আজীবনের জন্য শিকড়ের টান আলগা হয়ে গেলো

in hive-120823 •  2 years ago 
IMG_20230302_234130.jpg
জীবনের ওপারে ভালো থেকো ঠাকুমা

Hello,

Everyone,

কেমন আছেন আপনারা সকলে?
আশা করছি সকলে ভালো আছেন এবং এতোদিন আপনাদের দিনগুলি অনেক ভালো কেটেছে।

অনেকদিন বাদে আপনাদের সাথে আমার লেখা শেয়ার করতে চলেছি। আমি জানি মাঝখানে বেশ কিছুদিন আমি সঠিকভাবে নিজের কাজ করতে পারেনি। আসলে জীবনে কিছু কিছু পরিস্থিতি এমন হয়, যখন আমরা চাইলেও জীবনকে নিজেদের মতন করে চালাতে পারি না।

গত একমাস আমি সেই রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, যার কিছুটা আভাস আপনারা আমার লেখার মধ্যে পেয়েছেন। গত ২৩ শে ফেব্রুয়ারি আমার ঠাকুরমা ইহলোক ত্যাগ করে পরলোক গমন করেছেন। যদিও ঠাকুরমার শারীরিক পরিস্থিতির সম্পর্কে আপনাদেরকে আমি আগেই অবগত করেছিলাম।

কিন্তু কিছু কঠিন সত্য থাকে যেগুলো জীবনে ঘটবে জানার পরেও, সেগুলো মেনে নেওয়ার জন্য আমরা নিজেদেরকে কোন মতেই প্রস্তুত করতে পারি না। ঠিক তেমনি একটা ঘটনা গত মাসের 23 তারিখে আমাদের সকলের সাথে ঘটে গেছে।

ঠাকুমার শারীরিক পরিস্থিতি যেরকম ছিল আমরা সকলেই জানতাম ঠাকুরমার স্থায়ীত্ব এই পৃথিবীতে খুব বেশি দিন নেই।তারপরেও কেন জানিনা সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না।

IMG_20230303_224504.jpg

এমন ভাবে আর কখনো তোমার সাথে চা খাওয়া হবে না ঠাম্মা

আজ ৯ দিন হয়ে গেল ঠাকুরমা আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তবুও যেন আমাদের বাড়িতে তার উপস্থিতি সর্বক্ষণ অনুভূত হয়। অতর্কিতে যেন ঠাকুরমার ডাক কানে ভেসে আসে। মনে হয় এই বুঝি আমার নাম ধরে ডাকছে।

বাবা শারীরিক অবস্থা কিছুটা ঠিক হলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে এখনো অনেক দিন সময় লাগবে। অথচ এরই মধ্যে ঠাকুরমার না থাকার খবরটা তাকে আরো একবার ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

একদম ছোটবেলা থেকে এই মায়ের আঁচলের তলায় তার বেড়ে ওঠা,অথচ যখন আজকে তার মা পৃথিবী থেকে চলে গেলেন, তার শারীরিক অবস্থার কারণে তিনি সঠিকভাবে মাকে বিদায় জানাতে পারলেন না পর্যন্ত। সারা জীবন যেই মানুষটার ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠলেন শেষ মুহূর্তে তার পাশে উপস্থিত থাকতে পারলেন না।

এই না পারা গুলো যে জীবনে কতটা কষ্ট বয়ে আনে সেগুলো হয়তো আমরা জীবনে কখনো কখনো নিজেরাও অনুভব করেছি। অথবা যারা এখনো করিনি তারা আগামীতে হয়তো করবো। কারণ এটাই জীবনের চরম সত্যি- "জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু তখন অনিবার্য।"

শুধু সেটা কখন কিভাবে হবে সেটা আমাদের অজানা। যাই হোক গত কয়েকদিন মানসিকভাবে সামলে নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে নিজের লেখা ভাগ করতে চলে এলাম। আসলে এই কষ্টটা এমনই যেটা হয়ত শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, আর সেই কারনেই আমি আমার কষ্টের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি না।

শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি মা চলে যাওয়ার পরে মাথার উপরে যে ছায়াটা ছিল, যার কারণে বারবার বাড়িতে ছুটে আসতে মন চাইতো, সেই মানুষটা আর পৃথিবীতে নেই। তাই বাড়ি ফেরার টান হয়তো আর আগের মতন করে অনুভব করতে পারবো না।

একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট আছে মনের ভিতরে, ঠাকুরমাকে হারানোর কষ্ট, এই বাড়িটাতে ফিরে আসতে না পারার কষ্ট, আমি জানি এর থেকেও বেশি কষ্ট সেদিন হবে, - যেদিন এই বাড়িতে তালা বন্ধ করে, আমরা সকলে যে যার সংসারে ফিরে যাব।

একটা আলো ঝলমলে বাড়ি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে শুধুমাত্র একটি মানুষের অনুপস্থিতির কারণে। মায়ের মৃত্যুর পর জীবনটা বদলে গিয়েছিল প্রথমবারের জন্য। আবার জীবনের গতিপথ আরো একবার বদলাতে শুরু করবে।

যাইহোক, ঠাকুরমার আত্মার শান্তি কামনা করে আমাদের যা করনীয় সেগুলো করার চেষ্টা করছি। যদিও জানিনা মৃত্যুর পর কারোর জন্য কিছু করাটা কতটা সেই ব্যক্তির কাছে পৌছাঁয়। তবুও আমরা সেগুলো পালন করে থাকি।

আর কয়েকদিন বাদে যখন আমরা সকলে নিজেদের সংসারে ফিরে যাবো, আমাদের এই বাড়িটি একদম শূন্য হয়ে যাবে। আবার যখন আসবো তখন আলো জ্বলবে ঘরে। এই কষ্টটা আসলেই বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ, আমার ঠাকুরমার আত্মার শান্তি কামনা করে আপনারাও একটু প্রার্থনা করবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

I'm so sorry for your loss. Losing someone you love is never easy, but I hope you find comfort in knowing that your grandmother lived a long and fulfilling life surrounded by people who loved her.
I can't imagine what you're going through right now, but please know that you have my deepest sympathies. She will be remembered fondly by everyone who knew her.

May her soul rest in peace🙏🙏🙏

Thank you so much for reading my post and leaving such a nice comment.🙏.

আসলে দিদি বাস্তবতাকে সব সময় মুখ বুজে স্বীকার করে নিতে হয়,মানুষ যখন খারাপ পরিস্থিতিতে থাকে।আপনার পরিস্থিতিটাও সেই রকম।

এতদিন বাবার অসুস্ত শরীর নিয়ে চিন্তা আর এখন আপনার টাম্মার পরলোক গমন সত্যিই হৃদয় বিদারক একটা করুণ কাহিনী।

এই অবস্থায় আপনাকে স্বান্তনা দেবার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই।তারপরেও আমার এ ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যেটুকু জ্ঞান আছে সেখান থেকে বলছি ভেঙে পড়বেন না প্লিজ।আপনারা একটিবার হলেও আপনাদের বাবার কথা ভাবুন।

লোকটি সুস্থ হবার আগেই তার মা পরলোক গমন করলেন,মায়ের শেষ সময়টুকুতে পাশে থাকতে পারেননি, দুটি ভালে মন্দ কথা বলতে পারেনি নিজের জন্মধাত্রী মায়ের সাথে।তাহলে ভাবুন আপনার বাবার ভেতরে কি প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই দোয়া,আপনার ঠাম্মা যেনো ওপারে ভালো থাকে।আপনাদের পরিবারের সবার জীবন যাপনও যেন খুব শীঘ্রই সাধারণ হয়ে ওঠে।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখা পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

আসলে আপু মৃত্যু এক চরম সত্য। যার জীবন আসে তারই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সবই আল্লাহর ইচ্ছে আল্লাহ যেটা করে এটাই মঙ্গল। তবে আপনার কষ্টটা বুঝতে পারলাম কি বলে সান্ত্বনা দিব ভাষা খুঁজে পারছি না। কারণ প্রিয় জন হারানোর ব্যথা যার হারাই সে বোঝে। তাই আপনার বাবার জন্য দোয়া রইল আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করে এবং আপনার ঠাকুরমা কে যেন স্বর্গবাসী করে দোয়া রইল। কারন মানুষ মারা গেলে দোয়া টাই তার কাছে পৌঁছে তাই আপনিও আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন আপনার ঠাকুরমাকে যেন পরপারে ভালো রাখে। ভালো থাকবেন আপু।আল্লাহ হাফেজ

আসলেই মৃত্যু এক চরম সত্যি, যা আমাদের সকলের জীবনে আসবেই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

আসলে এ কয়েকদিন আপনার অনুপস্থিতি থাকাটা। আমাকে কেমন জানি বারবার আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহটা বাড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হচ্ছিল। আপনার বাবা অসুস্থ তাই হয়তো বা আপনি ঠিকমতো পোস্ট কিংবা ডিসকড এ আমাদের সাথে কথা বলেন না।

আজকে আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম। আপনার ঠাকুমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে পরকালে চলে গেছে। আসলে আমরা এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি, আমাদেরকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে।

এ পৃথিবীতে যে সকল মানুষ বা জীবজন্তু এসেছে। তাদের সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
আপনাকে আমাকে ও একদিনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। যাই হোক দোয়া করি সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার ঠাকুমাকে ওনার পরওলোক জীবনে সুখে শান্তিতে রাখে।

তার সাথে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, সৃষ্টিকর্তা যেন কাকা বাবুকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন। যদিও তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ না হতেই, ওনার মায়ের চলে যাবার খবরটা ওনাকে আবার ও ভেতর থেকে একবার নাড়িয়ে দিয়েছে।

আসলে আপনার পোস্ট পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। তার পরেও এত কষ্টের মধ্যে থেকেও, আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়েছেন। সেজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।

আসলেই ঠাকুরমার মৃত্যু বাবাকে মানসিক দিক থেকে আরও বেশি দুর্বল করে দিয়েছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

ঠাম্মা স্বর্গবাসী হোক, এই কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেইসাথে শোকাহত পরিবারের,সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমিন

পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী থাকবে না। সবাইকে এভাবে চলে যেতে হবে অচিন দেশে। পরকালের সাড়া দিতে আমাদের সবাইকে।

দোয়া রইলো তার জন্য, এবং পরিবারের সকল শোকাহতদের জন্য সান্ত্বনা কাম্য রইলো। ভালো থাকবেন।