( মায়াবতী ) দ্বিতীয় পর্ব

in hive-120823 •  8 hours ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম। আশাকরছি সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ইন্ডিয়ান বাসী, বাংলাদেশ বাসী,ও ইনক্রিডিবল ইন্ডিয়া কমিউনিটির সবাইকে জানাই, আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সবার প্রতি আমার ভালবাসা রইল।


মানুষের ভালোবাসা কেন এমন হয়! কেন মানুষ প্রেম করার পর উপলব্ধি করতে পারে।
যে সারাটা জীবন ভুল করেছে, আসলে জীবনের সঠিক মানুষ পাওয়াটাই অনেক ভাগ্যের একটা বিষয়। হয়তো,বা কেউ জীবনে সঠিক মানুষটা পেয়েও যায়! আবার সঠিক মানুষটা পেয়েও সে ! সারা জীবন সুখে থাকতে পারে না।

আমরা প্রথম পর্বে পড়েছিলাম, মায়াবতী এখন বাবা-মার অগোচরে ঘুরতে বের হয়। বিভিন্ন জায়গায় রুমাকে সাথে নিয়ে!

1000007469.jpg
Source


একদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর মায়াবতী আর রুমা
মার্কেটে গেল, কিছু শপিং করার জন্য। মায়াবতী আর রুমা শপিং শেষ করে এখন তাদের অনেক ক্ষুধা পেয়েছে! তাই তাঁরা চিন্তা করছে, কোন একটা ফাস্টফুডে গেয়ে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নেবে। ফাস্টফুডে ঢোকার পরই মায়াবতী আর রুমা একটা পিজার অর্ডার দিল। দুই বান্ধবী মিলে খাওয়া শেষ করে। ফাস্টফুডে থেকে বের হয়ে চিন্তা করলো, তারা এখন দুইজনেই, দুইজনের বাসার দিকে চলে যাবে! তখন মায়াবতী একটা রিকশায় চড়ে বাসার দিকে রওনা দিল। মায়াবতী রুমাকে বলে কালকে স্কুলে দেখা হবে, এই বলে রুমার থেকে বিদায় নিল !

1000007470.jpg
Source

★ মায়াবতীকে সাগর অ্যাক্সিডেন্টের সময় হাত ধরে উঠাচ্ছে★

কিছুক্ষণ পর, রিক্সাটা একটি অটোর রিক্সার সাথে ধাক্কা লেগে মায়াবতী পড়ে যায়। এবং হাতে, মাথায় কিছু রক্তক্ষরণ হয়। রাস্তায় অনেক মানুষ ছিল ,কেউই মায়াবতীকে সাহায্য করতে আসেনি!
কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ একজন ব্যক্তি ছিল। তার নাম সাগর! এই সাগর ছেলেটি মায়াবতীর এক্সিডেন্ট দেখে সঙ্গে-সঙ্গে মায়াবতীর কাছে এসে। মায়াবতীকে হসপিটালে নিয়ে যায় এবং হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে মায়াবতী বাসায় সামনে দিয়ে যায়!

সাগর চলে যাবার আগে মায়াবতীকে বলল, আপু যদি কিছু মনে না করেন! তাহলে আপনার ফোন নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে। মায়াবতী ও কোন কিছু না ভেবেই তাৎক্ষণিকভাবে সাগরকে তার পার্সোনাল নাম্বার দিয়ে দেয়। পরের দিন স্কুলে মায়াবতী যায়নি শরীর অসুস্থতার জন্য। স্কুল ছুটির হওয়ার পর রুমা সঙ্গে-সঙ্গে মায়াবতীর বাসায় চলে আসলো, কেন আজকে মায়াবতী স্কুলে যায় নাই এটা জানার জন্য! এবং মায়াবতীর কাছ থেকে সম্পন্ন ঘটনাটি শুনলো কিভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছিল!


প্রায় দুইদিন পর হঠাৎ করে বিকাল বেলা কল দিল সাগর। তার শরীরের অবস্থা জানার জন্য, এবং মায়াবতী ও চিনতে পারল সাগরকে এবং মায়াবতী বলল! সে আগের থেকে অনেক সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ মায়াবতী আর সাগর কথা বলল! কথা বলা শেষ করে তারা বিদায় নিল। এইসব বিষয় মায়াবতী রুমাকে বলল, এবং রুমা মায়াবতীকে বলল, ছেলেটা কি দেখতে অনেক সুন্দর অনেক সুদর্শন। মায়াবতী বলল ছেলেটা অনেক সুদর্শন। আবার দুইদিন পর মায়াবতী সাগরকে ফোন দিল সাগরের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য।

1000007471.jpg
Source

সাগরও খুব ভালোভাবে তার কথাগুলোর প্রশ্নের উত্তর দিল।কয়েক দিনের ভিতরেই তাদের ভিতরে একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক সৃষ্টি হলো। সাগর তাদেরকে আমন্ত্রণ করলো একটা রেস্টুরেন্টে! এই কথা শুনে মায়াবতীর আনন্দে আত্মহারা।এই প্রথম সাগরের সাথে দেখা করবে, মনের ভেতর একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করছে! কি জামা কাপড় পড়ে যাওয়া যায়, এই সব বিষয় নিয়ে রুমার সাথে কথাবার্তা বলল। রুমা, মায়াবতীকে বলল, তুই এক কাজ কর শাড়ি পড়ে সাগরের সাথে দেখা কর। এই কথা শুনে মায়াবতী বলল, আমি যদি বাসা থেকে শাড়ি পড়ে বের হই। তাহলে আম্মাকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। মায়াবতী রুমাকে বলছে, তদের বাসা থেকে শাড়ি পড়ে একসাথে বের হব।

1000007472.jpg
Source

মায়াবতীর বাসা থেকে বের হবার সময়, ওর আম্মুকে বলল রুমার বাসা যাবে! মায়াবতীর আম্মু, মায়াবতীকে বলল সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসিস। মায়াবতী সঙ্গে-সঙ্গে রুমাদের বাসায় গেল! এবং যে রুমার আম্মুকে বলল, তাদের এক বান্ধবীর বিয়ে এর জন্য তারা শাড়ি পড়ে, তাদের বান্ধবীর বিয়েতে যাবে। এই কথা বলে রুমা আর মায়াবতী সাগরের সাথে দেখা করার জন্য, ড্রিম হলিডে পার্কে উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো। রুমা অনেক এক্সাইটেড কেননা রুমা কখনো সাগরকে সরাসরি দেখে নেই! শুধু মায়াবতী কাছ থেকে সাগরের কথা শুনেছি অনেকবার। সাগর আগে থেকেই পার্কে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। মায়াবতী আর রুমার জন্য অপেক্ষা করছিল।

1000007473.jpg
Source

মায়াবতী আর রুমা যখন ড্রিম হলিদের পার্কের সামনে পৌঁছালো। তখন রুমা, সাগরকে ফাস্ট টাইম দেখল সাদা একটা পাঞ্জাবি পরে, হাতে কয়েকটা গোলাপ নিয়ে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনই দেখে রুমা বলল কিরে মায়াবতী এই লোক তো, তোর, থেকে বয়সে অনেক বড়! প্রায় বিশ,বাইশ বছর হবে। রুমা বলছে; হ্যাঁ সাগর অনেক সুদর্শন একটা পুরুষ। যেকোনো নারী তারে দেখে আকর্ষিত হবে বটে। তারপরও সাগর আমাদের থেকে প্রায় ২০.২২ বছরের বড়। তখন মায়াবতী বলল, ভালোবাসা হয় মন থেকে বয়স দেখে না!
আর সাগরের চেহারা তো মাশাল্লাহ! রুমা ও বলছে মায়াবতী তোরও চেহারা তো কোন দিকটা কম না।তারা দুই বান্ধবী; এই সব কথা বলতে-বলতে সাগর মায়াবতীর আর রুমার কাছে চলে আসলো।

তখন মায়াবতী সাগরকে রুমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, যে তার বেস্ট ফ্রেন্ড রুমা। সাগর রুমাকে বলছে আপনার কথা মায়াবতীর কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি আমি। আপনি অনেক সুন্দর গান পারেন আজকে আমাদের একটা গান শোনাবেন। রুমা বলল আমি এমনিতেই ভালো গান গাইতে পারি না, শুধু মাঝে-মাঝে গুন-গুন করে শব্দ করি! এটাই মায়াবতীর কাছে অনেক ভালো লাগে। এই বলে তারা তিনজন অনেক হাসাহাসি শুরু করছে, আর পার্কের ভিতর ঢুকতে শুরু করলো।

1000007475.jpg
Source

সাগর পার্কের সবার সামনে চিৎকার করে মায়াবতীকে প্রপোজ করল, মায়াবতী ও শরমে লজ্জায় এবং খুশিতে তার প্রপোজ একসেপ্ট করল। কয়েক ঘন্টা ধরে তারা তিনজন মিলে পার্কের অনেকটা সময় আনন্দ উপভোগ করেছিল। পরে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মায়াবতী আর রুমাকে রিক্সা করে বাসায় পাঠিয়ে দিল সাগর।

এভাবেই চলতে থাকল দীর্ঘ চার মাস মায়াবতী আর সাগরের লুকোচুরি প্রেম খেলা। কয়েকদিন পরেই, মায়াবতীর প্রথম বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হল এবং বেশ ভালোভাবে মায়াবতী পরীক্ষাগুলো শেষ করলো!

কিন্তু সাগরের প্রেমে মায়াবতী এত পরিমান মুগ্ধ হয়ে গেল, সারাদিন সাগরকে নিয়ে ভাবে।মায়াবতীর এই অস্থিরতা দেখে ওর আম্মু কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম। হয়তো মায়াবতীর কিছু হয়েছে! মায়াবতীকে অনেক প্রশ্ন করল কিন্তু মায়াবতী বলছে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। এর জন্য মনটা খারাপ এই কথা বলে সে কাটিয়ে নিল। কয়েকদিন পর মায়াবতীর আম্মা রুমাকে ডেকে কিছু প্রশ্ন করল! তার মেয়ের ব্যাপারে, কিন্তু মায়াবতী আগে রুমাকে সবকিছু বলে দিয়েছে, তাই রুমাও একই কথা বলল। তার পরীক্ষার জন্য মন খারাপ।

1000007476.jpg
Source


একদিন হঠাৎ করে রুমাকে ফোন দিল মায়াবতী এবং বলল তুই রুমা তাড়াতাড়ি করে কাজী অফিসে চলে আস! রুমা প্রশ্ন করলো; তুই কাজী অফিসে কি করিস কিন্তু মায়াবতী বলল তুই তাড়াতাড়ি আয় পরে বলছি। রুমা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো এবং রুমা সঙ্গে-সঙ্গে কাজি অফিসে চলে আসলো। এসে দেখে সাগরের সাথে মায়াবতীর বিয়ে। রুমা বলল, এ তুই কি করলি বাসার কাউকে না বলেই তুই সাগরকে বিয়ে করে ফেললি। মায়াবতী বলল, বাসায় জানালে আমাকে সাগরের সাথে বিয়ে দিত না! আর আমি সাগরকে ছাড়াও বাঁচবো না। মায়াবতী বলছে কয়েক বছর পরে হয়তো আমার পরিবার আমাদের বিয়া মেনে নিবে!

1000007477.jpg
Source

বিয়ে করার পর মায়াবতী আর রুমাকে, সাগর বললো; তোমরা বাসায় চলে যাও মায়াবতী আর রুমা সঙ্গে-সঙ্গে বাসায় চলে আসলো! রুমা তখন মায়াবতীকে অনেক বকাবাজি করেছে, তুই এই কাজটা কিভাবে করতে পারলি মায়াবতী। পরে মন খারাপ করে রুমা, রুমাদের বাসায় চলে গেল ! আরো কয়েক মাস খুব সুন্দর ভাবে দিনগুলি প্রবাহিত হলো মায়াবতীর। একদিন হঠাৎ করে সাগরের একটা ফোন আসলো ঐদিন মায়াবতী ও সাগরের পাশে ছিল। ফোনটা মায়াবতী একটু চালাকি করে রিসিভ করল। ফোনের ওই পাশ থেকে একটি মেয়ে সাগরকে বলছে, তুমি তাড়াতাড়ি সাগর বাড়িতে আসো রত্নার শরীরটা অনেক খারাপ!

এই নাম্বারটা মায়াবতী সেভ করে রাখলো তার মোবাইল ফোনে। এবং সাগরকে কিছুই বলল না; কিন্তু মায়াবতীর ভিতরে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে! কেন একটি মেয়ে ফোন দিয়ে বললো; রত্নার শরীরটা অনেক খারাপ সাগর তুমি বাসায় আসো।
দুইদিন পর মায়াবতী সন্দেহজনক নাম্বারে ফোন দিল এবং ফোন দিয়ে সাগরের সম্পর্কে জানতে চাইলো। এবং জানতে পারলো সাগর একজন বিবাহিত পুরুষ! তার একটি ছোট্ট পাঁচ বছরের মেয়ে আছে নাম তার রত্নার।

1000007478.jpg
Source

★সাগরের মেয়ে ★

এই কথা শুনে মায়াবতীর আকাশ ভেঙ্গে মাটিতে পরল। নতুন বিয়ার মাত্র ৬ মাস পরেই সাগরের সত্যতা জানতে পারলাম। পরের দিনই মায়াবতী আর রুমা মিলে সাগরের দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গেল!এবং রত্নাকে দেখল এবং সাগরের দ্বিতীয় স্ত্রীকে সবকিছুই বলে দিল মায়াবতী। এইভাবে ঝরে যায় কতশত মায়াবতীর নতুন জীবন।

এই গল্প থেকে একটি বিষয় খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম। হুট- হাট করে কাউকে মন দিতে হয় না! এই পৃথিবীর বুকে কেউই আপন নয়! শুধু আপন পিতা,মাতা যদি পিতা,মাতার কাছে মায়াবতী সবকিছুই বলত! তাহলে হয়তবা মায়াবতীর জীবনে এরকম কাল হয়ে আসতো না সাগর। মায়াবতী সাগরের কথা কখনোই ভুলতে পারবে না। আমি গল্পের শুরুতেই একটি কবিতা দিয়ে গল্পটি শুরু করেছিলাম। শেষ করব একটি কবিতা দিয়ে!

1000007479.jpg
Source

মন চাইলেও হয়তো বা ভুলতে পারবো না, তারে কখনো!
আমার স্মৃতির পাতায় থাকবে সে কালো মেঘের মতো! জীবনে সঠিক মানুষটি বাছাই করার ভুল কি ছিল আমার।
একটি হৃদয়ের টুকরো সঁপে দিলাম ভুল হাতে!
এখন সেই ভুলের মূলে নানান শোকের পুষ্প ফোটে!

★সমাপ্ত★


কিছু কথা

আমার যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে! তাহলে সবাই ক্ষমা চাইতেছে দেখবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।


JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7yctNbUfy3Svm873NHceMEBkiU7QugfFD3RdWkWB8D5Nn71Vnqc38zTwcdMtsxGBY9bLpzWCxcXrK7yhhF5vsc2ofGXjYS.png

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



◦•●◉✿ধন্যবাদ সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য।✿◉●•◦

২২ / জানুয়ারি / ২০২৫

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

Loading...