সেই অপূর্ব স্মৃতি

in hive-120823 •  yesterday 

নমস্কার বন্ধুরা। আজ আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন একটি গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে থাকে কিছু না কিছু স্মৃতি। সেই স্মৃতি ভালো ও মন্দে গড়া। আর সুখের স্মৃতিগুলি যখন মনে ভেসে আসে তখন যে অনুভূতি মনে জন্ম নেয় তা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তেমনই এক স্মৃতি ছিল আমাদের অর্থাৎ ঘূর্ণি স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এর ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রীর। আজকে আমি সেই স্মৃতিই আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

1000161793.jpg

লিংক

সত্যি কথা বলতে কি শুধু লেখাপড়ায় নয় তার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিভা যেমন ছবি আঁকা সংগীত নৃত্য আবৃত্তি নাটক এবং আরো বিভিন্ন প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ করে দেয় বিদ্যালয়। ঠিক তেমনি একটি সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ দ্বারা আয়োজিত 'শিশু বিজ্ঞান উৎসব ২০১৩' তে। আমাদের বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আমরা বিজ্ঞানের মডেল প্রদর্শন করেছিলাম। আমাদের মডেল ছিল ---

ক) ত্রিভুজের সর্বসমতার শর্ত
খ) চুম্বকের আকর্ষণ ধর্ম
গ) রেইন এলার্ম (Rain Alarm)

এই মডেল গুলির মধ্যে তৃতীয় মডেলটি সকলের মন ছুয়ে গিয়েছিল এবং এত অল্প সামগ্রী দিয়ে এত কার্যকরী একটি যন্ত্র দেখে সবাই খুব খুশি হয়েছিল। বিভিন্ন দর্শকরা যন্ত্রটির উপকরণ প্রস্তুতি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে নিজেরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছিলেন এবং আমাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম ও অন্যান্য শ্রেণীর অনেক ছাত্রী এটি তৈরি করে অনেক সুবিধা পেয়েছিল এবং আমরা 'শিশু বিজ্ঞান উৎসব' এ প্রশংসা লাভ করেছিলাম।

তারপর আমাদের বিদ্যালয় এই মডেলটি নিয়ে 'নদীয়া জেলা বিজ্ঞান মেলা'-- ২০১৩ এ অংশগ্রহণ করে একইভাবে জয়ী হয় এবং প্রথম স্থান লাভ করে। বিদ্যালয় শিক্ষিকাগণ ও অন্যান্য কর্মীদের সহযোগিতায় এবং বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একান্ত প্রচেষ্টায় এটি সফল হয়। তারপর আমাদের বিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্তরের বিজ্ঞান মেলা ২০১৪ তে অংশগ্রহণ করে। এই অনুষ্ঠানটি কলকাতা বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে ১২ - ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করেছিল । তাদের প্রদর্শিত বিভিন্ন মডেল দেখে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম এবং আমাদের মডেলটি সেখানে প্রশংসা লাভ করেছিল।

*এবার আসা যাক সেই মডেলের অর্থাৎ রেইন অ্যালার্ম এর কথায়। এটি খুব সহজে তৈরি করা যায় এবং খুব কাজের এমন একটি মডেল।

উপকরণ:

একটি ফানেল, মোম বা প্যারাফিন, দুটি তামার পাত, ব্যাটারি সুইচ, একটি এলার্ম। বর্ষাকালে এই রোদ আবার এই বৃষ্টি। যেটা সাধারণত হয়ে থাকে। অনেকেই দুপুরে বাইরে জামাকাপড় মেলে দিয়ে ঘরে বিশ্রাম করেন। তাই হঠাৎ বৃষ্টি এলে সেই জামা কাপড় ভিজে যায়। কিন্তু এই যন্ত্রের সুইচ টি অন করে বাইরে রাখলে এর মধ্যে বৃষ্টির জল পড়লে এটি বেজে ওঠে। এবং মানুষ বুঝতে পারে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে।

প্রস্তুতি ও কার্যপ্রণালী :

ফানেলের নীচ দিয়ে দুটি তামার পাত এমনভাবে প্রবেশ করতে হবে যাতে দুটির মধ্যে সামান্য ফাঁক থাকে। তারপর প্রথম পাত্তি থেকে যে তারটি বেরোবে তা প্রথমে একটি সুইচ ও তারপর একটি অ্যালার্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এবং অপর পাতের তারটি ব্যাটারির অপর প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এখন সুইচ অন করে রেখে দিলে পানের জল পড়লে বর্তনী সংহত হবে এবং জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা অ্যালার্ম বেজে উঠবে।

1000161791.jpg

আমাদের মডেলের একটা প্ল্যান খাতায় এঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম

সেই স্মৃতি আজও আমার মনে অক্ষত রয়েছে। এত বছর পরেও কিন্তু সেই স্মৃতি আবছা হয়ে যায়নি। আজ হঠাৎই আমার এক স্টুডেন্টদের মুখে এই বিজ্ঞান মঞ্চের কথা শুনে আমার সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। তাই আপনাদের সাথে আজ আমি সেই স্মৃতিটুকু ভাগ করে নিলাম।

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...