নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজকে আবারও চলে এসেছি নতুন একটা লেখা নিয়ে। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
অনেকদিন পর কালকে বুক্ সেলফ টা গোছাতে গিয়ে সেই পুরোনো স্কুল ম্যাগাজিন টা হাতে আসে। সত্যি কথা বলতে গেলে এই স্কুল ম্যাগাজিন টা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিলও বলা যেতে পারে কারণ এই ম্যাগাজিনটার সাথে আমার বাবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বাবার সাথে স্মৃতি আমার খুব সামান্যই ,আর তাছাড়া যেহেতু সেই সময় কোনো মোবাইল ফোন ছিল না আমাদের বাড়িতে সেই জন্য বাবার কোনো ফটোও নেই। তাই এই ধুলো মলিন আধ ছেঁড়া ম্যাগাজিনটা হাতে আসতেই একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।
বিদ্যালয়ের ম্যাগাজিন |
---|
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে সব কাজ সেরে বসে পড়লাম ম্যাগাজিনটার পেজগুলো উল্টে পাল্টে দেখার জন্য। আগের একটি পোস্টেই বলেছিলাম ২০০৯ সালে আমি ঘূর্ণী স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই ।আর এই ম্যাগাজিনটা পাবলিস্ট হয় ২০১০ সালে। আর সেই সময় আমি পড়ি ষষ্ঠ শ্রেণীতে। আগের পোস্টেই আমি বলেছিলাম যখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই তখন চেনা পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথেও দেখা হওয়ার সুযোগ অনেকটা কমে যায় কারণ ভর্তির সিকুয়েন্স অনুযায়ী আমাকে 'D' সেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার সময় রেজাল্ট অনুযায়ী সেকশন চেঞ্জ হয়ে যায় এবং আমি 'A' সেকশনে চলে আসি। এত কিছু বলার কারণ হলো লেখার পাশাপাশি আমি যে ছবিটি দেব সেখানে নাম ,শ্রেণী এবং বিভাগ লেখা আছে ।তাই যারা আমার আগের পোস্ট পড়েছেন অনেকের বিভ্রান্তি হতে পারে। তাই তাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই এই কথাগুলো বলা।
এবার আসি আসল গল্পে---স্কুল ম্যাগাজিন তার সাথে আবার বাবার স্মৃতি কিভাবে জড়িয়ে আছে, এই গল্পই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
তখন সবে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছি। একদিন ক্লাস টিচার জানালেন আমাদের সকলকে কিছু লিখে জমা দিতে হবে কারণ স্কুল থেকে ম্যাগাজিন পাবলিশ হবে। আমরা যেন প্রত্যেকেই কিছু না কিছু লিখি। সেই সময় আমাদের যিনি ক্লাস টিচার ছিলেন ওনাকে আমরা ভীষণ ভয় পেতাম তাই উনি যখন বলেছেন সকলকে কিছু লিখতে হবে তখন যেভাবেই হোক কিছু না কিছু একটা লিখে নিয়ে যেতেই হবে----এটাই মনে মনে ভেবেছিলাম। তারপর থেকেই নানা রকম ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করলাম কি এমন লেখা যায়। কিন্তু তখন নেহাতি খুব ছোট আর এইসব ব্যাপারে একেবারেই অনভিজ্ঞ তাই আকাশ-পাতাল ভেবেও কিছুই বের করতে পারলাম না।
পরের দিন স্কুলে গেলাম। অনেকেই দেখলাম অনেক কিছু লিখে এনেছে। তারা সেগুলো ম্যামের কাছে জমা দিল। তারপর ম্যাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন---
"পিংকি, তুমি কিছু লিখে আনো নি?"
----"না ম্যাম, এখনো লেখা হয়নি। আমি কালকেই নিয়ে আসবো।" (ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম)
এরপর আর কি। বাড়ি গিয়ে জুড়ে দিলাম কান্না। তারপর মা এসে একবার জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে ,বাবা এসে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। আমি শুধু চুপ করে থাকি আর কেঁদেই যাই। তারপর অনেক কষ্টে বাবা জানতে পারলো স্কুল থেকে কিছু লিখতে বলা হয়েছে। আর আমি আকাশ-পাতাল ভেবেও কিছুই লিখতে পারছি না। তখন বাবা বলল ----
"চল দুজন মিলে কিছু লিখি। আমিই তোকে বলে দিচ্ছি তুই আমাকে শুধু একটু সাহায্য করবি। তাহলেই হবে।"
তারপর কান্না থামিয়ে দুজন মিলে খাতা পেন নিয়ে বসে পড়লাম লিখতে। বাবা বলল, "আমরা তাহলে বারো মাস নিয়ে কিছু একটা লিখি।"
এর পর শুরু হল কবিতা লেখার ঘটা----
বৈশাখেতে দারুণ গরম ঝরে পড়ে ঘাম ,
জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে পাকে লিচু আম জাম ।
আষাঢ়েতে কাঁঠালপাকে খেতে মজা বড়ো,
শ্রাবণেতে মালদার আম ইয়া বড়ো বড়ো ।
ভাদ্র মাসে তাল পড়ে দুম- দুম -দুম ,
আশ্বিনেতে লেগে যায় দুর্গা পূজার ধুম।
কার্ত্তিক মাসে কার্ত্তিক পূজা ওঠে ফুলকপি,
অগ্রহায়ণ মাসে নতুন আলু আর বাঁধাকপি ।
পৌষ মাসে পুলি পিঠে খেতে মজা বড়ো ,
মাঘ মাসে সরস্বতী পূজা লাগে বড়ো ভালো।
ফাল্গুনেতে কোকিল ডাকে সবে ডালে বসে,
চৈত্র মাসে চড়ক পূজা হয় আশেপাশে।।
আমার লেখা কবিতা |
---|
লেখা শেষ হতেই আমার তো আনন্দের আর সীমা থাকে না। শুধু ভাবতে থাকি কখন সকাল হবে স্কুলে যাব আর সব বন্ধুদের দেখাবো। ভাবতে ভাবতেই সেই দিনটা কেটে যায় তারপর সকালে হয় স্কুল টাইমে স্কুলে যায় এবং সব বন্ধুদের আমার লেখা দেখাই। সবাই তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যায়।
----" কি ভালো লিখেছিস....."
আমিও বলতে থাকি---" হ্যাঁ আমি লিখেছি, বাবা শুধু আমাকে একটু সাহায্য করে দিয়েছে তাছাড়া নিজেই লিখেছি।"
তারপর ক্লাস টিচার আসেন তার কাছে লেখা জমা দিই। তিনিও পড়ে বলেন," বা বেশ ভালো হয়েছে তো।" আমি তো খুব খুশি হয়ে যাই।
আমার লেখা ছড়া ম্যাগাজিনে পাবলিস্ট হতে চলেছিল নাকি বাবার লেখা সেটা আমরা বাবা আর মেয়েই জানতাম।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এত ভালোবেসে যে মানুষটা এই ছড়াটা লিখে দিয়েছিল সে কিন্তু নিজের চোখে ছড়াটা ম্যাগাজিনে পাবলিস্ট হতে দেখে যেতে পারেননি।
বাবার সাথে যে কোন স্মৃতি মেয়েদের কাছে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাবার মত করে মেয়েদের আর কেউ ভালবাসতে পারে না। স্কুল ম্যাগাজিনে আপনি কবিতা লিখেছিলেন শুনে খুব ভালো লাগলো আসলে নিজেই স্কুল নিয়ে বারবার আমাদের মাঝে তুলে ধরছেন এতে আমারও খুব ভালো লাগছে। কারণ এই স্কুলের সাথে আমারও বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগের পোস্টে ও আপনি কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে আপনিও ঘূর্ণী স্বর্ণময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছেন। তাই একই বিদ্যালয়েরর আরো একজন শিক্ষার্থীকে এই প্ল্যাটফর্মে পেয়ে আমিও ভীষণই আপ্লুত ।ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit