি তো একদম হতভম্ব দিয়ে গিয়েছি মানুষটার সাথে কালকেও অনেক টা সময় কথা বলছি,, একটা মেয়ের বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি আপন হয়,তবে প্রত্যেক টা মানুষ আপন হয় না, কিন্তুু আমার ক্ষেত্রে অন্যরকম আমার শ্বশুর বাড়িতে একমাত্র আমার শাশুড়ি হলো তিনি সব সময় সব কিছুতে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে, একদম ছোট মেয়ের মতো ভালোবেসে।

কথায় আছে দুটি পাতিল এক জায়গা থাকলে শব্দ হয়, মাঝেমধ্যে খুব খারাপ লাগতো আমি সব সময় আমার শ্বশুরের কাছে বলতাম, নিজের বাবার কাছে যে কথাগুলো শেয়ার না করেছি। বিয়ের পরে আমি আমার শ্বশুরের কাছে বলেছি, তিনি ছিল আমার একটা আবদারের জায়গা।

hands-5618240_640.jpgpixabay

সব অভিমান কষ্ট, আমি তার সাথে শেয়ার করতাম তিনি কখনোই কারো কাছে বলত না, অশান্তি করত না, সব সময় আমাকে বুঝাতো এবং আমি কিছু করতে চাইলে,আমার কিছু পছন্দ হলে,তিনি আমাকে সেটা এনে দেয়ার চেষ্টা করতো, আমার পড়ালেখা টা ও আমি এত দূর করতে পেরেছি। শুধু তার কারণে যতই হাসবেন্ড সাপোর্টে থাকুক না কেন শ্বশুরবাড়ির সাপোর্ট একটু হলেও দরকার হয়।

আবার ঠিক সেও আমার বিয়ে হওয়ার পর থেকে আমি যতদিন শ্বশুর৷ বাড়িতে ছিলাম সবকিছু যেন আমার উপরে ছেড়ে দিতো পছন্দ করতে। টাকা পয়সা, তার পছন্দের জিনিস, একটা কিছু করার আগে সে আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করতো, মাঝেমধ্যে বিরক্ত হতাম আমি কি এত কিছু বুঝি। বর্তমানে আমি এত অসুস্থ প্রত্যেক টা দিন তিন থেকে চার বার আমাকে ফোন দিবে সব সময় বলতো তুমি নিজে সুস্থ থেকো,সাবধানে থেকো একটু অসুস্থ হলেই ডাক্তারের কাছে প্রথমে যাবে।

আজ তার এত বড় একটা সমস্যা ডাক্তার বলছে, দ্রুত ট্রিটমেন্ট না হলে তাকে বাঁচানো অসম্ভব আমি এই কথাটা যেন মেনে নিতে পারতেছি না।তিনি হলো আমার একমাত্র ভরসা রাখার মত একটা জায়গা,,।

hospital-840135_960_720.jpgpixabay

পরবর্তীতে তাকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করানো হলো, এম্বুলেন্স ঠিক করে খুব দ্রুত রওনা হলো, সারাটা দিন একটু একটু পর কথা বলছিলাম ফোনে, কোন কাজ কোন কিছুই যেন করার মত শক্তি, শুধু অপেক্ষা করছিলাম কখন এসে ঢাকায় পৌঁছাবে, এভাবে আজ দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো, এরপরে তারা হৃদরোগ হসপিটালে এসে পৌঁছেছে, যেহেতু আমি নিজেই অসুস্থ দুই পা হাঁটলে এক পা পিছনে ফিরে, তাই হাজবেন্ড চলে গেল হসপিটালে।

বাসায় একা টেনশন যেন আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে,কিছু খারাপ লাগছিলো,যেটা বোঝানোর ভাষা নেই, তার এমন পরিস্থিতিতে কাছে নেই,এত বেশি দুঃখ লাগছিলো হয়তো কাছে থাকলে কত কিছুই না বলতো, বাড়িতে এটা আছে ওটা আছে,,আমি যেন একটা আমার মেয়ের দিকে খেয়াল রাখি, নিজের দিকে খেয়াল রাখি আরো কত কি।

বাসায় বসে শুধু সৃষ্টিকর্তা কে ডাকছি, আমার এই জীবনে যদি আমি একটু ভালো কাজ করে থাকি, তার বিনিময়ে হলেও যেন আমার শশুর সুস্থ হয়ে যায়।কারণ তার অনুপস্থিতে আমার শ্বশুর বাড়িতে আমার কোন ভরসা, কোন সাপোর্ট থাকবে না।

আজকের দিনটা এভাবে কাটবে, এরকম খারাপ পরিস্থিতি হবে কল্পনা করিনি কখনো।কিছুই বলার ভাষা যেনো এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। সবশেষে বলবো সবাই আমার শশুরের জন্য দোয়া করবেন, সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে সুস্থ করে দেয়।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনার শ্বশুরের অসুস্থতার খবর শুনে খুব দুঃখিত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি যে মানসিক চাপের মধ্যে আছেন, তা পুরোপুরি বোঝা যায়। তিনি আপনার জন্য শুধু শ্বশুরই নন, একজন ভরসা ও সমর্থনের প্রতীক, এবং তার সুস্থতার জন্য আপনি যা অনুভব করছেন তা সত্যিই বোঝার মতো। এই কঠিন সময়ের মধ্যে আপনার সাহস এবং ধৈর্য প্রশংসনীয়। সৃষ্টিকর্তা আপনাদের পরিবারকে শক্তি দান করুক।

আমরা যতই দূরে থাকি না কেন আপনজন অসুস্থ থাকলে মন ভালো থাকেনা। আপনার শশুরের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
মেয়েদের কাছে শশুর তার বাবার স্থানে থাকেন। এই বিপদের সময় তাদের কাছে থাকলে চিন্তা অনেক কম হত। বাসায় একা থাকায় আপনার মন বেশি খারাপ হচ্ছে।

তবে আপনি এই সময় চিন্তা বেশি করবেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।

আসলে কাছের কোন মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন মনের ভেতর অজানা একটা ছটফট শুরু হয়ে যায় আপনার শ্বশুর যেহেতু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তখন আপনার কাছে এমনটা মনে হয়েছিল তিনি এখন এই পৃথিবীতে নেই দোয়া করি তিনি যেন পরকালে ভালো থাকে মানুষ যখন হার্ট অ্যাটাক করে তখন অনেকেই বেঁচে যায় কিন্তু অনেকেই পরকালে চলে যায় আপনার শ্বশুর মারা গেছে। আপনার জন্য শুধুমাত্র দোয়া করেন আর কিছুই করার নেই।