বিশেষ মানুষের বিশেষ দিন উদযাপন

in hive-120823 •  6 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আশা করছি আপনাদের সকলের দুর্গা পুজো ভালোই কাটছে। আজকে আমি আপনাদের সাথে এই বছরের অষ্টমী এবং নবমীর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

সপ্তমী শেষ হতে না হতেই কখন যে অষ্টমী পেড়িয়ে নবমী চলে এলো বুঝতেই পারলাম না। তোমাদেরও নিশ্চয়ই এই বছর একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই তো? অষ্টমী যেহেতু এ বছর সকাল সকালই ছেড়ে গিয়েছিল তাই খুব ভোর বেলায় উঠে রেডি হয়ে প্রথমেই চলে গিয়েছিলাম অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য। এত সকাল বেলায় অঞ্জলি, তাতে কিন্তু মানুষের কোন সমস্যাই হয়নি। প্রতি বছর মণ্ডপে যেরকম ভিড় হয় অঞ্জলি দেওয়ার সময় এই বছরও কিন্তু সেই একই রকমই ভিড় ছিল। আসলে বাঙালির আবেগের পুজো বলে কথা। সারা বছরের অপেক্ষার পর এই কটা দিন মানুষ আনন্দে মেতে থাকে ।তাই ভোর হোক বা সন্ধ্যে তাতে মানুষের বিশেষ কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না। তাই পাড়ার সকলে দল বেঁধে ভোর বেলায় মণ্ডপে গিয়ে অঞ্জলি দিয়েই দিনটা শুরু করেছিলাম।

এত বছর অষ্টমী মানে দুর্গাপুজোর অঞ্জলি এবং তারপর লুচি,ছোলার ডাল , মিষ্টি ইত্যাদি খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে একটু বেড়িয়ে পড়া---এই ছিল আমার রুটিন। কিন্তু এই বছর থেকে এই রুটিনের সাথে আরও একটি দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে। বলা যায় দায়িত্বটা আমি নিজেই আমার কাঁধে চাপিয়ে নিয়েছি। সেই দায়িত্বটা কি? বলছি বলছি.....

1000093315.jpg

আসলে অষ্টমীর দিনটা আমার হবু শাশুড়ি মায়ের জন্মদিনও বটে। তাই ওনাকে এই বিশেষ দিনে খুশি করার দায়িত্বটা তো আমাকেই নিতে হবে। প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম সকালবেলায় অঞ্জলি দিয়ে এসে ওনার জন্য নিজের হাতে একটু পায়েস রান্না করব। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে করে রেডি হয়ে অঞ্জলি দিয়ে ফেরার পথে পায়েস বানানোর সমস্ত উপকরণ ---দুধ, গোবিন্দভোগ চাল, কাজু, কিসমিস, এলাচ , তেজপাতা ইত্যাদি সমস্ত কিছু কিনে বাড়ি নিয়ে আসি।

1000093312.jpg

এরপর শুরু হয় রান্নার আয়োজন। আর পায়েস টা কিভাবে বানালাম সেটা না হয় অন্য একটা পোস্টে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আজকে শুধু বিশেষ দিনটাই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। বেশ কিছুটা সময় নিয়েই ধীরে সুস্থে পায়েসটা রান্না সম্পূর্ণ করলাম। এরপর আরো একটা কাজ করলাম সেটা হল ওনার জন্য একটা বার্থডে উইশ এর কার্ড তৈরি করলাম। সেটাও প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম যে কিভাবে কার্ডটা বানাবো। কার্ড বানানোর সমস্ত উপকরণ আমার কাছেই ছিল। দোকান থেকে আলাদা করে আর কিছু কিনে আনতে হয়নি।

1000093299.jpg

বসে পড়লাম কার্ড বানাতে। অনেকদিন বানানো হয়নি, তাই প্রথমে একটু অসুবিধাই হচ্ছিল কিন্তু তারপর যখন কাজে হাত দিলাম দেখতে দেখতে কিছু সময়ের মধ্যেই আমার কার্ড বানানো কমপ্লিট হয়ে গেল। পারসোনালি কার্ডটা কিন্তু আমার বেশ ভালোই লেগেছিল। এরপর আর কি , যার জন্য বানানো হলো তার কাছে পৌঁছানোর জন্য রেডি হয়ে নিলাম। রেডি হয়ে হবু বরকে ফোন করলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সামনে এসে হাজির। তারপর দুজনে বেড়িয়ে পড়লাম বার্থডে কালকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। রাস্তায় ওনার পছন্দের দুটো পেস্ট্রিও কিনে নিয়েছিলাম মিও অ্যামোরে থেকে আর তার সাথে দুটো গোলাপ ফুলও নিলাম ।কারণ গোলাপ ফুল ওনার খুব পছন্দের ফুল। আর যেহেতু কিছুদিন আগেই শাড়ি দিয়েছিলাম জন্মদিনের অগ্রিম উপহার হিসেবেই তাই আলাদা করে আর কোন উপহার কেনা হয়নি। এরপর দুজন মিলে পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। এবং যার জন্য এত আয়োজন তার রিয়াকশন দেখার জন্য আমরা দুজনেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম ওনার জন্য। উনি তখন রান্নাঘরে দুপুরের খাবার তৈরি করছিলেন।

1000093298.jpg

সেই সময় টুকুর মধ্যে আমি সমস্ত কিছু ডেকোরেট করে ফেললাম। এরপর মহারানী কে ঘরে নিয়ে আসা হলো এবং তিনি তো এই সমস্ত কিছু দেখে ভীষণ লজ্জায় পড়েছিলেন সাথে ওনার চোখমুখে আনন্দটাও প্রকাশ পাচ্ছিল। যেটা দেখার জন্যই এই সব করা। আসলে আমরা সবাই চাই জন্মদিনটা যাতে আমাদের একটু স্পেশাল হয়। তার সাথে আমাদের সঙ্গে এমন কিছু মানুষ থাকুক যারা আমাদের জন্মদিন টাকে আরো বেশি বিশেষ করে তুলবে। কিন্তু সব সময় সেটা আমরা প্রকাশ করতে পারিনা। এনার ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম ব্যাপার। উনিও চান যে ওনার জন্মদিনে কেউ ওনাকে পায়েস বানিয়ে খাওয়াক বা একটা ছোট্ট সেলিব্রেশন হোক কিন্তু ওটা তিনি মুখে প্রকাশ করতে পারেন না। তাই আমি নিজেই সবটা বুঝে নিয়ে একা হাতে ছোট্ট করে সমস্ত আয়োজনটা করে ফেলেছিলাম। উনি তো প্রথমে এই সমস্ত কিছু দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলেন তারপর আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম---

" কেমন লাগছে তোমার বলো।"

-----"ভীষণ ভালো লাগছে রে, সাথে কান্নাও পাচ্ছে। এত কিছু তুই একাই করলি। এত কষ্ট করতে গেলি কেন?"

------ "এই যে তুমি এত্ত খুশি হলে সেই জন্য।"

1000093319.jpg

তারপর উনি আমাকে চুমু খেয়ে আদর করলো। তারপর আমি যে কার্ডটা বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা খুলে দেখলো। কার্ডটা খুলতেই প্রথম রিয়েকশন ছিল ---

----"ওওওমা কি সুন্দর বানিয়েছিস। Thank you রে।"

1000093317.jpg

ওই কার্ডের মধ্যে অনেক কিছু লেখা ছিল সেগুলো পড়তে লাগলেন। এত কিছু কথা পড়ে একটু বোধহয় ইমোশনালও হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মানুষটা এতটাই সরল- সাধাসিধে -মিষ্টি যে এইটুকু উনার জন্য করতেই হয়। কারোর জন্য কিছু করে যখন আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় তখন কিন্তু বেশ ভালই লাগে। তাই না?

আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে এইটুকু ওনার জন্য করতে পেরে। ভবিষ্যতেও যেন মানুষগুলোর জন্য একই রকম ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি সেটা আমি সব সময় চেষ্টা করবো। আপনারাও নিশ্চয় আপনাদের প্রিয় মানুষ দের জন্মদিনটা বিশেষ করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেন। তাই তো?

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনার যত্ন এবং ভালোবাসা আপনার হবু শাশুড়ি মায়ের প্রতি স্পষ্ট। এমন সুন্দর একটি দিন উদযাপন করা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য! পরিবারে এমন সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ভবিষ্যতেও আপনার এই ভালোবাসা অব্যাহত থাকুক। আপনার জন্য শুভকামনা রইল। ❤️❤️

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।❤️

TEAM 7

Congratulations!

THE QUEST TEAM has supported your post. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags


postbanner.JPG

Curated by : @sduttaskitchen

Thank you so much.

আপনার গল্পটা পড়ে মনটাই ভরে গেল! খুব সুন্দরভাবে আপনি আপনার হবু শাশুড়ি মায়ের জন্য দিনটাকে বিশেষ করে তুলেছেন। পায়েস রান্না করা, কার্ড তৈরি করা, এবং ছোট্ট সেলিব্রেশন—সবকিছুই খুব আন্তরিকভাবে করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনার যত্ন, ভালোবাসা, এবং চিন্তাভাবনা ওনাকে স্পেশাল ফিল করিয়েছে, আর সেটাই তো সবচেয়ে বড় আনন্দের। কারোর মুখে হাসি ফোটাতে পারার অনুভূতিটা সত্যিই অসাধারণ। আপনাকে এবং আপনার হবু পরিবারকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি, ভবিষ্যতেও এমন সুন্দর মুহূর্তগুলো আপনি সবার সাথে ভাগাভাগি করতে পারবেন। ভালো থাকুন!

আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর কমেন্ট করার জন্য। আর এত্ত best wishes এর জন্যও অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।