আসসালামু আলাইকুম
- কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। জীবন কখনো আমাদের আনন্দে ভরিয়ে দেয়, আবার কখনো কষ্ট ও দুশ্চিন্তায় মলিন করে দেয়। আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় সমস্যার মুখোমুখি হই, কখনো নিজের জন্য, কখনো পরিবারের জন্য। তবুও আমরা চেষ্টা করি সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে।
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে একটি গল্প শেয়ার করছি, যেখানে জীবনের এক কঠিন পরিস্থিতি ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের কথা উঠে এসেছে। গল্পটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা ও তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার প্রতিচ্ছবি। আশা করি সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে পড়বেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন।
আজকের দিনটা যেন শুরু থেকেই ভারী। ঘুম ভাঙার পর থেকেই একটা অদ্ভুত অস্বস্তি ঘিরে ছিল আমাকে। মেয়েটা চুপচাপ আমার কোলে এসে বসলো, তার মিষ্টি হাসি দেখে আমার মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু আজ তাও হলো না। মনের মধ্যে একটা চাপা অস্থিরতা, একটা অজানা দুশ্চিন্তা কাজ করে চলেছে।
আমাদের ছোট সংসার, ঢাকার এই বড় বাড়িটা যেন মাঝে মাঝে শূন্য লাগে। আমার স্বামী সকালে অফিসে যায় আর দুপুরে ফিরে আসে। বাকি সময়টা আমি আর আমার দুই বছরের মেয়েটা নিজেদের মতো দিন কাটাই।
সাধারণত এসব নিয়ে আমার তেমন কোনো খারাপ লাগা কাজ করে না। কিন্তু আজ যেন সবকিছু কেমন অগোছালো মনে হচ্ছে।সকালের নাস্তা করতে করতে হঠাৎ আমার ফোনে একটা কল আসলো কলটা হচ্ছে আমার স্বামীর বোন জামাইয়ের। আমার স্বামীর বোন জামাইকে আমি নিজের বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। বড় ভাই এখন বর্তমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে তার কাজের জায়গায় বেশ বড় রকমের একটা সমস্যা হয়েছে। সে খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চায়, কিন্তু দেশে ফেরার প্রক্রিয়া মোটেও সহজ হচ্ছে না। ভিসা সমস্যা, পাসপোর্ট আপডেট, অফিসিয়াল ক্লিয়ারেন্স এই সবকিছু মিলে ওনার জীবন যেন এক জটিল গোলকধাঁধায় আটকে গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে ভাইয়ের ব্যাপারে বাড়ির সবার মধ্যেই একটা চাপা টেনশন চলছে। আমরা সবাই নিজেদের মতো চেষ্টা করছি ভাইকে সাহায্য করার। কিন্তু দূর থেকে সাহায্যের পরিমাণ তো সীমিত। আমিও মাঝে মাঝে তার জন্য ভাবি। আজ সেই চিন্তাগুলো আরও বেশি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।
রান্নাঘরে চা বানানোর সময় জানালার বাইরে তাকালাম। আকাশটা মেঘলা, যেন আমার মনের অবস্থার সঙ্গে মিলে গেছে। চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, আর আমি চুপচাপ ভাবছি, ভাইয়া যদি দেশে ফিরতে না পারে? মালয়েশিয়ার ওই জায়গায় একা একা কতটা অসহায় বোধ করছে তিনি?
বিকেলে আবার ভাইয়ের ফোন এলো। তিনি জানালেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা আমাকে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ রিপোর্টের কাগজটা পাঠায়া দাও।কাগজটা নাকি কোম্পানিতে জমা দিতে হবে তাহলেই দেশে যাওয়ার পারমিশন হবে। আমরা তো এত কিছু বুঝি না উনি যা যা বলতেছে তাই করার চেষ্টা করতেছি।ভাইয়ের কষ্টের কথা শুনে এত বেশি খারাপ লাগতেছে বলে বোঝাতে পারবো না। একটার পর একটা সমস্যা, সবকিছু নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত। আমরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম, বললাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার সুরে যেন বিশ্বাস ছিল না।আমার স্বামী দুপুরে বাড়ি ফিরে এসে এসব নিয়ে কথা বলতে লাগলো। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।
বললেন, সব কাগজপত্র ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে। আর এইসব ঝামেলার জন্য সে নিজেও খুব হতাশ হয়ে পড়েছে। আমি আমার স্বামীকে বোঝালাম, তুমি শান্ত থাকো। যতটুকু পারা যায় সাহায্য করো। সব সমস্যার সমাধান একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ।
তবে মনে মনে আমিও জানি, এসব কথা যত সহজে বলা যায়, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। একটা অচেনা দেশে কাজের জায়গায় এমন সমস্যার মুখোমুখি হওয়া খুবই কঠিন। সেখানকার পরিবেশ, নিয়মকানুন, আর লোকজনের ব্যবহার সব মিলে একজন মানুষ কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, তা আমি কল্পনা করতে পারি।
আমার স্বামী অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে ছিল। একের পর এক মানুষকে ফোন করে সে খোঁজ নিল। আমি দূর থেকে দেখছিলাম, তার মুখে স্পষ্ট ক্লান্তি। আমি বুঝি, এই চিন্তা শুধু তার কাজের নয়, তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্বেরও।
আমার মনে হলো, এই দূরত্ব, এই অচেনা দেশের জটিল নিয়মকানুন যেন আমাদের সবার জন্য একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করেছে। আমরা কেউই চাইলেও এই দেয়াল ভেঙে ফেলতে পারছি না।রাতে শুতে গিয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম। মনে হলো, আমরা সবাই নিজেদের মতো চেষ্টা করছি, কিন্তু জীবনের এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কত কঠিন। আমি জানি, এসব চিন্তা করে কিছু হবে না। আমাকে আমার মেয়ের জন্য, আমার পরিবারের জন্য শক্ত থাকতে হবে।
তবে ভেতরে ভেতরে মনে হচ্ছে, এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আরও অনেকটা সময় লাগবে।
শেষ পর্যন্ত নিজেকে বোঝালাম। বললাম, "এগুলো জীবনেরই অংশ। আজ এই সমস্যা, কাল হয়তো অন্য কিছু। আমাদের এই মুহূর্তগুলো পার করতে হবে ধৈর্য ধরে।আমি জানি, এই দিনগুলো কঠিন, কিন্তু এগুলোও একদিন শেষ হবে। তখন আমরা আবার একসঙ্গে বসে হাসবো, এই দিনগুলোর কথা মনে করে বলবো, তখন কত চিন্তায় ছিলাম, অথচ সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
- আপনারা সবাই আমার এই বড় ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ফিরতে পারে। আজ তাহলে এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit