একটি আন্তরিক ভালোবাসার গল্প

in hive-120823 •  13 days ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমাদের প্রতিটি সম্পর্কের পেছনে একটি শক্তিশালী বন্ধন কাজ করে, যা ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং একে অপরের প্রতি আন্তরিক মনোভাব ফুটে তোলে। একজন পুরুষ যখন একজন স্বামী, বাবা বা বন্ধু হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেন, তখন তার স্নেহময় আচরণ এবং ভালোবাসার পরিশ্রম যেন একটি অমূল্য সম্পদ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, যখন একজন স্ত্রী অসুস্থ থাকে এবং তার সন্তানকে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য কেউ পাশে না থাকে, তখন স্বামীর মতো একটি সহানুভূতির অগ্রগামী ব্যক্তির উপস্থিতি সেই স্ত্রীর জীবনে একটি আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়।এই গল্পটি একটি ভালোবাসা এবং সহানুভূতির গল্প। এটি একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা, যেখানে এক স্বামী তার স্ত্রীর অসুস্থতা, তার সন্তানকে শীতের রাতে ভালোভাবে রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং ঘরবাড়ির প্রতিদিনের কাজের প্রতি তার অসীম দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করেছেন। এটির মাধ্যমে একে অপরকে স্নেহ এবং সমর্থন দেওয়ার যে অমূল্য অনুভূতি, তা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার হিসেবে স্থান পায়।

IMG_20250105_091606.jpg

আমার স্বামী, যার জন্য আমি প্রতিদিন নিজেকে ধন্য মনে করি, আজ আবার প্রমাণ করলেন যে ভালোবাসা শুধু শব্দে নয়, তার কর্মেও প্রতিফলিত হয়। গত কয়েকদিন ধরে আমি অসুস্থ ছিলাম, গলা ব্যথায় ভুগছিলাম এবং ঘরের কোনো কাজই করতে পারছিলাম না। অসুস্থতা যখন একদমই আমাকে কাবু করে ফেলেছিল, তখন একমাত্র আমার স্বামীই ছিল, যিনি আমার সেবা করতে এগিয়ে আসলেন। সেই দিনটি মনে রাখার মতো এক অমূল্য মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

সকাল থেকে গলা ব্যথার কারণে আমি কোনো কাজ করতে পারছিলাম না, এমনকি আমার ছোট্ট মেয়েটির জন্যও কিছু রান্না করতে পারছিলাম না। আমার স্বামী, যিনি সাধারণত কাজের ফাঁকে কখনো বাজারে যান না, সেই দিনটি বাজারে চলে গেলেন। আমার শরীরের অবস্থা দেখে তিনি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও একা ফেলতে চাননি। জানি না, কীভাবে ও কী কারণে তিনি এত কিছু বুঝে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেদিন তিনি পুরোপুরি আমাকে স্বস্তি দিতে প্রস্তুত ছিলেন।তিনি বাজার থেকে বড় বড় দুটি রুই মাছ কিনে আনলেন। মাছের কথা শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। তিনি বললেন,শুধু মাছই নয়, আমাকে মমতা দিয়ে বুঝিয়ে বললেন, আমি জানি, তোমার জন্য মাছ কাটতে কষ্ট হবে, তাই আমি আগে থেকেই কেটে নিয়ে এসেছি। এতটা স্নেহ আমি কতটা আশা করতে পারি, তা আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। মাছ ছাড়াও, ফুলকপি, বেগুন, মুলা সব কিছু তিনি নিয়ে এসেছিলেন, যেন আমার কোনো কষ্ট না হয়।

IMG_20250105_091510.jpg

এদিকে, তিনি আমার মেয়ের জন্যও অনেক কিছু কিনে এনেছিলেন। শীতের চাপ অনেক, তাই আমার মেয়ের জন্য সুন্দর একটি নতুন জ্যাকেট এবং প্যান্টও কিনে এনেছিল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পাম্পাস। তিনি জানতেন, শীতের রাতে মেয়েকে ঘুমানোর জন্য পাম্পাস ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি আর মেয়েটি শীতে কাঁপছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী জানতেন কীভাবে আমাদের উষ্ণতা দিতে হয়।
এদিন, তার সঙ্গে আমার সময় কেমন যেন অতিবাহিত হচ্ছিল। আমার গলা ব্যথা ছিল, কিন্তু তাঁর স্নেহময় ব্যবহারে যেন কিছুটা আরাম পাচ্ছিলাম। তিনি সব কিছু প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন, যাতে আমি আর কোনো চিন্তা না করি। তিনি মেয়েকে পাম্পাস পরিয়ে দিয়ে বললেন, এখন তুমি ঘুমাও, আমি তোমার পাশে আছি। তার কথা শুনে আমি ভাবলাম, এই মানুষটাই তো আমার জীবনের সত্যিকারের শক্তি।

মেয়ের খাবারের দিকেও তিনি খেয়াল রেখেছিলেন। তাঁর হাতেই সব কিছু সাজানো ছিল মেয়ের পছন্দের খাবার, কোমলতায় শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করেছিল, এবং মেয়েটি তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর আমি, আমার ঘরেও শিথিল হয়ে গেছি, কারণ জানতাম আমার স্বামী সবকিছু পরিচালনা করছে।
স্বামী এবং মেয়ের এই সহযোগিতায় আমার জীবন আরও সহজ হয়ে উঠেছিল। অসুস্থ থাকার পরেও, আমি অনুভব করেছি, আমার পাশে এমন এক মানুষ আছে, যে শুধু আমাকে নয়, আমার পুরো পরিবারকে আগলে রাখে। আমার স্বামী, যিনি শুধুমাত্র একজন পুরুষ নয়, একজন মা, একজন বাবা, এবং সবচেয়ে বড় কথা একজন স্নেহময় মানুষ।আমার মেয়ের জন্য তার প্রেম এবং তার প্রতিটি ছোট ছোট কাজ আমাকে আরও বেশি মনে করিয়ে দেয়, জীবনের কতটা মূল্যবান একটি ভালোবাসা। আমি জানি, এমন একজন স্বামী পাওয়া একটা বিশেষ আশীর্বাদ। তার ভালোবাসায় আমি কখনো একা নই, সে আমার পাশে, আমার পরিবারের পাশে, সবসময় আছে। তার সঙ্গে থাকা মানে সব কষ্ট, সব সমস্যা, সব দুশ্চিন্তা ভুলে যাওয়া।

IMG_20250105_091309.jpg

এই গল্পটি শুধু আমার জন্য নয়, আমার মেয়ের জন্যও। সে একদিন বড় হয়ে জানবে, তার বাবা কিভাবে তাকে স্নেহ দিয়েছে, তার জন্য সব কিছু করেছে। আমার স্বামী প্রতিদিনই প্রমাণ করেন, ভালোবাসা শুধুমাত্র কথায় নয়, প্রতিদিনের কর্মে ফুটে ওঠে।আজকের এই দিনটি শুধু একটা দিন নয়, বরং এক জীবনের রূপান্তর। আজকের এই ভালোবাসার গল্প মনে রাখব আমি, সবসময়।যাইহোক আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বিয়ের পরে মেয়েদের সবচাইতে ভালোবাসার জায়গা হচ্ছে তার স্বামী তার স্বামী যদি তার মনের মত হয় তাহলে বিবাহিত মেয়েদের জীবন হয় স্বর্গের চাইতেও সুন্দর অনেক মেয়েরা পৃথিবীতে স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করতে পারে যতটা আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম আপনার হাসবেন্ড আপনাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ।

যে পুরুষ তার শখের নারীকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে তাকে কোন জিনিস বলে বোঝাতে হয় না সে নিজে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে যেমনটা আপনার হাসবেন্ড বুঝতে পেরেছে আপনি অসুস্থ তাই নিজে থেকেই সংসারের কাজগুলো বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

শীতের সময় বাচ্চাদেরকে অনেক বেশি যত্ন সহকারে রাখতে হয় আর প্যাম্পাস ছাড়া রাতের বেলা তাদেরকে রাখলে আরো বেশি সমস্যা হয়ে থাকে। যেটা অনেক কষ্টকর একটা বিষয় কিন্তু আপনার হাসবেন্ড সেই বিষয়টার দিকেও খেয়াল রেখেছে এবং আপনি কিভাবে দ্রুত সুস্থ হবেন তার দিকেও খেয়াল রেখেছে আপনাদের সংসার জীবন এভাবেই কেটে যাক যতদিন আপনার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন ধন্যবাদ অন্য রকম ভালোবাসার ছোঁয়া আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য ভালো থাকবেন।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমার পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়া জন্য এবং এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।


1000341978.png

Curated by : @miftahulrizky

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সাপোর্ট করার জন্য ইনশাল্লাহ নিজের কাজের গতি আরো বেশি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব ভালবাসা রইল।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

প্রথম আপনাকে ধন্যবাদ জানাই,এত সুন্দর একটি বিষয়বস্তু নিয়ে আপনি আজকে পোস্ট করেছেন। যা দেখে অনেক ভালো লাগলো, সত্যিই স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত। একে অপরকে সাহায্য করে সারাটা জীবন চলবে। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আমি আপনার পরিবারের জন্য দোয়া করি সবসময়ই জানি এভাবেই হাসিখুশি থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Loading...