আজ আপনাদের সঙ্গে একটি প্রচলিত গল্প ভাগ করে নেব যেটি আমি আমার ঠাকুমার কাছে ছোটবেলায় শুনেছিলাম। এই গল্পটির মধ্যে দিয়ে আমার ঠাকুমা আমাদের পরনিন্দা পরচর্চার প্রতি সাবধানতার মানসিকতা তৈরি করেছিলেন। যেটি হয়তো আপনাদের অনেকেরই শোনা।
এক দেশে এক রাজা ছিল। রাজার খুব প্রশংসা ছিল রাজ্যে। তিনি খুব প্রতাপশালী ছিলেন। রাজ্যের সকল কাজ তিনি খুব সুন্দরভাবে চালাচ্ছিলেন তার ছিল একটি মাত্র কন্যা। তিনি তার কন্যাকে খুব অল্প বয়সেই পাশের রাজ্যের রাজপুত্রের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। বিবাহের ছয় মাস যেতে না যেতেই তার জামাতা হঠাৎ কালাজ্বরে মারা যান। তাই রাজা তার কন্যাকে তার নিজের রাজবাড়ীতে ফিরিয়ে আনলেন।
লিংক লোকেশন
রাজকন্যার চিন্তায় রাজা ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে শুরু করেন। একসময় তিনি বিছানা সজ্জা হয়ে গেলেন। তার সারা দেহে চর্মরোগ তৈরি হলো। এদিকে ঘরে তার বিধবা মেয়ে, এত বড় রাজ পরিবার, এত বড় রাজ কার্য কিন্তু তার অসুস্থতা দেখে সকলেই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কেবলমাত্র তার কন্যা তার সেবা শুশ্রুষা করতো।
রাজা অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাজ পরিবারের সকল সদস্য তার প্রতি এতই অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল যে তাদের আচরণ পাল্টে গিয়েছিল। তারা সর্বদা রাজাকে নানান রকম প্রবচনাক করতে শুরু করেছিল। তার আপনজনদের প্রবোচনা সহ্য করতে না পেরে রাজা একরাতে তার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে রইলেন আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যেন তিনি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান।
এইভাবে তার দিন কাটতে থাকে। একদিন এক সন্ন্যাসী আসেন রাজদরবারে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যেহেতু সন্ন্যাসী জানতেন না রাজা অসুস্থ তাই তিনি জেদ করে বসেন রাজার সঙ্গে দেখা না করে তিনি কোনভাবেই ফিরবেন না। এমতাবস্থায় সন্ন্যাসীর কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আর রাজ পরিবারের সদস্যদের কোন উপায় ছিল না তাই সন্ন্যাসীকে তারা রাজার গৃহে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
রাজার সাথে সন্ন্যাসীর দেখা হলে সন্ন্যাসীতাকে তার আরোগ্য লাভের উপায় হিসেবে বলেন তিনি যেন তার কন্যাকে নিয়ে বোনের মধ্যে নির্জনে পর্ন কুটিরে বাস করেন। তখন রাজা সন্ন্যাসীর নির্দেশ মতো তার বিধবা কন্যাকে নিয়ে বনে চলে যান।
এদিকে রাজ পরিবারের সকল সদস্য রাজার নামে নানান রকম নিন্দা চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। রাজ্যের প্রজা থেকে শুরু করে সকলের মধ্যে রাজার নিন্দা শুরু হয়ে যায়। রাজা ও ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে। কিন্তু যখন সেই নিন্দার কথা রাজার কানেও পৌঁছায়। তখন রাজা আবার কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে এতদিন লোক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলাম তাতে কেবল শরীরের কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু এখন যে মানুষের মধ্যে এমন গঞ্জনা নিন্দা চলছে যে তা সহ্য করা যাচ্ছে না।
ঠিক সেই সময়ে সেই সন্ন্যাসী এসে হাজির হয় রাজার সামনে এবং রাজাকে বলেন তার আরোগ্য হয়েছে তার নিন্দা স্তুতির জন্যই। যারা তার নিন্দা করেছিল তারা রাজার সকল খারাপ কর্মের ফল নিজেদের কর্মফলে সঞ্চয় করেছে ফলে রাজার আরোগ্য লাভ হয়েছে।
তিনি রাজাকে আরও একটি শিক্ষা দেন যে অন্যের কখনো নিন্দা করা উচিত নয় তাতে তার কৃতকর্ম ক্ষয় হয়ে যারা তার নিন্দা স্তুতি করে তাদের মধ্যে সেই কৃতকর্ম সঞ্চয় হয়। সর্বদা নিন্দা বর্জন করা উচিত। কারোর উপকার করতে না পারলে তার নিন্দা করে তাকে অপরের সামনে ছোট করা উচিত নয় তাতে নিজেরই কৃতকর্মের ফল খারাপ হয়। সকল প্রাণীর মধ্যে স্বয়ং ভগবান বিরাজ করছেন তাই যখন কারণ নিন্দা করা হচ্ছে তখন ভাবতে হবে সে নিন্দা কোন প্রাণী বা মানুষের হচ্ছে না সে নিন্দা স্বয়ং ভগবানের সৃষ্টির করা হচ্ছে। আমরা সামান্য মানুষ হয়ে কখনোই ভগবানের সৃষ্টির নিন্দা করতে পারি না।
আপনার লেখাটি অত্যন্ত শিক্ষামূলক এবং গভীর বার্তাপূর্ণ। রাজা ও তার কন্যার জীবনের ঘটনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায় নিন্দা মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে বড় বাধা। অন্যের দোষ খোঁজা কিংবা নিন্দা করার বদলে যদি সবাই নিজেদের চরিত্র গঠনে মনোযোগ দেয়, তাহলে সমাজ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
আপনার লেখার প্রতিটি লাইন মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। সত্যিই, আমরা যখন কাউকে নিন্দা করি, তখন সেই কৃতকর্মের দায় আমাদের উপরই বর্তায়। আপনার এই শিক্ষামূলক গল্প সবার মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ্ আপনাকে আরও এমন সুন্দর ও শিক্ষণীয় গল্প লেখার তৌফিক দান করুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আজকে আপনি আমাদের সাথে চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আসলে নিন্দা করা মোটেও ঠিক না হিংসা খুবই ভয়ঙ্কর একটা জিনিস যেটা মানুষকে পতনের দিকে নিয়ে যায় আমার কাছে মনে হয় আপনি মানুষকে হিংসা না করে যদি আপনি অল্প সময়ের মধ্যে কিছু করতে চান তাহলে নিজের পরিশ্রমটাকে একটু বাড়িয়ে দেন।
কে কত টাকা ইনকাম করছে কে কত বড়লোক হয়ে গেছে সেদিকে নজর না দিয়ে নিজের পরিশ্রম তাকে একটু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন অবশ্যই আপনি সফল হবেন তবে মানুষের নিন্দা করে নিজের কৃতকর্মটাকে কমিয়ে নেওয়ার মতো বোকা মানুষ হয়তো বা এ পৃথিবীতে বর্তমান সময়ে অনেক দেখা যায় তবে এটা করা মোটেও ঠিক না অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে উপলক্ষে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit