নগরীর আকাশে আলোর খেলা

in hive-120823 •  16 days ago 

আসসালামু আলাইকুম

  • কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে এক নতুন বছরের প্রথম রাতের এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি। এ রাতে আমার জীবনে প্রথমবারের মতো এমন এক দৃশ্য দেখার সুযোগ হলো যা কখনও আগে দেখিনি। আমার গল্পটা একটু ভিন্ন একটি শহরের উৎসবের রাতে, যা আমার জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা ছিল।

IMG_20250101_221619.jpg

নতুন বছরের প্রথম রাতের আগমন, আর আমি তাতে কিছুটা বিশেষ অনুভুতি পাচ্ছিলাম। আসলে, আমি ছোটবেলা থেকে গ্রামে বড় হয়েছি, যেখানে থার্টিফার্স্ট নাইটের মতো বড় কোনো উৎসব বা আতশবাজির দৃশ্য দেখা হতো না। আমাদের গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর, শহরে কলেজে ভর্তি হই। তবে শহরের জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এখানে আসার পর অনেক কিছুই নতুন অনুভব করেছি, বিশেষ করে আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে এই প্রথম থার্টিফার্স্ট নাইটের আনন্দ উপভোগ করার অভিজ্ঞতা।গতকাল থার্টি ফাস্ট নাইট ছিল আমি ভীষণ অসুস্থ ছিলাম আমার হাজব্যান্ড আমার সেবা যত্ন করে আমাকে ওষুধ খাওয়ায়ে রেস্টে রাখছিল।

IMG_20250101_221612.jpg

আমি রেস্ট নিচ্ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।আমার হাজবেন্ড তাড়াতাড়ি ঠিক ১২:০০ টায় আমাকে ঘুম থেকে ডেকে ২০২৫ সালের শুভেচ্ছা জানালো। গতকালের রাতটা ছিল পুরোপুরি উজ্জ্বল, আর আমার মনে হচ্ছিল যেন পুরো পৃথিবী এক নতুন রঙে সাজানো। শহরের আকাশে লাল, সাদা, নীল আতশবাজি ফুটছিল, আর চারপাশে শোনা যাচ্ছিল বিস্ফোরণের শব্দ। আমি বেলকনির জানালায় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু একবারেই পূর্ণরূপে দেখতে পারছিলাম না, কারণ জানালার দৃশ্য ছিল একটু বাধাগ্রস্ত। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি, আমার হাজব্যান্ড এবং আমার ছোট মেয়ে, তিনজনে ছাদে যাবো।

IMG_20250101_221641.jpg

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ছাদের দরজায় তালা ছিল এবং সে জন্য আমরা ছাদে যেতে পারলাম না। আমাদের বিল্ডিং টা মোট ১৫ তলা তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু ছাদে তালা লাগানো তাই আমরা ১৪ তলা থেকে সবকিছু একদম স্পষ্টভাবে দেখব। তাড়াতাড়ি করে ১৪ তলায় আসলাম। ১৪ তলায় আসে তো আমরা একদম অবাক, আকাশে আতশবাজি উপভোগ করছিল হাজারো মানুষ। আশেপাশে ছিল এক উৎসবের মেলা। চারপাশে গলির মুখে, রাস্তায়, দোকানপাটে সবাই হাসি-খুশি, আনন্দে মাতোয়ারা ছিল।
আমার দুই বছরের মেয়েটি তখন খুবই উত্তেজিত হয়ে বলছিল, আম্মু, দেখো কি ফুটছে।তার ছোট ছোট হাতে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করছিল। তার চোখে আনন্দ এবং উত্তেজনার মিশ্রণ ছিল। আমি তার কথা শুনে একদিকে খুশি হচ্ছিলাম, অন্যদিকে নিজের মনেও এক অদ্ভুত অনুভূতি বোধ করছিলাম। মেয়েটি যেভাবে আনন্দ প্রকাশ করছিল, তা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত হয়ে গেছিলাম। তার ছোট্ট মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস ছিল অসাধারণ।

IMG_20250101_221633.jpg

আমার হাজব্যান্ড তখন আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে আমি এক ধরনের শান্তি এবং সুখ দেখছিলাম। ও আমাকে সবসময় বলতো, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই সবচেয়ে মূল্যবান। কিছু কিছু সময় এমনই হয় যখন আপনি মনে করেন, এই মুহূর্তটা যেন আপনি কখনো ভুলবেন না। এই রাতটাও আমার জন্য এমনই একটি মুহূর্ত ছিল।আমরা তখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে অনুভব করছিলাম, আর আতশবাজির সেই আলো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি স্মৃতি খুবই মূল্যবান। এই রাতের মধ্যে এমন এক অদ্ভুত শান্তি ছিল, যা আমি একাধিকবার অনুভব করেছি।

IMG_20250101_221706.jpg

এদিকে, আমার মেয়েটি একের পর এক আতশবাজির ফুটন্ত রঙ দেখে চিৎকার করে বলছিল, আম্মু, দেখো! সে তার ছোট ছোট হাত তুলে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করছিল, আর তার মুখে খুশির ছাপ ছিল। সে তো ছোট, কিন্তু একেবারে নিজের মতো করে আনন্দ প্রকাশ করছিল, আর আমার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তটা কখনো ভুলব না।পাশে আমার হাজব্যান্ড তখন আর কিছুই বলছিল না, শুধু আমাদের একে অপরকে দেখে হাসছিল। একে অপরের সঙ্গেই সত্যিকারের সুখ অনুভব হচ্ছিল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে, আমি বুঝতে পারলাম, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো নিজের প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত। এই রাতে, আমরা একসাথে নতুন বছরের সূচনা করলাম, আর সেটি ছিল আমাদের জন্য এক নতুন যাত্রার সূচনা।
শেষ রাতে, যখন সবকিছু থেমে গেল, আমি জানতাম যে, আজকের রাতটা আমার জীবনে এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। সেই আতশবাজি, মেয়ের আনন্দ, আর হাজব্যান্ডের সঙ্গে সব কিছু মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিছু কিছু মুহূর্ত চিরকাল মনে থাকবে, আর এই রাতটা ছিল এমনই একটি মুহূর্ত।

  • এই নতুন বছরের প্রথম রাত আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। জীবনে কখনও কখনও ছোট ছোট আনন্দই সবচেয়ে বড় সুখ এনে দেয়। আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমি এই সুন্দর মুহূর্তগুলো আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরেছি। আল্লাহর রহমতে, আমাদের এই সুখের মুহূর্তগুলো চিরকাল ধরে রাখুক।
    এটা ছিল আমার থার্টিফার্স্ট নাইটের গল্প একটি নতুন বছরের প্রথম রাত, যা আমি কোনো দিন ভুলব না।আজ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...

আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম। যে সর্বপ্রথম আপনি ঢাকাতে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে আরেকটি বিষয় জানতে পারলাম এই প্রথম ভাইয়ের সাথে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করেছেন। এই থার্টিফার্স্ট নাইট সত্যিই আপনার জন্য খুব স্মরণীয় হয়ে থাকবে সারাটা জীবন। আমার কাছে মনে হয় মানুষ নতুন কোন কিছু গ্রহণ করা আর ত্যাগ করা এই দুইটা জিনিস কখনো ভুলেনা। এত সুন্দর একটি আনন্দ মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।

যদিও এই বিষয়টাকে বারণ করা হয়েছিল কিন্তু তারপরেও অনেকেই এভাবে আতশবাজি ফুটিয়ে ছিল, এটা করা মোটেও ঠিক না। পরবর্তী দিন সকালে দেখা যায় রাস্তার মাঝে অনেক পাখি পড়ে আছে, অনেক বাচ্চাদের এর কারণে সমস্যা হয়। আমার মনে হয় এই আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকাই উচিত। কারণ আমরা মুসলমানের সন্তান।

আপনার হাসবেন্ড ঠিকই বলেছে আসলে সব সময় ছোট যে মুহূর্তগুলো রয়েছে হাসিখুশি।সেগুলো অবশ্যই আমাদেরকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়ে থাকে, আর আনন্দের মাধ্যমে আমরা যদি সেটাকে উপভোগ করে থাকি। তাহলে কিন্তু সেটা আরো বেশি গভীর আনন্দময় হয়ে ওঠে।

কিছু ছোট মুহূর্ত আপনাকে সুখ এবং শান্তি দিতে পারে এটা বাস্তব। তবে যদি সেটা নিজের প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো যায়, তাহলে ওই মুহূর্তটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে। আপনার আগামী দিনের পথ চলা অনেক বেশি সুন্দর হোক, এটাই কামনা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে ভালো থাকবেন।