আমার ঈদ উদযাপন

in hive-120823 •  5 months ago 

কেমন আছেন বন্ধুরা? মহান আল্লাহ্‌ তা’লার অশেষ মেহেরবানীতে আমি ভালোই আছি। সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহা এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মুবারক।

নিশ্চই সকলের ঈদ অনেক ভালো কেটেছে। আজ আমি আপনাদের মাঝে “আমার ঈদ উদযাপন” শীর্ষক একটি লিখনি উপস্থাপন করছি। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

20240617_183438.jpg

ঈদ মানে খুশি আর আনন্দ। ঈদের দিনের আনন্দ আমাদের সবার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। এই দিনটি আমাদের সকলের জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আপনাদের গত লিখনিতে বলেছিলাম আমাদের এদিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন রাতে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির ফলে আমাদের আশেপাশের অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছে।

নদী থেকে আমাদের এলাকা অনেকটা দূরে হওয়ায় আমরা এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত আছি। তবে বৃষ্টির কারণে যেকোন কাজে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। যেহেতু কুরবানির ঈদ তাই পশু কুরবানি নিয়ে বেশ বিরম্বনায় পরতে হয়েছিলো সকলকে।

ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। উঠে বাংলাদেশ বনাম নেপালের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করেছিলাম। এরপর গোসল করে নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি পরে ঈদের জামাতে শরীক হতে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম।

বেড়নোর আগে সেমাই আর নুডুলস খেয়ে নিয়েছিলাম। যেহেতু চারিদিকে শুধু পানি আর পানি সেহেতু ঈদগাহে এবার নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ঈদগাহ্ সম্পুর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিলো।

20240617_081026.jpg

উপায় না থাকায় মসজিদে নামাজ আদায় করতে হয়েছিলো। সকাল আটটা পনেরো মিনিটে আমাদের মসজিদে নামাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিলো।

নির্ধারিত সময়ের আগে আমি মসজিদে পৌঁছে দেখেছিলাম ইতোমধ্যে অনেক লোক এসে মসজিদে হাজির হয়েছে। একসাথে এত লোকজনকে দেখে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। এরপর ফাঁকা স্থানে বসে ঈমাম সাহেবের বয়ান শুনতে থাকি।

20240617_081716.jpg

ঈমাম সাহেব কুরবানি করার পদ্ধতি এবং কুরবানি ঈদের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। বয়ান শেষে নির্ধারিত সময়ে নামাজ শুরু হয়েছিলো। নামাজ শেষে এলাকার এবং দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে দোয়া হয়েছিলো।

দোয়ায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। দোয়া শেষে সকলে বাইরে খোলা জায়গায় এসে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেছিলো। সকলে সকলের খোঁজখবর নিয়েছিলো। এমন মহুর্ত সত্যি জীবনকে রাঙ্গিয়ে তোলে।

20240617_090303.jpg

ইশ প্রতিটা দিন যদি এমন হতো। সকলে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে বুকে বুক লাগিয়ে একে অন্যের খবর নিতো। তাহলে কতই না ভালো হতো। যাইহোক আমিও অনেকের সাথে কোলাকুলি করে বাসায় চলে আসি।

এরপর বাবুকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। কিছুক্ষণ পর আমাদের কুরবানির গরু যেই আংকেলের বাড়িতে রাখা ছিলো তিনি আমাকে ফোন দিয়ে দ্রুত আসতে বলেন। কেননা তখন হুজুর এসেছিলো গরু কুরবানি করার জন্য।

আমি দ্রুত সেখানে চলে যাই। কোরবানি শেষে দোয়া হয় এবং আমি সহ আরো অনেকে মাংস প্রস্তুতের কাজে লেগে পরি। সকাল এগারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আমি সেখানে অবস্থান করি।

বিকেলে তিনটার মধ্যে মাংস প্রস্তুত হলে ভাগ করে বাসায় নিয়ে আসি। বাসায় এসে আবার তিনভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য রাখি। বাকি দুই ভাগ গরীব দুখি এবং আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিলি করি। যাইহোক সব মিলিয়ে বেশ ক্লান্ত ছিলাম।

অনেকদিন পর এত এত কাজ করলাম তাই শরীর আর শায় দিচ্ছিলো না। এর মাঝে বউ এসে বললো সে নাকি শাড়ী পরবে আর বাবুর সাথে ছবি তুলবে।

বাবুর যেহেতু আড়াই মাস বয়স আর এবার আমাদের প্রথম ঈদ বাবুর সাথে তাই স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখতে চেয়েছিলো। আমিও সম্মতি দিয়েছিলাম।

যাইহোক আবারো নতুন করে দুজনে তৈরি হয়ে নিই। এরপর ফুফাতো বোনকে ডাকি আমাদের তিনজনের ছবি তুলে দেয়ার জন্য। সে এসে বাড়ির সামনে আমাদের ছবি তুলে দেয়।

20240617_183458.jpg

এরপর বাসায় এসে আমি ঘুমিয়ে পরি। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বলতে পারিনা। হঠ্যাৎ ঘুম ভাঙ্গে ফোনের শব্দে। দেখলাম ফুফাতো বোনের বর মানে আমার দুলাভাই ফোন দিচ্ছে। কল ধরলে তিনি আমাকে তাদের বাড়িতে আসতে বলে।

সাথে আমার বউকে নিয়ে আসতে বলে। এক কথায় ঈদের দাওয়াত। কী আর করার। দুলাভাই যেহেতু ডাকছে যেতেই তো হবে। তাই দেড়ি না করে তৈরি হয়ে বাবুকে মায়ের কাছে রেখে আমি আর মীম বেরিয়ে পরি।

আপুর বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে রাত এগারোটার দিক বাসায় ফিরে আসি। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরি। ঈদের পরের দিন বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো কিন্তু বৃষ্টির কারণে যাওয়া হয়নি।

এনিয়ে মীমের অনেক মন খারাপ। কী করবো, আমাদের বাবু এখনো ছোট। ওকে নিয়ে তো বৃষ্টির মাঝে বেরুনো সম্ভব না। রাতে আরেকজন ফুফাতো বোনের বাসায় দাওয়াত ছিলো।

20240618_223536.jpg

সেখানে গিয়ে স্পেশাল বাশমতি চালের ভাত আর কালা ভুনা খেয়েছি। আমার বোন রান্নায় বেশ পারদর্শী। কালা ভুলা দারুণভাবে রান্না করেছিলো।

বন্ধুরা বৃষ্টির কারণে এবারের ঈদে কোথাও যেতে না পারলেও বাবুর সাথে সারাদিন সময় কাটিয়েছি। তার সাথে প্রথম ঈদ খুব ভালোভাবেই কাটালাম। সকলেই দোয়া করবেন আমার এবং আমার পরিবারের জন্যে।

আজ আর নয় বন্ধুরা। আল্লাহ্‌ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আপনাদের তিনজনের এই ছবিটা একদিন আপনার ছেলে বড়হয়ে দেখবে এবং এই ছবির বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চাইবে। কিছু কিছু ছবি জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে আপনাদের তিনজনের এই ছবিটাও হয়ত তেমনই।

আপনাদের আশেপাশের এলাকা জলে তলিয়ে গিয়েছে জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো তবে নদী থেকে আপনাদের বাড়িত দুরে হওয়ায় তেমন সমস্যা হয়নি।

ইশ প্রতিটা দিন যদি এমন হতো। সকলে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে বুকে বুক লাগিয়ে একে অন্যের খবর নিতো। তাহলে কতই না ভালো হতো। যাইহোক আমিও অনেকের সাথে কোলাকুলি করে বাসায় চলে আসি।

এটা কিন্তু আপনি ঠিকই বলেছেন। প্রতিদিনই যদি সবাই এমন মিলেমিশে থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর দিনের বিবরন দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।

সবার প্রথমে ঈদুল আযহারের শুভেচ্ছা জানাই ঈদ মোবারক। অনেক এলাকাতেই বৃষ্টির কারণে ঈদের আনন্দটা এতটা ভাল হয়নি কোন এলাকাতে বৃষ্টির কারণে পানি নিচে নিচে বাড়ি ডুবে গেছে। তারা ভালো করে এই ঈদ উদযাপন করতে পারিনি।

সকাল বেলা উঠে খেলা দেখলেন সুন্দর একটি খেলা হয়েছিল এবং খুশির দিনে বা উৎসবের দিনে বিজয়ের আরেকটি উৎসব উৎসব মিলে ডাবল হয়ে যায়।

আপনার বাবুর সাথে প্রথমে কাটাই এটা শুনে খুব ভালো লাগলো এই ছবিগুলোর যখন উনি বড় হবে তখন দেখলে অনেক খুশি হবে।

আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ঈদের দিনগুলো সুন্দরভাবে উদযাপন করলেন আবার আপনাকে জানাই ঈদ মোবারক

প্রথমে জানাই ঈদে অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি ঈদের দিনটি পরিবারের সাথে খুব ভালোভাবে কাটিয়েছেন। আপনাদের কাছে ঈদ মানে তো খুশির দিন হবে। তবে আপনাদের ঐদিকে ঈদের দিন বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এদিকে বৃষ্টির দেখা নেই। আপনার ছেলের সাথে আপনার এই প্রথমবার ঈদের মুহূর্ত কাটানো সত্যি খুব আনন্দদায়ক। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।

প্রথমেই ঈদের অনেক শুভেচ্ছা জানাই। বৃষ্টির কারণে আপনাদের ওখানে একটু সমস্যাতেই পড়তে হয়েছে। ঈদগাহ পানির নীচে তলিয়ে গেছে মানে ভালোই বৃষ্টি হয়েছে। যাহোক তবুও সুন্দরভাবে ঈদ পালন করেছেন। আর এই কোরবানীর ঈদটা আপনার জন্য আরও বেশী স্পেশাল কারণ আপনার বাবুর সাথে প্রথম ঈদ। ঈদের দিন দুলাভাইয়ের ডাকে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। যদিও বৃষ্টির জন্য তেমন ঘোরাঘুরি করতে পারেননি তাই আপনার স্ত্রীর একটু মন খারাপই। কিন্তু কি আর করার। আবওহাওয়ার উপর তো আর কারও হাত থাকে না। ভালো লাগলো আপনার ঈদ উদযাপনের দিনলিপি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

সর্বপ্রথম ভাইয়া আপনাকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক। নিজের পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন এটা দেখে অনেক ভালো লাগলো। কিন্তু এটা জানতে পেরে খুবই খারাপ লাগলো যে আপনাদের এলাকার পাশে প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ার জন্য পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি সকলকে হেফাজতে রাখুক। নদীর ছাড়া আপনাদের বাড়ি অনেকটা দূরে বলে আপনারা সুস্থ স্বাভাবিক আছেন এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো।

এবং কোরবানি ঈদে অনেকটা ব্যস্ততার মধ্য থাকতে হয় তার পাশাপাশি ঈদ বলে কথা ঈদের দিনে আনন্দটা নিজের মনে বেশি ভালো লাগা কাজ করে। যাইহোক শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।