অন্যদের বেলায় জানিনা তবে আমি ছোটবেলায় খুব করে চাইতাম কবে আমার বয়স বাড়বে, আর আমি বড় হবো। আমি আমার পরিবারে তখন সবথেকে ছোট ছিলাম। সবাই আমাকে ছটু বলেই ডাকতো। বাসায় কোন বৈঠক বসলে আমাকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলতো, কারণ আমি ছোট। এই ছোট থাকার কারণে কত যে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়েছি তা বলে শেষ করতে পারবো না।
আমার ছোট চাচার বিয়েতে বরযাত্রী যাবো, সবাই বাসে ঊঠলাম। বড়রা সবাই সিটে বসলো, আমরা যারা ছোট ছিলাম তাদের জন্যে বাসের মাঝামাঝি লম্বা একটা কাঠের বেঞ্চ দেয়া হলো, ছোটরা এখানেই বসে যাবে। তখন ঐ বাসের সিটে বসতে না পারার যে আফসোস ছিল সেটা হিমালয়ের থেকেও বড় হবে বৈ কি, কম নয়। নিজের অজান্তেই তখন বলেছিলাম কবে বড় হবো?
ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে যখন সিএ পড়ার জন্যে এডমিশন নিতে গেলাম তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। সিএ অফিস থেকে জানিয়ে দিল ১৮ বছরের কম বয়স তাই ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে এফিডেভিট করতে হবে, কি মহা ঝামেলা। তখন খালি মনে হত কেন আমার বয়স এখনো ১৮ বছর হয় না।
সিএ কোর্স কম্পলিট হলো, তখন আমার বয়স ২১ বছর। জবের জন্যে ইন্টারভিউ দিলাম, জব হলো, জয়েন করতে গিয়ে এডমিন অফিসার আমার এনআইডি চাইলো, তখনো আমার এনআইডি হয় নি, এপ্লিকেশন করেছি কিন্তু হাতে পাই নি। এটা বলতেই এডমিন অফিসার বলে ঊঠলো, এমা আপনি তো দেখি একদম বাচ্চা এনআইডি ছাড়া তো বাচ্চাদের জবে এলাউ করি না। আরো একবার চাপা কষ্ট বুকে নিয়ে বললাম
চাকুরি জীবনের ২ বছর পার করে মনে হলো ছোট এই জীবনে ২৪ বছর তো একাই পার করলাম, পছন্দের মানুষকে তো নিজের করে পেতে হবে, আবারো বয়সের বাধা। কারণ বড় দুই ভাই তখনো অবিবাহিত। তাদের সাথে দফায় দফায় মিটিং করলাম, বাবা তাদের ৬ মাস সময় দিলো, কিন্তু ৬ মাস পার হলেও তাদের বিয়ের খবর নেই।
এর পর কেটে গেল আরো ৫ টা বছর। আগের সেই ছোট আমি এখন এক মেয়ের বাবা। কাচা চুলের ফাকে ইদানীং সাদা চুল ঊঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে
গত পরসু ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে কার্ড না নিয়েই চলে এলাম। অফিসে আসার পর মনে হলো কার্ড নেই নি, আবার দৌড়ে গেলাম, ততোক্ষণে কার্ড মেশিনে আটকে গিয়েছে। আগে সিনয়র কলীগদের সাথে এমন হয়েছে, এই গল্প গুলো শুনতাম আর বলতাম বয়স্ক মানুষ তো ভুলে যায়। কিন্তু এবার নিজের সাথে এমন হতে দেখে মনে হচ্ছে শুধু বড় হয় নি বুড়ো ও হয়ে যাচ্ছি।
বাসা থেকে অফিসে যাবার সময় দরজায় তালা লাগিয়ে ৬ তলা থেকে ২ তলায় নামার পর মনে হয়, তালা ঠিক মতো আটকাই নি, আবারো এসে চেক করি, এসবই ইদানীং বেশি বেশি হচ্ছে আমার সাথে।
নিজের অজান্তেই অনেকের সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছে, আগের মত আর হৈহুল্লোর করা হয় না। হটাৎ করে ট্যুরে যাবার ভূত চাপে না। আগে বয়স হয় নি বলে কত কিছু মিস করতাম আর এখন বয়স বেড়ে গেছে বলে মিস করি। আহা কি অদ্ভূদ জীবন।
জানিনা আর ২-৩ বছর পর যখন মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবো আর স্কুল গেইটে বাচ্চারা আমাকে দেখে আংকেল বলে সম্বোধন করবে তখন আমার শুনতে কেমন লাগবে? তখন কি ছোটবেলার আফসোস এর ঠিক উলটো আফসোস হবে, বড় হলাম কেন?
আসলে বয়স যতই বাড়ে ততই পরিবারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধের উপর চলে আসে এবং এই পরিবারের দায়িত্ব গুলো সামলাতে গিয়ে নিজের ইচ্ছাগুলো মাটি করতে হয়। এবং বন্ধুবান্ধব কেউ খুব সহজে ছেড়ে দিতে হয়। অবশ্যই আপনার মেয়েকে নিয়ে আপনি যখন স্কুলে যাবেন তখন আপনার মেয়ের বন্ধুরা আপনাকে আংকেল বলে ডাকবে তখন শুনতে আসলেই অনেকটাই ভালো লাগবে। যাইহোক আপনি পোস্টটি অনেক সুন্দর ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি বলতে অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ভাই আপনার পোস্টটি।। ছোট থাকতে আমি এরকমটা ভাবতাম কবে বড় হব কবে কলেজে যাব, আর আপনার মত এরকম ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে কারো বিয়েতে সিটে বসতে পারেনি মনে হয়েছে কবে বড় হব।। ইন্টারে পরা অবস্থায় ১৮ বছর না হওয়ার জন্য ১০০ টাকা দিতে হবে আহা কি সমস্যা বয়স নিয়ে।। এছাড়াও বিয়ে করতেও বয়সের সমস্যা, আর এখন এতটাই বড় হয়ে গেছেন যে অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছেন এটাই বাস্তবতা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আহারে কষ্ট ! আপনার কষ্ট আমিও পুরোপুরিই বুঝতে পারি ।
কারণ আমিও পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ার কারণে একই রকম বৈষম্যের শিকার হয়েছি ছোট থেকে। কত চাপা অপমান নিয়ে বোরো হয়েছি সেটা আমিই জানি। কত কিছু খেতে পর্যন্ত দেয় নাই ছোট এই অজুহাতে।
তবে সেই দিন শেষ শয়তান। এখন আমিও বড়ো। এতো বড়ো যে এখন ছোট হতে ইচ্ছে করে।
আপনারও কষ্টের দিন খতম। এখনখুব শিগগিরই ছোট হতে ইচ্ছে করবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit