কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যমন্ডিত জগদ্ধাত্রী পুজো পরিক্রমা

in hive-120823 •  6 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। সকলের সুস্থতা কামনা করে আমি আমার আজকের ব্লগটি শুরু করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন কৃষ্ণনগর জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত। এখানে সবচেয়ে ধুমধাম করে যে উৎসব আয়োজিত হয় সেটি হল এই জগদ্ধাত্রী পূজা। এই পুজোর সময় মানুষের উন্মাদনা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এই চারটে দিন কৃষ্ণনগরের রাজপথ লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে। মানুষের যেন অন্যরকম উন্মাদনা থাকে। এটি কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য যা বছরের পর বছর মহাসমারহে পালিত হয়ে আসছে।

1000110789.jpg

এই বছর আমার জগদ্ধাত্রী পুজো কেমন কাটলো তা বলার আগে কৃষ্ণনগরে কিভাবে এই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হল সেই নিয়ে আপনাদের একটি সংক্ষিপ্ত গল্প বলবো।

ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা জানতে পারবো ১৭৫৪ সালে কৃষ্ণনগরের তৎকালীন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় একবার বিশাল অংকের কর জমা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই অপরাধ হেতু নবাব আলিবর্দী খাঁ তাকে কারাবন্দি করেছিলেন। আবার ১৭৬৪ সালে মীরকাশিম পুনরায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং তার পুত্রকে মুঙ্গেরে কারাবন্দী করেন। দীর্ঘকাল কারাবন্দী থাকার ফলে রাজ বাড়িতে বহু বছরের প্রচলিত রাজরাজেশ্বরীর পূজা তিনি দেখতে পান না। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যখন তিনি জলপথে ফিরছেন তখন রাজরাজেশ্বরী প্রায় বিসর্জনমুখী। তাই তিনি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন মা রাজরাজেশ্বরী কে চোখের দেখাটুকু দেখতে না পেয়ে। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েন এবং একটি স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে তিনি এক অপরূপা সুন্দরী কিশোরীকে দেখতে পেয়েছিলেন। কথিত আছে সেই কিশোরী তাকে স্বপ্নদেশে বলেছিলেন , কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে তার পূজা দিতে, তাহলেই মা রাজরাজেশ্বরী কে দেখতে না পাওয়ার দুঃখ তার ঘুচে যাবে। আর এই ভাবেই শুরু হয় কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো।

কৃষ্ণনগরে এতগুলো জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের পুজো হয় এবং এত সুন্দর সুন্দর থিম করা হয় যে মাত্র দুদিনে সেগুলো সব ভালোভাবে দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও মানুষের অদম্য উদ্দীপনা সেটাকেও সম্ভব করে তোলে। যেহেতু এই পুজোর সময় রাজপথ লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে এবং বাইক নিয়ে যাওয়া ও সমস্যা জনক হয়ে পড়ে তাই বহু মানুষ পায়ে হেঁটে সমস্ত মণ্ডপ পরিদর্শন করেন।

গত দুই বছর আমি টেট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এই জগদ্ধাত্রী পুজোয় একদিনও বেড়োতে পারিনি। তাই এই বছর প্রতিদিনই আমি অনেক অনেক মণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। চলুন কিছু পুজো মন্ডপের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই।

প্রথমে আমরা চলে গিয়েছিলাম অন্নপূর্ণা সরণির অন্ন মাতাকে দর্শন করতে। এ বছর এখানকার থিম ছিল মহাকাল। অসাধারণ সুন্দরভাবে থিমটি আয়োজিত করেছিল।

1000111503.jpg

https://www.facebook.com/share/r/19PKp3euft/

অন্নমাতা পরিদর্শনের সম্পূর্ণ ভিডিও

তারপর আমরা পরিদর্শন করেছিলাম প্রভাত সংঘ, যেটা নাজিরা পাড়ায় রয়েছে।

1000111472.jpg

প্রভাত সংঘ

তারপর আমরা চলে গেছিলাম 'মাদল' নামে একটি সাবেকি বাড়ির পুজো দেখতে।

1000111474.jpg

মাদল

এরপর গিয়েছিলাম গোলাপট্টি বারোয়ারির ঠাকুর পরিদর্শন করতে।

1000111476.jpg

গোলাপট্টি

এরপর গিয়েছিলাম প্রীতি সম্মিলনীর অসাধারণ সুন্দর মণ্ডল পরিদর্শন করতে।

1000111483.jpg

https://www.facebook.com/share/r/1ApGEmtPKN/

প্রীতি সম্মিলনী পরিদর্শনের সম্পূর্ণ ভিডিও

তারপর আমরা চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগরের আরো একটি প্রসিদ্ধ ঠাকুর পরিদর্শন করতে যেটি কৃষ্ণনগরের পার্থ বাজারে হয়ে থাকে। এবারে এখানকার প্রধান আকর্ষণ ছিল লাইটিং দিয়ে তৈরি একটি অসাধারণ প্যান্ডেল।

1000111506.jpg

পার্থ বাজার

একটি পোস্টে কৃষ্ণনগরের সমস্ত ঠাকুরের সাথে আপনাদের পরিচয় করানো সম্ভব নয়। তাই বাকি মণ্ডপ এবং থিমগুলির সাথে আপনাদের আমার পরবর্তী পোস্টের মাধ্যমে পরিচয় করাবো। আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করছি আপনাদের সকলের আমার ব্লগটি ভালো লাগবে। ভালো লাগলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য জানাবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
  • প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে কৃষ্ণনগরের বেশ কিছু বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো প্যান্ডেল পরিদর্শন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

  • আপনাদের অনেকের পোস্ট পড়েই কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবে এই পুজো কবে থেকে কিভাবে শুরু হয়েছিলো, সেটিও আপনি খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন, যে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ কথা একদমই সত্যি দুদিনের মধ্যে এতো পুজো দেখে শেষ করা একটু অসম্ভব বটে। তবে ওই যে আপনি লিখেছেন, মানুষের মধ্যেকার আনন্দ ও উদ্দীপনায় এতটাই বেশি যে সকলে চেষ্টা করে যাতে সবগুলো পুজো তারা দেখতে পারে।

  • যদিও আপনি অনেকগুলো প্যান্ডেলের ছবি শেয়ার করেছেন, তবে শুরুর মহাকাল থিমের প্যান্ডেলটি আর একদম শেষের আলোকসজ্জা দিয়ে করা প্যান্ডেলটি আমার বেশি পছন্দ হয়েছে। এই সবকিছুর পাশাপাশি আপনাকেও খুব সুন্দর লাগছে একথাও অস্বীকার করছি না ☺। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম, নিশ্চয়ই আরও কিছু ভালো পুজো প্যান্ডেলের ছবি দেখতে পারবো। ভালো থাকবে।

অবশ্যই দিদি। আমি যেটুকু ক্যাপচার করতে পেরেছি সবটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

1000024150.png

Thank you so much.

Loading...

@pinki.chak ইনি কি সেই রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র যার সভায় গোপাল ভাঁড় ছিলেন?
যদি তাই হয়, তোমার লেখায় উল্লেখিত ইতিহাস আমার অজানা ছিল, অনেক ধন্যবাদ তথ্য মূলক একটি লেখা উপহার দেবার জন্য।

এরপর যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হলো, কৃষ্ণ নগরের কোনো প্যান্ডেল বোধহয় তোমার দৃষ্টি থেকে বাদ পড়েনি!

মানে, সবকটা প্রতিমাই তোমাকে দেখে মনে মনে ভেবেছেন, মুখটা চেনা চেনা লাগছে!
তারপর বুঝেছেন এর আগে কোন প্যান্ডেলে তুমি তার দর্শনে উপস্থিত হয়েছিল!

ইতিহাস অনেকেই অপছন্দ করে, তবে সৌভাগ্য আমি ভারতীয় তথা ওয়ার্ল্ড ইতিহাস খানিক পড়বার সুযোগ পেয়েছি।

আমার বেশ ভালো লাগে, বিভিন্ন দেশ তথা স্থানের ইতিহাস জানতে, তারমধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থান এবং সেটার পিছনের গল্প, সেই স্থানের খাদ্যের উদ্ভাবণীর ইতিহাস, মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ধরন ধারণ ইত্যাদি।

যখন যখন আমার ক্যুরেশন থাকে, সবচাইতে এই বিষয়গুলোকে আমি বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি।

তোমার লেখা প্রশংসার দাবিদার, এমন ভাবেই কাজ করে যাও, তোমার জলপাইয়ের আচার এর পোস্ট দেখেছি, তবে এই ইতিহাসের বিষয়টি আমার কাছে বেশি দৃষ্টিনন্দন ছিল।

লেখায় টক ঝাল মিষ্টি বিভিন্ন স্বাদের দেখা না মিললে এক্ ঘেয়েমি লাগে পড়তে, কাজেই রান্নার লেখাও দেবে, অনেকেই ভীষণ আগ্রহী এই প্ল্যাটফর্মে ভারতীয় রান্না নিয়ে।

হ্যাঁ দিদি, ইনিই সেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, যার রাজসভায় রসিক রাজ গোপাল ভাঁড় বিরাজ করতেন।

এখনো পর্যন্ত রাজ বাড়িতে গেলে যে দালানে মা রাজ রাজেশ্বরীর পূজা হয় সেখানে এই গল্প বর্ণিত আছে। যদি কখনো কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির মন্দির দালানপরিদর্শন করেন তাহলে সেই লেখা অবশ্যই চোখে পড়বে। আমিও প্রথমবার সেইখান থেকেই এই তথ্য জেনেছিলাম।

আর আপনার সাথে একটি বিষয়ে নিজের মিল খুঁজে পেলাম। আমিও ইতিহাস পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। পুরনো দিনের গল্প, তখনকার সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবিকা এই সমস্ত কিছুই আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। ক্লাস টেনের পর ইতিহাস বিষয়টিকে নিজের সাবজেক্ট এর মধ্যে বেছে না নিলেও ইতিহাসের প্রতি ভালোবাসা আমার একটুও কমেনি।

আর দুঃখের বিষয় হল কৃষ্ণনগরের সব মন্ডপই এই বছর পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে খাবারের গন্ডগোলের কারণে আমার ভীষণ পরিমাণে অ্যাসিডিটি হয়ে যায়। তাই অনেক ঠাকুরই মিস করে গেছি। 🥲