নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আমরা সবাই জানি এই বছর ২রা অক্টোবর মহালয়া ছিল। আমরা এটাও জানি যে মহালয়ার মধ্যে দিয়েই দেবী দুর্গার আগমন সাধিত হয়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর শুভারম্ভ এই দিন থেকেই হয়ে থাকে। এই দিনেই দেবী দুর্গার বোধন (জাগরণ করা) করা হয়। আমরা বাঙালিরা একটি বছর অপেক্ষা করে থাকি আমাদের প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোর জন্য। সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই দিনেই দেবী দুর্গাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। চারিদিকে শিউলি ফুলের গন্ধ, কাশফুল, আকাশে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘ --সমস্ত কিছুই যেন দেবী দুর্গা কে সম্ভাষণ জানায়। এই বছরের মহালয়াটা আমার কাছে একটু অন্যরকম ছিল। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার এই দিনটি আমি কিভাবে কাটিয়েছি সেই অনুভূতিটিই তুলে ধরতে চাই।
এই দিন আমার সকাল শুরু হয় ভোর চারটেই। শুধু আমার নয়, বাড়ির সকলেই ভোর থাকতেই উঠে পড়ে মহালয়ার এই বিশেষ দিনে। প্রথমে সকালের কিছু আনুষঙ্গিক কাজ সেরে আমরা সকলেই চায়ের পেয়ালা নিয়ে মুখিয়ে থাকি রেডিওর দিকে। মুঠো ফোনের জামানাতেও আমরা কিন্তু আজও রেডিওতেই মহালয়া শুনতে ভালোবাসি। সারাবছর ধুলোমলিন অবস্থায় রেডিওটি পড়ে থাকলেও মহালয়ার এই বিশেষ প্রয়োজনে তাকে একটু বেশিই সমাদর করা হয়। তা যাইহোক না কেন, আমাদের সকলের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারপর শুরু হয় 'মহিষাসুরমর্দিনী 'অনুষ্ঠান। শিল্পী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে এই অনুষ্ঠানটি শুনতে খুব খুবই ভালো লাগে। এ যেন এক নস্টালজিয়া। এই শিল্পীর কন্ঠ ব্যতীত মহালয়া যেন অসম্পূর্ণ।
মহালয়া শোনার পর্ব শেষ করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি এবং আমার এক বন্ধু বেরিয়ে পড়ি আমাদের কৃষ্ণনগরেরই কাছাকাছি একটি স্থানে। যেখানে গিয়ে আমরা একদিকে যেমন কাশফুলে ঘেরা মাঠ দেখতে পেয়েছিলাম ঠিক তেমনি দেখেছিলাম নদীতে তর্পনরত বহু মানুষজনকে।
সেই সাথে আবহাওয়া ও ছিল ভীষণই রোমাঞ্চকর। আকাশে কালো মেঘ ছেয়ে ছিল। এই যেন আকাশ ফেটে নেমে আসবে ভারী বর্ষণ। তার সাথেই ছিল সূর্য্যি মামার লুকোচুরি খেলা। রোমাঞ্চকর আবহাওয়া আর একরাশ এক্সাইটমেন্ট নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম মহালয়ার এই সুন্দর সকালটিকে উপভোগ করার জন্য। সত্যিই মা দুর্গার আগমন যেন আমরা উপলব্ধি করতে পারছিলাম। চারিদিকের পরিবেশ টাও এটাই জাহির করছিল যে মা দুর্গা যেন কৈলাস থেকে তার বাপের বাড়ি পাড়ি দিচ্ছেন।
চারিদিকের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে করতে যখন আমরা নিজেদের প্রাণের শহর কৃষ্ণনগর ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ধুবুলিয়ার কাছাকাছি পৌঁছই তখন আকাশ ফেটে নেমে আসে ভারী বর্ষণ। আকাশে শুরু হয় মেঘের গর্জন। এ যেন দেবী দুর্গার সাথে অসুরের রণযুদ্ধ। মেঘের ঘনঘটা ও ভারী বর্ষণ চারিদিকের পরিবেশ টিকে যেন আরো অনেক বেশি রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল। বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে আমরা চায়ের পেয়ালায় একটু চুমুক দিয়ে নিই। আহা চা তো নয় , যেন অমৃত। একটি শেডের নিচে দাঁড়িয়ে আমরা দুজন এই বৃষ্টি ভেজা মহালয়ার দিনের সকালটিকে উপভোগ করতে থাকি।
ছোটোবেলার কত স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মাঝে মাঝে চোখের সামনেটা ঝাপসাও হয়ে ওঠে। ছোটবেলার দিনগুলো মনে করতে থাকি। বাবা, মা, দাদা, আমি..... সুখের সংসার। তারপর প্রবল ঝড়-- চির বিচ্ছেদ ---সুখের বিরতি....
যাক সেই সব কথা। আজ আর দুঃখ নয়, চারিদিকে আনন্দের মেজাজ।
অবশেষে ঘন্টাখানেক পর বৃষ্টি কমে। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যেই আমরা আবার বেরিয়ে পড়ি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে।
পরবর্তী গন্তব্যস্থল কোথায় ছিল?সেই অভিজ্ঞতাও পরবর্তী পোস্টে অবশ্যই শেয়ার করব আপনাদের সাথে। সাথে থাকবেন।
THE QUEST TEAM has supported your post. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit