আমার দেখা মানবজীবনের এক বাস্তব চিত্র।

in hive-120823 •  6 months ago  (edited)
IMG_20240605_132915.jpg

Hello Friends,
আমি খুব ছোট বয়সেই দিদিমা, দাদু এবং ঠাকুরমাকে হারিয়েছি। এমনকি আমি আমার ঠাকুরদাকে দেখিনি পর্যন্ত। আবারো বিগত ৬দিন পূর্বে এক দিদিমা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন যেটা কষ্টকর।

পৃথিবীতে আমরা সকলেই ক্ষণস্থায়ী আর এটাই আমরা মানতে চাই না। যদি এই বিষয়টা আমরা সকলেই উপলব্ধি করতে পারতাম তাহলে হয়তো সমগ্র পৃথিবীটাই শান্তিপূর্ণ হতো।

যাকে নিয়ে আমার আজকের লেখাটি তাঁর সম্পর্কে একটু বলি। তিনি আর কেউ না আমার বড় কাকুর শাশুড়ি। আমার কাকু বিবাহ করেছিলেন ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সম্ভবত এবং আমার কাকুর শশুরবাড়ি একই গ্রামের ভিন্ন পাড়াতে।

দিদিমার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা একদমই ভালো ছিল না। তবে আমার এই দিদিমা খুব হিসেবী এবং মিতব্যয়ী প্রকৃতির ছিলেন। আর্থিক অভাব অনটন পরিবারে লেগেই থাকতো তবে তিনি হাল ছাড়েননি।

IMG_20240605_134134.jpg

যাইহোক, দিদিমার প্রচেষ্টায় ছেলে এবং এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরেছিলেন তিনি। বাকি ছিল এক মেয়ে যার আর লেখা পড়া করা হয়ে ওঠেনি। ঐ যে অভাবের তাড়নায় জানালা দিয়েই মনে হয় সব কিছু পালিয়েছিল।

আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র ছেলে সন্তানই হতে পারে অবলম্বন। এটা একদমই সঠিক না। বরং ছেলে বা মেয়ে না কোনো সন্তান যদি মানুষের মতো মানুষ হতে পারে তিনিই হতে পারেন বাবা মায়ের অবলম্বন।

একটা সময় দিদিমার বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলো। তারপর ছেলেটি উপার্জনের আশায় পাড়ি জমিয়েছিল রাজধানী শহর ঢাকাতে। কিন্তু এটাই যে মায়ের সাথে কাটানো মধুর স্মৃতিতে ছবির ফ্রেমে আবদ্ধ হবে কে জানতো।

IMG_20240605_140246.jpg

সেখানে মামার একটা চাকরী ও হলো কিন্তু ধীরে ধীরে যেন মা বাবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছিল। একটা সময় মামা তাঁর মা-বাবাকে না জানিয়েই বিয়ে করেন এবং দিনের পর দিন যেন সন্তানের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে শুরু করে।

কিন্তু মায়ের মন বলে কথা। হয়তো কেউ দেখে না কিন্তু গভীর রাতে বালিশের কাছে আর কষ্ট লুকিয়ে রাখা যায় না। অন্যদিকে ছোট মেয়ে বিবাহ যোগ্য এই জন্য মা-বাবার একটু দুশ্চিন্তাই হতো।

এরপর যখন কাকিমার চাকরি হয়েছিল তখন আমার বড় কাকুর সাথে বিয়ে হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমার সেই মামাও দুই সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। যখনই এদিকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল তখনই মামার সাঁড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। পৃথিবীর মানুষ গুলো কতোটা স্বার্থের পিছে ছুটে চলে যেখানে গর্ভে ধারণ করা সন্তান ও পাত্তা দেয় না।

আমার সেই মামা ঢাকাতে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন কিন্তু স্থায়ী কোনো সম্পদ তিনি করতে পারেননি। জীবনের এক অমূল্য সম্পদ মা-বাবা যাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব না।

  • মূর্তি পূজো ও লোক দেখানো জনসেবা করে কি লাভ? যদি ঘরে থাকা ঈশ্বরেরই সেবা আমরা না করতে পারি!

অবশেষে বছর তিনেক পূর্বে মামাও পরলোকগমন করেছিলেন। কিন্তু পার্থিব যে স্বর্গীয় সুখ সেটা আর ভোগ করা হয়ে ওঠেনি।

IMG_20240605_133832.jpg

জানুয়ারি মাসে আমাদের দেশে প্রচণ্ড শীত তাই আমার বড় কাকিমার কথামতো আমি দিদিমাকে গিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। জামাই বাড়িতে এসে দিদিমা একদমই থাকতে চান না। এর পূর্বে অনেকবারই এসেছেন এবং আমাদের ঘরেই দিদিমা খাবার খায়।

IMG_20240605_134316.jpg

একটি রাতের কথা এখন খুব মনে পড়ছিল যখন আমরা কয় ভাই-বোন সকলে একসাথে দিদিমার সাথে বসে গল্প করেছিলাম। তারপর খাবার খেয়ে দিদিমাকে বিছানাতে রেখে যে যার বিছানাতে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। এই মানুষটার সাথে আর কখনো কথা বলতে পারবো না। এটা মনে হলেই যেন ভেতরে ভেতরে অনেকটা কষ্ট হচ্ছে।

IMG20240531132825.jpg

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগেই কাকিমা দিদিমাকে নিয়ে এসেছিল কিন্তু শরীরটাও ভালো ছিল না। অবশেষে ৩১শে মে সকাল সাতটায় পরলোকগমন করেছিলেন।

এই তো পৃথিবী, চোখ বন্ধ করলেই সব অন্ধকার এবং সাথে নিঃশ্বাস বন্ধ হলেই ইতি। পাশাপাশি, এটাই বলবো যে ছেলে হোক বা মেয়ে তাঁদেরকে মানুষের মতো মানুষ করুন। সমাজে একজন আদর্শ সন্তানই আপনার সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ আমার কাকিমাই কিন্তু দিদিমার অবলম্বন হয়েছিলেন।

বন্ধুরা, আমি আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

আমার লেখাতে উপস্থাপিত কয়েকটি ছবি আমি পূর্বে ও লেখাতে ব্যবহার করেছি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Help me

  ·  6 months ago (edited)

What happened?

@ubuttam,

Kindly,
Join here to solve your problem.

Discord Link

@piya3 I'm sorry to hear that you have lost your grandmother and grandfather at a very young age, However, be sure and believe that death is one way to get to heaven's door. So I hope you don't have to cry about it anymore, I hope you always have a nice day

Thank you so much for your valuable words.

প্রকৃতির নির্মম নিয়মে একদিন সবাইকেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবুও আমাদের মানুষের মধ্যে কত দম্ভ কত অহংকার।আপনার সেই মামা কত সম্পদ তৈরী করে গেল কিন্তু তা ভোগ করতে পারলো না। এটাই হয়তো প্রকৃতির প্রতিশোধ। আপনার একটি কথা আমার খুবই ভালো লেগেছে। ছেলে বা মেয়ে নয় বরং আদর্শ সন্তানই সবার কাম্য হওয়া উচিত। যারা পৃথিবীর আলো দেখান,কোলে পিঠে করে মানুষ করেন তাদের যদি আমরা শেষ বয়সে দেখাশোনা না করতে পারি তাহলে কেমন সন্তান আমরা? আপনার দিদিমাকে যেন ইশ্বর স্বর্গবাসী করেন।

STEEM DREAM TEAM

Your post has been successfully curated by our team via @kouba01 at 40%.

Thank you for your committed efforts, we urge you to do more and keep posting high-quality content for a chance to earn valuable upvotes from our team of curators and why not be selected for an additional upvote later this week in our top selection.



@kouba01,
ধন্যবাদ স্যার, আপনার অনুপ্রেরণা মূলক সমর্থনের জন্য।

Hello friend, how are you? Thank you very much for showing the real picture of our society through your post, you have lost many of your loved ones and still you are standing strong after losing them, it shows a lot of bravery. And you have given a message which is really admirable, to educate boys and girls, which shows your generous mind. Thank you very much. And the story you wrote is actually the real picture of the present society.

Loading...

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেককে এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন না একদিন চলে যেতে হবে। আসলে আপনি ঠিক বলেছেন, সবাই যদি এটা বুঝতো তাহলে এই পৃথিবী পুরোটাই শান্তিপূর্ণ হতো। আপনার গল্পের দিদিমার গল্পতে পড়ে খুব খারাপ লাগলো। বর্তমান সমাজে এরকম অনেকেই বড় হওয়ার পর নিজের বাবা-মাকে দেখতে পারেনা। আসলে সন্তানকে সন্তানের মত গড়ে তুলতে হবে।

সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।