আসসালামু আলাইকুম
- একটি নতুন বছরের সূচনা নিয়ে আসে নতুন আশা, প্রত্যাশা এবং আনন্দ। তবে এর সাথে জীবনের ছোট ছোট ঘটনা, আমাদের ভালোবাসার মানুষদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো, এবং কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত অসুস্থতাও আমাদের মনে বিশেষ চিহ্ন এঁকে দেয়। আজ আমি এমন একটি রাতের গল্প বলতে চাই, যা একদিকে আনন্দে ভরপুর ছিল, আবার অন্যদিকে আমার ছোট্ট মেয়ের অদ্ভুত মমতার স্পর্শে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে।
গতকাল ছিল থার্টিফার্স্ট নাইট। সারাদিনের কাজকর্ম শেষে রাতে আমার ডিসকর্ড ক্লাসের সবাই মিলে একটা ছোটখাটো হ্যাংআউটের আয়োজন করেছিল। সেই আড্ডার মধ্যে ছিল একটি বিশেষ খেলা, যার নাম ছিল সিক্রেট খেলা। খেলাটি খুব মজার এবং রোমাঞ্চকর ছিল। আমাদের এডমিন দিদি অত্যন্ত মজার সাথে খেলাটি পরিচালনা করছিলেন।আমি এডমিন দিদিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর একটি খেলার আয়োজন করার জন্য। আমরা সবাই বেশ উপভোগ করছিলাম। আমিও খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং সৌভাগ্যক্রমে একটি পুরস্কারও জিতে নিলাম। আনন্দ আর উত্তেজনায় সময় কেটে যাচ্ছিল যেন পাখির ডানায় ভর করে।
কিন্তু হঠাৎ করেই আমার শরীর খারাপ হতে শুরু করল। মাথা ঘুরছে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে,শরীরে প্রচন্ড জ্বর চলে আসছে, সেই সাথে বমি বমি ভাব হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে এমন অবস্থা গলাটা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম, কারণ সারা দিন তো ভালোই ছিলাম। শরীর এতটা দুর্বল হয়ে পড়বে, তা ভাবতেও পারিনি। ধীরে ধীরে খেলার আনন্দ থেকে আমি দূরে সরে যেতে লাগলাম। ক্লাসের প্রায় শেষ সময়ে এসে বুঝলাম, আমি আর বসে থাকতেও পারছি না।এই অবস্থা দেখে আমার হাজব্যান্ড বললো কি হয়েছে এমন করতেছ কেন কি সমস্যা তোমার বলো।আলহামদুলিল্লাহ, আমার স্বামী তখন বাসায় ছিলেন। আমার হাজব্যান্ড আমাকে সুয়ে দিয়ে আমার মাথায় ঠান্ডা পানি দিয়ে দিলেন। তাঁর সেই যত্ন আর তৎপরতার জন্য আমি কিছুটা স্বস্তি পেলাম।
কিন্তু মাথায় পানি দেওয়ার পর যেটা ঘটল, সেটা ছিল সত্যিই হৃদয়স্পর্শী।
আমার দুই বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটি আমার কাছে এসে আমার মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করল। এতটুকু বাচ্চা মেয়ের এই কাজ আমাকে এবং আমার স্বামীকে অভিভূত করে তুলল।
আমি তখন ভীষণ অসুস্থ। কথাও বলতে পারছিলাম না ঠিকমতো। কিন্তু আমার মেয়ের ছোট্ট হাতের ছোঁয়া, তার মায়াবী চোখের গভীর দৃষ্টি আমাকে যেন ভেতর থেকে শক্তি জোগাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, এই ছোট্ট মানুষটা তার মায়ের প্রতি কতটা ভালোবাসা আর মমতা ধারণ করে। সত্যিই, সন্তানের ভালোবাসার গভীরতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ, আমি একটু সুস্থ বোধ করতে লাগলাম। শরীর ধীরে ধীরে আগের মতো কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠল। তখন বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি, থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য লোকজন রঙিন আতশবাজি ফুটাচ্ছে। চারপাশের সেই আলো ঝলমলে পরিবেশ, আনন্দ-উল্লাসের শব্দ সবকিছু মিলিয়ে যেন নতুন বছরের আগমনের উৎসব। আমি জানালা দিয়ে বসে সেই আলো আর আনন্দ উপভোগ করতে লাগলাম।
এই ছোট্ট ঘটনাগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি হয়ে থাকবে। মেয়ের মায়া-মমতা, স্বামীর যত্ন, এবং এক অসুস্থ রাতের শেষে নতুন বছরের আলো সবকিছু মিলে একটি অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হলো।
- জীবনে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে, কিন্তু এমন ছোট ছোট ভালোবাসার মুহূর্তই আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। আমার এই রাতের অভিজ্ঞতা আমাকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল, পরিবারের ভালোবাসা আর যত্নের কোনো বিকল্প নেই। এখনো আমি অনেকটা অসুস্থ বুঝে উঠতে পারছি না আসলে এমনটা হওয়ার কারণ কি।যাই হোক সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠি। আল্লাহ আমাদের সবার পরিবারকে সুস্থ ও ভালো রাখুক, আল্লাহাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি আনন্দ মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, সত্যিই গতকালকে রাতে হ্যাংআউটের সিক্রেট খেলাটা ছিল অনেক রোমাঞ্চকর আমিও সর্বপ্রথম এই সব খেলা খেললাম। আপনার পোস্টটি পরে জানতে পারলাম গতকালকে রাতে আপনার শরীর অসুস্থ ছিল আর আপনার মেয়ে ছোট হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এটাই হলো মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা যা একটি মাকে মানসিকভাবে সুস্থ করার জন্য যথেষ্ট। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি কমেন্ট করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit