হাসপাতাল

in hive-120823 •  3 months ago 

আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করি সবাই আছেন? আমি ও ভালো আছি। কিন্তু আমার মনটা একটু খারাপ ছিল। আজকে আমি মন খারাপের গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।

সেদিন ছিল ২৫ শে জুন মঙ্গলবার। আমি সকাল বেলায় একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। তখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে। বোন হঠাৎ ফোন করে বলল তাড়াতাড়ি দিদার বাড়িতে আয়। দিদার খুব শরীর খারাপ। বোন যেহেতু দিদার বাড়িতে ছিল।আমার তো শুনে মাথা ঠিক ছিল না। যাইহোক আমি তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠি। উঠে রেডি হয়ে আসার আগেই শুনছি দিদাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মেজ মামা ,বড় মামা আর বোন মিলে দিদাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আমি পরে একা একা টোটো করে গিয়েছিলাম ।

IMG20240625183639.jpg

হাসপাতাল নামটা শুনলেই আমার খুব ভয় করে। ভেবেছিলাম আর হয়তো দিদাকে ফিরে পাবো না। আমরা ঠিক এইরকম ভাবেই দাদুকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। যেহেতু হাসপাতাল টা একটু দূরে তাই একা কোনো টোটো নিয়ে যেতে চায় না। অনেক টোটোকে জিজ্ঞেস করলাম। বললো যাবে না। কিন্তু শেষে একটা টোটো যেতে রাজি হল ।কিন্তু ভাড়া বেশি চাইছিল। কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে। যাই হোক সেই টোটো করে আমি চললাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। মনে মনে খুব কষ্ট হচ্ছিল ।ভাবছিলাম দিদাকে দেখতে পাবো তো ।হাসপাতালে গেটে পৌঁছেই দেখি বড় মামা ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে এসেছে। আমি বড় মামার সাথে ঢুকে পড়লাম হাসপাতালে ভিতরে ।

IMG20240625142451.jpg

হাসপাতালে ঢুকতেই দেখি দিদাকে টেচারে করে ওপরে তোলা হয়েছে। কিন্তু দিদার কোন জ্ঞান নেই। আমাদের কাউকেই চিনতে পারছে না ।সঙ্গে সঙ্গে নার্সরা স্লাইন দেবার ব্যবস্থা করছে ।দিদার যেহেতু বয়স হয়েছে তাই শরীরের প্রায় সব শিরা শুকিয়ে গেছে । নার্সরা প্রায় ১৫ জায়গায় সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে দেখলো কিন্তু কোথাও শিরা খুঁজে পাচ্ছে না ।আমরা তো আরো ভয় পেয়ে গেলাম। হয়তো ভাবলাম আর কিছু করার নেই। শেষে ডাক্তার এসে পায়ে শিরা খুজছিল ।সেখানেও শিরা খুঁজে পেল না ।এইসব দেখে তো মেজ মামা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো । যাইহোক মেজো মামাকে পাশে বসিয়ে রাখা হলো। কারণ এইসব দেখে মামার খুব মাথা ঘুরছিল।

IMG20240625113840.jpg

আমি আর বোন তো দুজনেই খুব কান্নাকাটি করছিলাম ।শেষে একজন ডাক্তার এসে একটা ইনজেকশন দেওয়া মাত্রই দিদার জ্ঞান ফিরতে শুরু করল ।তারপরে উনি স্লাইন দেওয়ার জন্য ঠিকঠাক হাতের শিরা খুঁজে পেয়েছিল। তারপর দিদাকে বেডে দেওয়া হল ।আস্তে আস্তে দিদা সুস্থ হতে লাগলো। ডাক্তার বাবু বললেন উনার সুগার ফল্ট করেছিল। দিদার যখন জ্ঞান আসলো তখন আমাদের কাউকে চিনতে পারছিল না। অনেকক্ষণ পর উনি আমাদের জিজ্ঞেস করছেন ।আমি কোথায়? আমার কি হয়েছে? কেনই বা আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। সেদিন যদি বোন দিদার কাছে না থাকতো তাহলে আমরা সেদিন দিদাকে হারিয়ে ফেলতাম।

যাই হোক আমরা তো সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম । তখন দিদা বলে আমি বাড়ি যাব। আমি তো ভালোই আছি। তারপর আস্তে আস্তে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিল ।আমি আর বোন বিকেল পর্যন্ত দিদার কাছেই ছিলাম। তারপরে আমার মা আসলো। মা এসে রাত্রিবেলা দিদার কাছে ছিল । মানুষের বয়স হয়ে গেলে দেখার কেউ থাকে না।আসলে হাসপাতালে গেলে চারিদিকে কত রকম মানুষ ।কত মানুষের কান্নার শব্দ। কত মানুষ বসে প্রার্থনা করছে হয়তো তার বাড়ির মানুষ সুস্থ কামনার জন্য। এইসব দেখে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আসলে সরকারি হাসপাতালে সব রকম পরিষেবা সবাই পায় না।

সরকারি হাসপাতালে যদি সব রকম পরিষেবা সবাই পেতো। তাহলে কত মানুষ সুস্থ ও ভালোভাবে বাড়ি ফিরতো। দিদার পাশে একজন ছিল উনি তো সকাল থেকে খুব কষ্ট পাচ্ছিল ।শেষে কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না দেখে। উনার মেয়েরা বন্ডে সাইন করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল।


যাই হোক আমার দিদা এখন অনেকটাই সুস্থ। আজ এখানেই শেষ করছি ।আবার কোন নতুন গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

যাইহোক আপনার দিদার কথা শুনে মনটা অনেক খারাপ লাগলো, হঠাৎ করে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়বে সেটা হয়তো আপনারা বুঝতে পারেন নাই। এবং আস্তে আস্তে যে সুস্থ হয়ে উঠেছে এর জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আসলে আপনার এই হাসপাতালের অভিজ্ঞতাটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

পোস্টটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Loading...

হঠাৎ করে যদি এরকম খবর আসে তাহলে অনেক চিন্তায় মাথায় ঘুরপাক খায়।। আর কোথায় আছেনা বিপদের সময় বিপদ সেজন্যই টোটো পারছিলেন না।। এটা একদম সঠিক বলেছেন যদি সরকারি হাসপাতালে সঠিক সময় চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে অনেক মানুষের জীবন বেঁচে যেত।।। যাক শুনে ভালো লাগলো শেষপর্যায়ে আপনার দিদা সুস্থ হয়েছে।।

আপনি ঠিকই বলেছে সরকারি হাসপাতালে সব রকম সুযোগ সুবিধা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ পাই না। তাই কত মানুষের প্রাণ হারাতে হচ্ছে এভাবে। আমার পোস্টটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কিছুদিন আগে আমি আমার বোন জামাই কে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ছিলাম ।। সেখানকার পরিবেশ খুব বেশি ভালো না এছাড়াও সেবা দিতে অনেক অবহেলিত করে তার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে ছিলাম।।

এখনকার সব সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা ভালো পাওয়া যায় না। কারণ দিদার ক্ষেত্রে দেখলাম একটা অসুস্থ মানুষকে প্রায় ১৫ জায়গায় সিরিঞ্জ ঢোকানো হয়েছে। তাও তার হাতের শিরা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা তো ভয় কান্নাকাটি করছিলাম। কিন্তু ওখানকার নার্স রা দিদাকে দেখে বিরক্ত প্রকাশ করছিল। আমিও মনে মনে ভাবছিলাম। যদি একটা সুস্থ মানুষের গায়ে এতবার সিরিঞ্জ ফোটানো হয় তখন তার কেমন লাগে। যাইহোক ডাক্তার ,নার্স প্রত্যেকেরই ব্যবহার আমার খুব খারাপ লেগেছে।

আমাদের বাংলাদেশেও একই অবস্থা দিদি আমার বোন জামাইকে নিয়ে গেছিলাম ।। একটা নার্সের উপর এত রাগ উঠেছিল ইচ্ছা করছিল তার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় কিন্তু কিছু করার নেই।

তারপরও এই সরকারি হাসপাতাল থাকার জন্য অনেক অসহায় মানুষেরা কম টাকায় চিকিৎসা করতে পারছে।

সর্বপ্রথম আপনার দিদার জন্য সুস্থতা কামনা করি তিনি খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আসলে কাছের মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং দূর থেকে যখন সংবাদ আসে তখন নিজেকে ঠিক রাখা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

এবং বিশেষ করে আপনার দিদা আপনাদেরকে মানুষ করেছে মায়ের মতো করে। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং আপনি সংবাদ পেয়েছেন তখন আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে কি আর বলব বলুন সৃষ্টিকর্তা যা করবেন সবকিছু আমাদের মেনে নিতে হবে। এবং টেনশন করবেন না হসপিটালে নিয়ে গিয়েছেন এবং ভালো ডাক্তার দেখান ঠিক হয়ে যাবে।

দিদা আমার শুধু কাছের মানুষই নয়। আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। যাকে ছাড়া আমার দিন চলে না। আমি হয়তো নিজের মাকে ছাড়াও জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারব ।কিন্তু ওই মানুষটাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত কিছু ভাবতে পারিনা। আসলে আগেকার দিনের মানুষ জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। সেই তুলনায় আমরা তেমন কিছু দিদার জন্য করতে পারি না। আমার পোস্টটি পড়ে কমেন্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।