আসসালামু আলাইকুম/আদাব, আমি মুহাঃ আল মামুন, বাংলাদেশ থেকে 🇧🇩 |
---|
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম
হ্যালো বন্ধুরা।আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন । আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা শুরু করছি।
আমরা দুই ভাই এক বোন, ভাইয়া আমার থেকে ৫ বসরের বড়, আর বোন আমার থেকে ৪ বসরের ছোট। আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে কমপক্ষে ছয় বছর আগে।আর আমার বোনের বিয়ে হয়েছে চার বছর আগে। আজকে আমি গল্পটা লিখবো আমার বোনের বিয়ে নিয়ে।
সময়টি 2018 সালের শেষের দিকে। তখন আমি মাদ্রাসায় পড়তাম। আর আমার ভাই মাদ্রাসায় নতুন চাকরি জয়েন করছেন, ভাই তখন বিবাহিত। ছোট থেকেই আমি আর আমার বোনের মধ্যে খুব মহব্বত ছিল। সেজন্য বোনের কোন সমস্যা হলে আমাকে সর্বপ্রথম জানাতো।
তখন আমার বোন ক্লাস এইটে পড়তো। ইসলামী অনুযায়ী আমার বোন পর্দা করতো। সেজন্য বিয়ের জন্য যেকোন ছেলে এসে তাকে দেখুক সেটা সে চাইতো না। এ রকম অবস্থায় আমাকে কল করে ফোনের মধ্যে অনেক কান্নাকাটি করতো। আমি মা-বাবাকে বুঝাই যে আমার বোনকে কি বেশি হয়ে গেছে তোমাদের কাছে?যে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছো?
আসলে মেয়েদেরকে তো অবশ্যই বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমি চাইতাম না যে,এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাক, যার কারনে আমি আমার বোনের মহব্বত থেকে বঞ্চিত হই। কারণ ওর বিয়ে হলে আমি কার সাথে থাকবো? কে আমার সাথে ঝগড়া করবে? কে আমাকে বকা দেবে?কে আমার সাথে খেলাধুলা করবে? সত্যিই এসব ভেবে তখন আমি কান্নাই জর্জরিত হয়ে পরি।
যাইহোক এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর, একটা ছেলেকে মা-বাবার পছন্দ হলো এবং বোনেরো। কারণ ছেলেটি ধার্মিক ছিল এবং ইসালমী অনুযায়ী চলাফেরা করত। আসলে আমি, আমার ভাই, আমার বাবা সবাই হুজুর, আলেম পরিবার। সেজন্য হয়তো সবাই ভাবতে পারেন যে আমি আমার বোনকে কেন আলেমের সাথে বিয়ে দিলাম না।
আসলে আমরা তো আলেম আমরাও জানি আলেমের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে জেনারেল শিক্ষার মধ্যেও ভালো-মন্দ ছেলে মেয়ে আছে। সেজন্য আমরা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ করতাম যে ছেলে-মেয়ে ভালো কিনা, সেটা যেই শিক্ষারই হোক না কেন..!
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। আমিও মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। গাড়িতে বসে একটাই চিন্তা ভাবনা! আমার বোনকে ছেড়ে দিতে হবে অন্য এক পরিবারে! আমি আর তাকে পাবোনা! ছোটবেলা থেকে একসাথে থেকেছি, এক সাথে খেলেছি, একসাথে খেয়েছি। এসব ভেবে চোঁখের কোনে পানি এসে গেলো।
এসে পরলাম বাড়িতে, বোনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, কেমন যেন মনে হলো,ওর অনেক কষ্টের হচ্ছে। মুখ ফুটিয়ে বলতে পারছেনা যে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কীভাবে । আমি মুচকি হেসে ওকে সান্ত্বনা দিলাম।
বিয়ের কার্যক্রম শুরু হল। আমার আত্মীয়-স্বজন চলে আসলো। সবাই বিয়েতে আনন্দ উল্লাস করছে। আমিও তাদের সাথে আনন্দ-উল্লাস করছি। কিন্তু মনের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। বিয়েতে সকল কাজকর্মের একমাত্র দায়িত্ব হলো আমার উপর। শত কষ্ট বুকে নিয়েও সকল কাজকর্ম ঠিকঠাক মত করলাম।
বরযাত্রী আসলো। আপ্যায়ণ করালাম। কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ালো। আমার বোনও কবুল বললো। আমার বোন কবুল বলার সময় আমি দরজার কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার কানে যখন কবুল শব্দটি ভেসে আসলো, কান্নায় ভেঙে পরলাম।
যাইহোক মনে কষ্ট নিয়েও বোনকে বিদায় দিলাম। বিদায় দেওয়ার পর আমার কান্নার আওয়াজে পুরা এলাকা বাসি জানার উপক্রম হলো। আমি জানিনা সেদিন ছেলে মানুষ হয়ে এভাবে চিৎকার করে কেন কাঁদলাম।
সত্যিই যাদের বোন আছে তারাই ভালো জানে যে বোনকে বিদায় দেওয়া কতটা কষ্টের। আমি নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারিনি। পৃথিবীর সকল বোন ভালো থাকুক এই কামনাই করি সর্বদা।
আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।