পাগলা খালি যাবার অভিঞ্জতা

in hive-120823 •  last month  (edited)

আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আমি একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

আমার এর আগের পোস্টে আপনারা শুনেছেন শিবনিবাস যাওয়ার গল্প আমি একই দিনে শিবনিবাস থেকে পাগলা খালি গিয়েছিলাম। ওখানেও শিব ঠাকুরের পূজা করা হয়। শিবনিবাস থেকে পাগলা খালি প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে যেতে হয় ।আমি এর আগেও তিনবার পাগলা খালি মন্দিরে গিয়েছিলাম ।কিন্তু তখন গাড়িতে করে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার বাইকে করে যাওয়ার মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

IMG20230807175931.jpg

আগে বলি পাগলা খালির মন্দিরটি ওখানে কেন স্থাপিত হয়েছে। পাগলা কালীর মন্দিরটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে । সেখানে চারিদিকে ফাঁকা মাঠ। আগেকার দিনে নাকি ওই জায়গাটায় শ্মশান ছিল। গ্রামে কোন মানুষ মারা গেলে রাতে রাতে ওখানে পোড়ানো হতো। আসলে আগেকার দিনে মানুষ বেশি রোগে ভুগে মারা যেত।আমরা পৌরাণিক গল্প শুনেছি যে মহাদেব নাকি শ্মশান বাসি ছিল। এমনকি টিভিতে ও দেখেছি।আমি এরকম যত শিব মন্দিরে গিয়েছি সবই গ্রাম থেকে অনেক ভিতরে। একদিন রাতে কোন মৃতদেহ পুড়িয়ে যখন সবাই বাড়ি ফিরছিল । তখন ওদের মধ্যে কিন্তু একজন ফিরতে দেরি করেছিল। সে একা একা বাড়ি ফিরছিল।

IMG20230807175943.jpg

যেহেতু ওখানে মৃতদেহ গুলো পোড়ানো হয় ।তাই ওই ভদ্রলোকটি একা একা আসতে ভীষণ ভয় পাচ্ছিল। ভদ্রলোকটি পিছনে তাকিয়ে দেখলো একজন কে পিছনে আসছে। পিছনে আসা লোকটি ওই ভদ্র লোকটিকে জিজ্ঞেস করল তুমি কোথায় যাবে। তখন ভদ্রলোক কি বলল আমি বাড়ি ফিরব। পিছনে থাকা লোকটি তখন ঐ ভদ্রলোককে বলেছিল ভয় পেয়ো না ।আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি। বলা মাত্রই আস্তে আস্তে ভদ্রলোকটি বাড়ি পর্যন্ত এসে পিছনে তাকিয়ে আর লোকটাকে দেখতে পায়নি। সেই থেকেই ওই শ্মশানে একটা বটগাছ কে ঘিরে পুজো করা হতো। ঘটনাটি আমার শোনা গল্প ।কতটা সত্যি তা আমার জানা নেই।

তবে ওই গাছটির চারপাশে শিব ঠাকুরের মূর্তি রেখে পুজো করা হয়। সবাই বলে ওটা নাকি পাগলা বাবার মন্দির। তবে গাছটা নিচ থেকে ছোট্ট একটা ঠাকুরের চিহ্ন বের হয়েছে। সেটা আমরা এর আগে কোনদিন গিয়ে দেখতে পাইনি। এবারে পূজো দিতে গিয়ে মন্দিরটি খুব ফাঁকা ছিল। তাই ভালোভাবে দেখতে পেয়েছিলাম। ওই মন্দিরটি সারাদিন লোক জন থাকে ।কিন্তু সন্ধ্যের পর ওইদিকে কেউ যেতে পারে না। সবাই ভয় পাই।

কিন্তু এখন যেহেতু সবদিক উন্নত হয়ে গিয়েছে। তাই মানুষের ভয়টাও অনেকটা কমে গেছে। প্রতি সোমবার আর বৃহস্পতিবার বিশেষ করে ওই মন্দিরে পূজা করা হয়। প্রচুর ভক্তের আনাগোনা হয়।ওই ঠাকুরের কাছে যেকোনো মানসিক করলে নাকি সেই মনোবাসনা পূর্ণ হয়। ওই মন্দিরে পুজো দিতে গেলে প্রত্যেক সোমবার বৃহস্পতিবার কেউ না কেউ খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করে। আগে মন্দিরটি চারপাশে ছিল মাটি র তৈরি ।কিন্তু এখন সবাই ওই মন্দিরটি তে অনুদান করে। এর ফলে চারপাশে পাকা মন্দির তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু যেখানে আসল পূজো করা হয়। সেখানে গাছটা চারপাশে ছাদ করা হয়েছে। গাছটাকে মধ্যেখানে রেখে দেওয়া হয়েছে।

গাছটা তার বিশাল শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে অবস্থান করেছে। প্রত্যেক সোমবার বৃহস্পতিবার ওখানে মেলা বসে। মন্দিরের পাশে রয়েছে একটা ছোট নদী। এবার বলি যাওয়ার গল্প সেদিন যেহেতু খুব বৃষ্টি হয়েছে ।তাই আমাদের যেতেও খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ সেই সময়টা ছিল পাট কাটার সময়। গ্রামের প্রত্যেকে ওই রাস্তা দিয়ে পাট নিয়ে বাড়ি গিয়েছে। আর রাস্তা তো কাদা ভর্তি। ভয়ে ভয়ে ওই রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। কারণ মাঠের কাদা গাড়ি স্লিপ করলেই তো আমরা পড়ে যাব। যেখানে বেশি কাদা সেখানে আমরা হেঁটে হেঁটে গিয়েছি। এমন কাদা যে জুতো হাতে করে খালি পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল।সারা রাস্তা অনেক কষ্ট করে যাওয়ার পর ।আমরা মন্দিরের সামনে গিয়ে বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।

ওখানে সবাই মিলে পূজো দিয়ে আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। তখনো বৃষ্টি পড়ছিল। আবারো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরলাম। প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল বাড়ি ফিরতে। আসলে মন্দিরের চারপাশে তেমন কোন জনবসতি নেই ।তাই বেশি রাত করে ফিরলে আরো বেশি ভয় লাগে।রাতে যদি রাস্তা হারিয়ে ফেলি ।তাও কেউ রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য থাকবে না। আমরা যখন পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম ।তখন গাড়ির সামনেই পড়েছিল একটা সাপ। আজ এইখানে শেষ করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আবার নতুন কোন গল্প নিয়ে হাজির হব।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

যাইহোক আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এবং আপনি এত সুন্দর করে এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন যেটা আসলে অসাধারণ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Loading...

যে স্থানে মৃতদেহ পড়ানো হয় আসলে স্বাভাবিকভাবে অনেক মানুষ এখানে যেতে চাই না মনের ভিতরে আলাদা রকম ভয় কাজ করে।

যাই হোক আপনার পাগলা খালি যাবার গল্পটা বেশ উপভোগ করেই পড়েছি আপনি প্রতিটি ধাপ খুব ভালোভাবেই আমাদের কাছে উপস্থাপনা করেছেন এজন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ এমন নিত্য নতুন গল্প করতে বেশ ভালই লাগে।

আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আজকে আপনি আমাদের পাগলা খালি , যাওয়ার গল্প শেয়ার করলেন।। আর এই পাগলা খালি মন্দির, স্থাপিত হওয়ার গল্প খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।। আসলে একেক জায়গার নাম হওয়ার পেছনে কোন না কোন গল্প অবশ্যই থাকে।

আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।